গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বন্ধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা চায় ইউজিসি
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩৪ PM , আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৯ PM
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, উচ্চতর গবেষণা, উদ্ভাবন, নতুন জ্ঞান সৃজন ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দেশের উচ্চশিক্ষার এ তদারক সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব প্রস্তাবনা জানিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে—দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় র্যাংকিং, গবেষণা বৃদ্ধি, উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ইন্ড্রাস্ট্রি অ্যাকাডেমিয়ার কোলাবরেশন, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, গবেষণায় নকল বা চুরি বন্ধ এবং কমিশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ মোট ১৪টি সুপারিশ রয়েছে।
কমিশনের সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণায় প্লেজিয়ারিজম বা চৌর্যবৃত্তির ঘটনা রোধকল্পে জাতীয় পর্যায়ে প্লেজিয়ারিজম বিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি, সর্বোপরি, চৌর্যবৃত্তি বন্ধ করার জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করে তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উদ্যোগ, স্নাতকদের চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে। সেক্ষেত্রে স্নাতকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিন থেকে ছয়মাসের বাধ্যতামূলক ও কার্যকরী ইন্টার্নশিপ চালুর কথা জানানো হয়েছে।
এবারের প্রস্তাবনায় নতুন বেশ কিছু সুপারিশ জানানো হয়েছে। দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, গবেষণা বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টিতে কমিশনের সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে—অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, সদস্য, ইউজিসি।
দেশের শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মানসম্মত প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে ইউজিসি বলছে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বা ইনডেক্সড জার্নালে (হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল/কিউ-১/কিউ- ২/স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে) প্রকাশিত হওয়া জরুরি। মানসম্মত প্রকাশনায় শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানসহ তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারে।
আরও পড়ুন: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে ‘পুল’ চায় ইউজিসি
দেশের অভ্যন্তরে পিএইচডি গবেষণার গুণগতমান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশীয় গবেষণাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার, দেশের মেধাবীরা যাতে গবেষণায় এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে পিএইচডি বৃত্তির আর্থিক পরিমাণ বৃদ্ধিসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনুকূলে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার সুপারিশ ইউজিসির। শুধু বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত এবং ব্যবসায় অধ্যয়নই যথেষ্ট নয় বরং মানবিক বিষয়সমূহ অধ্যয়ন আবশ্যক বলেও মনে করে কমিশন।
সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, শিল্প ও মানবিক জ্ঞানকাণ্ডের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো মানুষের সৃজনশীলতা, কল্পনা এবং আবিষ্কারের স্পৃহাকে অনুপ্রাণিত করে জানিয়ে কমিশন বলছে, সেজন্য দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার জন্য সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান ও গবেষণার অবারিত সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় পাঠ্যবই রচনা ও গবেষণাকর্ম অনুবাদের নিমিত্ত স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় পর্যায়ে এ র্যাঙ্কিং প্রবর্তনে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং ব্যবস্থার কাঠামো এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিত বিবেচনার পাশাপাশি কমিশনের সুপারিশ জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে শিক্ষা, গবেষণা, পেটেন্ট, সাইটেশন, রেপুটেশন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে উক্ত র্যাঙ্কিং পদ্ধতি প্রবর্তিত হতে পারে। এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে।
আরও পড়ুন: সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জাতীয় র্যাঙ্কিংয়ের সুপারিশ ইউজিসির
একই সাথে চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশের জন্য নীতি ও কৌশল প্রণয়ন, ইন্ডাস্ট্রি-বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ গবেষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন, স্টার্ট-আপ ও পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের বিধান রেখে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন এবং ইন্ডাস্ট্রির কাজে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাবও রয়েছে কমিশনের প্রস্তাবনায়।
এছাড়াও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক যোগান বাড়াতে কমিশন কর্তৃক প্রণীত এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন: ২০১৮-২০৩০ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, গুণগত এবং মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র্যাঙ্কিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশও জানানো হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।
দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, গবেষণা বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টিতে কমিশনের সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এবারের প্রস্তাবনায় নতুন বেশ কিছু সুপারিশ জানানো হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে উচ্চশিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করা সম্ভব হবে।