দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চবির তিন হলে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাত ১১টায় ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গেল দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনটি হলের নেতা–কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

এর আগে, গত ৬ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী হলের সঙ্গে শাহজালাল হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। নিজেদের মধ্যে একের পর এক সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৪ সেপ্টেম্বর চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু এর পরও ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠনগুলো এক হল অন্য হলের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।

সর্বশেষ গেল বৃহস্পতিবার রাতে শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) নামে পরিচিত। অপর পক্ষটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেনর সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ পক্ষের নাম সিক্সটি নাইন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নীলফামারী জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘নীলফামারী জেলা ছাত্র বান্ধব’–এর নেতৃত্ব নিয়ে প্রায় এক বছর আগে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সিএফসির অনুসারী রাশেদ কোরানীর সঙ্গে সিক্সটি নাইনের অনুসারী সংস্কৃত বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী কাজল রায়ের কথা–কাটাকাটি হয়।

রাশেদ কোরানী সম্প্রতি স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে তার ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় রাশেদের সঙ্গে কাজলের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।

আরও পড়ুন: লাগামহীন চবি ছাত্রলীগে এক মাসে ৯ বার সংঘর্ষ

ঘটনা জানাজানি হলে সিক্সটি নাইনের নেতা–কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে লাঠি ও রামদা হাতে অবস্থান নেন। আর সিএফসির নেতা–কর্মীরা অবস্থান নেন শাহ আমানত হলের সামনে। এ দুটি হল পাশাপাশি। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের নেতা–কর্মীরা একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে সিক্সটি নাইন উপপক্ষের তিনজন আর সিএফসি উপপক্ষের তিনজন আহত হন।

জানতে চাইলে সিএফসির অনুসারী রাশেদ আল কোরানী বলেন, এক বছর আগে কাজল আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেছিল। এ কারণে আমি রেগে গিয়ে কাজলকে থাপ্পড় দিয়েছিলাম। পরে এ ঘটনার সমাধান হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতিবার রাতে কাজল আমার ওপর হঠাৎ করে হামলা করেছে। দলবল নিয়ে মারধর করেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন সিক্সটি নাইনের কর্মী কাজল রয়। তিনি বলেন, রাশেদ আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় অসদাচরণ করে। বৃহস্পতিবারও করেছে। এ কারণে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের (শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের ছাত্রদের) মধ্যে সংঘটিত এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামীকাল রবিবারের (২২ অক্টোবর) মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়।

অবশ্য এর আগে গত ৬ অক্টোবর ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দুটি সংগঠন বিজয় ও সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

এদিকে, শাখা ছাত্রলীগের সংঘর্ষের দায় নিতে নারাজ সংগঠনটির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় ছাত্রলীগ এককভাবে দায়ী নয়। বগিভিত্তিক সংগঠনগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে আখের গোছানোর জন্য কেউ কেউ ব্যবহার করছে। আমরা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এখন কমিটি না থাকায় তাদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ