রাবি ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে নোটিশ ছাড়াই বেড়ে গেল খাবারের দাম

রাবি ক্যাফেটেরিয়া
রাবি ক্যাফেটেরিয়া  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় নতুন করে খাবারের দাম বাড়িয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খাবারের পরিমাণও কম দিচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। সোমবার (২৯ মে) নোটিশ ছাড়াই ক্যাফেটেরিয়ার প্রশাসক এ.কে.এম. আরিফুল ইসলাম খাবারের মূল্য বৃদ্ধির করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাফেটেরিয়ার প্রতিটি খাবারে তালিকায় ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। পোলট্রি মুরগী আগে ৫৫ টাকা বিক্রি হতো এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম-মাছ আগে ৩৫ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। মুরগীর লটপটি আগে ৪০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী মুরগীসহ বিরিয়ানি, পোলাও, কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাবারের দাম আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ক্যাফেটেরিয়ায়  স্বল্প মূলের খাবার অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আগত শিক্ষার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই উচ্চ মূলের খাবার ক্রয় করেই তাদের খেতে হয়। ফলে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সাথে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও।

আরো পড়ুন: কৃষি গুচ্ছের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, থাকছে সেকেন্ড টাইম

ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খাবারের দাম বাড়ানো ও খাবারের পরিমাণও কমিয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। তারা বলছেন, ৫৫ টাকা ছিলো পোল্ট্রি মুরগী, ডাল, ভাত ছিল এখন সেটাকে ৬০ টাকা করা হয়েছে। দাম বাড়িয়ে খাবার বিক্রি করছে সেইসাথে খাবারের পরিমাণও খুব কম দিচ্ছে। মুরগীর পিস আগে ৫৫ টাকা দিয়ে যা পেতাম এখন ৬০ টাকা গুনেও তার অর্ধেক পাচ্ছি না। এভাবে প্রতিটি খাবারের তালিকায় দাম বাড়ানোর পরেও পরিমাণ খুবই কম দিচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে গত বছর ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়াসহ ১৭টি হলে প্রতিবেলায় খাবারের পূর্ব মূল্য থেকে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। ফলে দুপুরের খাবার ২৪ টাকা থেকে ২৮ টাকা ও রাতের খাবার ১৮ টাকা থেকে ২২ টাকা করা হয়েছিল। দাম বাড়ানোর ফলে খাবারের মান বৃদ্ধি করা হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দাম বৃদ্ধির পরেও খাবারের কোন মান বৃদ্ধি করা হয়নি। পরিমাণটা সামান্য বেশি দিলেও আগের তুলনায় মানের কোনো বৃদ্ধি হয়নি। এ যেন শুভঙ্করের ফাঁকি।

পরে আবার দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ফের ৫ টাকা করে প্রতিটি খাবারের দাম বাড়িয়েছিলো রাবির কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায়। পরে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পরে আগের দামে নিয়ে আসতে বাধ্য হয় ক্যাফেটেরিয়া প্রশাসন।

ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে খাবারের দাম বৃদ্ধি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের 
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাপুন খান বলেন, ভর্তি উপলক্ষে দাম বৃদ্ধি কেন করা হয়েছে  আমরা বুঝতে পারছি না। যেখানে কিছুদিন আগে খাবারের সকল তালিকায় টাকা বাড়ানো হয়েছে। এভাবে খাবারের দাম বাড়ালে শিক্ষার্থীদের উপর একধরনের চাপ সৃষ্টি হবে। আমরা অনেকেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। আমাদের জন্য বর্তমান দামই অনেক কষ্টসাধ্য।

আরো পড়ুন: আইবিএ শিক্ষিকা ক্ষণিকার শাস্তি নির্ধারণে ট্রাইব্যুনাল গঠন ঢাবির

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশন-এর সভাপতি আবু বকর অন্তু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটারিয়ায় উচ্চ মূল্যের খাবারের আইটেম বাড়ানো হয়েছে, স্বল্প মূল্যের খাবার এখানে পাওয়াই দুষ্কর। খাবার পরিমাণও খুব বাজে, বিকেলে মাছ খেতে গিয়ে দেখি পঁচা, দুর্গন্ধ। যেখানে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ক্যাফেটেরিয়া প্রশাসনের মানবিক হওয়ার প্রয়োজন ছিল সেখানে ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির মধ্যে ফেলছে প্রশাসন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাফেটেরিয়ার প্রশাসক ড. এ.কে.এম. আরিফুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের খাবারের দাম বাড়াতে হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ভর্তুকি দিয়ে খাবার খাওয়াতে হয়। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসবে। তাদেরকে আমরা কেন ভর্তুকি দিয়ে খাওয়াবো। তাই আমরা খাবারের দাম বৃদ্ধি করেছি।

পরিমাণে কম বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রশাসক বলেন, আগে মুরগি কিনে ক্যাফে-টিয়ায় পিস করা হতো। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে চাপ থাকায় দোকান মালিকরা পিস করে দিচ্ছে তাই হয়তো পরিমাণে ছোট হচ্ছে। তবে এ সমস্যা থাকবে না বলে জানান তিনি। 


সর্বশেষ সংবাদ