চাঁদা না পেয়ে হোটেলে ফাও খেলেন ঢাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ মে ২০২৩, ১০:৪২ PM , আপডেট: ১১ মে ২০২৩, ১২:০৯ AM
দাবিকৃত ১০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে ফ্রি খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ও হল শাখার তিনজন নেতার বিরুদ্ধে। গত রবিবার (০৭ মে) দোকান মালিক এনায়েত রেজা এমন অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের সাথে জড়িত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গত ৬ মে (শনিবার) রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত ‘কবির হোটেল’ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। চাঁদা না পেয়ে দুই দফায় ১৪ হাজার টাকার খাবার খেয়ে আসেন তারা। পরে এদের মূল হোতা তিনজনকে চিহ্নিত করেছেন ভুক্তভোগী এই দোকান মালিক ও ম্যানেজার ইলিয়াস হোসেন।
চাঁদা দাবি করা ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক উপসম্পাদক সাকিবুল সুজন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপসম্পাদক সিফাত আহমেদ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাহবাগ থানা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন দোকান মালিক পক্ষ।
এদিকে অভিযুক্ত সাকিবুল সুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সিফাত আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের উভয়ই ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। অন্যদিকে আরিফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের একান্ত ঘনিষ্ঠজন।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, গত ৫ মে সন্ধ্যায় কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক তাদের হোটেলে আসে। তারা ম্যানেজার ইলিয়াস হোসেনকে বলে, এখানে হোটেল ব্যবসা করতে হলে আমাদের প্রতি মাসে ১০ হাজার করে টাকা চাঁদা দিতে হবে। এসময় ম্যানেজার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা হুমকি ধমকি দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় টাকার ব্যবস্থা করে যোগাযোগের জন্য শাকিবুল সুজন নামের একজনের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যায়।
ঘটনার পরের দিন ৬ মে বিকেলে আবারও প্রায় ১০জন যুবক এসে হোটেলে ১০ হাজার টাকার খাবার খায় এবং সবাইকে হুমকি ধমকি দিতে থাকে। খাবারের বিল না দিয়ে চলে যাওয়ার সময় হুমকি দেয়, যতদিন সুজন ভাইকে মাসে দশ হাজার টাকা করে না দেওয়া হবে ততদিন এভাবেই খেয়ে যাবে। এতে স্পষ্ট হয় যে, আগের দিন যারা চাঁদা চেয়েছিল তারাই এদের পাঠিয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল ৮ মে (সোমবার) বিকেল আনুমানিক পাঁচটার দিকে ২৫ জন যুবক একযোগে হই-হুল্লোড় করতে করতে হোটেলে ঢুকে খাবার খেতে থাকে এবং বলতে থাকে আজ দশ হাজার টাকা না দিলে হোটেল পরিচালক কবিরকে তুলে নিয়ে যাব। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খাবার খাওয়ার সময়ই দোকানের প্লেট গ্লাস ভাঙচুর করে। তাণ্ডবলীলার প্রতিবাদ করায় হোটেল বয়দেরও মারধর করা হয়।
হোটেল পরিচালক কবির হোসেন বলেন, আমি পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ৯৯৯ এ ফোন করি। সংক্ষিপ্ত সময়ে একজন এসআই এর নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত হয়। ২৫ জনের ওই দলটি পুলিশের সামনেই গালাগালি ও ভাঙচুর করতে থাকে। ওয়েটারকে চড়-থাপ্পড় মারে। আল-আমিন নামের একজন সাংবাদিক মারধর ও ভাঙচুরের ভিডিও করলে তাকেও মারধর করা হয়। তার মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করে দেয়। যাওয়ার সময় আরিফুল ইসলাম নামের একজন বলে যায় মাসে ১০ হাজার টাকা না দিলে পরিস্থিতি মাঝে মধ্যেই এমন হবে। হলে তুলে নিয়ে জানে মেরে ফেলবে।
এ নিয়ে বার্তা ৭১ এর ক্যাম্পাস সাংবাদিক আল-আমিন খাঁন বলেন, প্রথমে ৪-৫ টা মটর সাইকেল নিয়ে এসে তাঁরা আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেয়। হোটেলে ঢুকে কল দিয়ে হল থেকে বন্ধু, ছোট ভাইদের ডেকে এনে খাওয়াতে শুরু করে। এভাবে প্রায় ৫০জনের মতো হয়। তখন আমাদের কিছুই করার ছিলোনা। তবে আমি গোপনে তাদের কয়েকটা ছবি তুলতে গেলে তাদের একজন দেখে ফেলে। তাঁদের কয়েকজন বেশি উত্তেজিত ছিলো। তাঁরাই আমার কানে জোরে চড় মারে। এখন আমি কানে কিছুই শুনতে পারছি না। হয়তো কানের পর্দা ফেটে গেছে। সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করে সিফাত আহমেদ বলেন, আমি আর আমার বন্ধু সাকিবুল সুজন দোকানে খাওয়া দাওয়া করি। তবে চাঁদা দাবি করা এবং বিল পরিশোধ না করার যে অভিযোগ তারা দিচ্ছে তা পুরোপুরি মিথ্যা। এমনকি আমি খাওয়ার শেষে একটা সিঙ্গারা খাই যার বিলটাও আমি পরিশোধ করে আসি। এটা আমাদের এবং ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার একটা অপচেষ্টা।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়া সাকিবুল সুজন। তিনি বলেন, আমার ঐ হোটেলে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খাবার খাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের বাহিরে শুধু পুরান ঢাকায় যাই। আর ঘটনার দিন রাতে আমরা বন্ধুরা মিলে পুরান ঢাকায় খেতে যাই।
এদিকে অভিযুক্ত আরিফুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমার কানে এসেছে। তাছাড়া মারধরের শিকার সাংবাদিকের সাথেও আমার কথা হয়েছে। তবে আপডেট হলো এই বিষয়ে প্রশাসন এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলেই তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।