দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে প্রাণের ক্যাম্পাসে পদচারণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসে পদচারণা
ক্যাম্পাসে পদচারণা  © টিডিসি ফটো

দীর্ঘ ৮৩ দিন পর আবারও শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদে আওতাভুক্ত ইনস্টিটিউট-বিভাগগুলোতে ক্লাস ও পরীক্ষা পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিন ক্লাসে উপস্থিতি কিছু কিছুটা কম। কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেনি বলেও জানা গেছে।

আজ রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট-বিভাগগুলোতে নতুন করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পড়াশোনার খোঁজখবর নেন। দীর্ঘদিন পরে ক্লাসে ফিরে স্বস্তিতে শিক্ষার্থীরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইনস্টিটিউট-অনুষদের পরিচালক-ডিনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো অনুষদের আওতাভুক্ত বিভাগগুলোতে সুষ্ঠুভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এখন একটু কম। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি দাওয়া ছিল সেগুলো সামর্থ্য অনুযায়ী মেনে নেওয়া হচ্ছে যার ফলে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পূর্বে যে আলোচনা ছিল শ্রেণি কার্যক্রমে তার কোনো প্রভাব নেই। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এখনও কয়েকটি বিভাগে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ আছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ (আংশিক বন্ধ), আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ওশেনোগ্রাফি বিভাগে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ আছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ৪ জন শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে ক্লাস পরীক্ষা বয়কট করেছে শিক্ষার্থীরা। শান্তি সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ২ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একাংশ বিভাগটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে আরেক অংশ শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। ওশেনোগ্রাফি বিভাগেও কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের অবনতি ঘটায় ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এমন সিদ্ধান্তে অনুষদগুলো চাপের মুখে পড়লেও বিভাগ ও প্রশাসনের সহায়তা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ডিন ও সংশ্লিষ্টরা।

আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক কাজী মতিন আহমেদ জানান, ক্লাস শুরু হয়েছে তবে বেশিরভাগ বিভাগেরই পরীক্ষা চলছে। ৩০ তারিখ থেকে ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আমরা সচেষ্ট। ওশেনোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা চলছে। প্রথমে বিভাগীয় পর্যায়, পরবর্তীতে অনুষদ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো সামর্থ্য অনুযায়ী মেনে নেওয়া হবে।

ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ

কলা অনুষদে কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীরা আগে ক্লাস বয়কটের চিন্তা করলেও পরবর্তীতে বিভাগ ও অনুষদ মিলে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেছে এবং ইসলাম শিক্ষা ও উর্দু বিভাগে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করায় শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। 

এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি সকাল থেকে অনুষদের কয়েকটি বিভাগ পরিদর্শন করেছি। উপাচার্যও এসেছিলেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসন্তোষ ছিল সেটি আলোচনা ও কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা মিটিয়ে নিয়েছি এখন আর কোনো সমস্যা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একটু কম তবে আশা করি সময় সাপেক্ষে সেটিও ঠিক হয়ে যাবে।

এছাড়াও প্রতিটি অনুষদে বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া থাকলেও আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এদিকে দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, আগের মতই আনন্দের সাথে ক্যাম্পাসে আসছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও দেখা যায়। এদিন প্রায় সাড়ে তিনমাস পর ক্লাসরুমগুলোতে প্রাণ সঞ্চার হয়। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্লাসে ফেরার  জন্য একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে বসেছিলেন অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্যও বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। 

ক্লাসে ফেরার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আন্দোলনের সময় থেকে আন্দোলন পরবর্তী সময়টা অনেক মানসিক চাপে কাটাতে হয়েছে। আমি ৬ আগস্টই হলে চলে এসেছি। এতদিন অপেক্ষা করছিলাম ক্লাস খোলার। ক্লাসে ফেরার পর অনেক স্বস্তি লাগছে। ক্যাম্পাসটা আবার প্রাণ ফেরত পেয়েছে।

আরেক শিক্ষার্থী নাহিদা সুলতানা বলেন, আমি মিরপুরে থাকি। মাঝেমধ্যেই ক্যাম্পাসে চলে আসতাম। তবে কেমন যেন শূন্যতা অনুভব হতো। ঘরে বসে থাকতেও আর ভালো লাগছিল না। ক্লাসে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে বসেছিলাম। অবশেষে প্রাণের ক্যাম্পাসে সবাইকে পেয়ে ভালো লাগছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বিভিন্ন বিভাগে ক্লাসরুম পরিদর্শনের সময় বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর আমরা ক্লাসে ফিরতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গিয়েছে। যেসব সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গিয়েছে সেগুলো আমরা খুব দ্রুতই সমাধান করার চেষ্টা করবো। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেটি আমরা খুব দ্রুত পূরণের চেষ্টা করব। আমরা এখনও কিছু বিভাগের ক্লাস শুরু করতে পারিনি। আমাদের ছাত্র শিক্ষকের সাহায্য প্রয়োজন।  শিক্ষার্থীরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা এসব প্রতিবন্ধকতা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারব।  এছাড়াও, তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায়  বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এর আগে গত ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আজহার ছুটি দেয়। তবে পহেলা জুলাই থেকে ক্লাস খোলার কথা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন সংক্রান্ত আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে আর চালু হয়নি শ্রেণি কার্যক্রম। সেসময় কোটা সংস্কারের দাবিতে ৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৪ আগস্ট তাদের পেনশন সংক্রান্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও ঘটনাক্রমে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন। ২৭ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। নিয়োগের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হল, বিভাগ, অফিস প্রধান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করেন। পরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ (স্নাতক প্রথম বর্ষ) বাদে সব বর্ষের ক্লাস আজ শুরু হয়। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। গত ১০ বছরে কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস এত দিন বন্ধ ছিল না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ক্লাস শুরু
ক্লাস শুরুর প্রাক্কালে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন চত্বরে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা কর্মসূচি পালন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এসময় শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা ওড়ানো হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও কার্যকরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এক ধরনের মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। এই ট্রমা নিরসন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এরপর, সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বিভিন্ন অনুষদের ক্লাসরুম পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ, হৃদ্যতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence