অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা ঠেকানোর সহজ কয়েকটি টিপস
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২১, ১০:৩১ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২১, ১০:৪৪ PM
বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি দেশটির বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক অন্তত: ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রাহকদের কার্ডে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দিলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির সময় যখন নিত্যনতুন অনলাইন ভিত্তিক বেচা-কেনার প্রতিষ্ঠান জন্ম নিচ্ছে, তখন ক্রেতারা অনেক সময়ই বুঝতে পারেন না, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনটি বিশ্বাসযোগ্য কিংবা কোনটিতে প্রতারণার আশংকা আছে।
তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি বেঁচে যেতে পারেন প্রতারণার হাত থেকে। অনলাইন মার্কেটিং এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সেরকমই কয়েকটি উপায়ের কথা জানিয়েছেন বিবিসিকে।
আসল ওয়েবসাইট চেনা
প্রতারক চক্র অনেক সময়ই বিখ্যাত কিংবা প্রতিষ্ঠিত কোন অনলাইনের ওয়েবসাইটের হুবহু প্রতিরূপ তৈরি করে। কখনো বানানে সামান্য পরিবর্তন এনে, কখনো ডিজাইনে।
সুতরাং আপনার কাঙ্খিত ওয়েবসাইটে ঢোকার আগে বানান এবং ডিজাইনের দিকে খেয়াল করুন। দেখুন আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে ঢুকছেন কি-না। প্রতিষ্ঠিত কোন কোম্পানি বা ব্র্যান্ড হুটহাট তাদের নামের বানান বা লোগোর ডিজাইন পরিবর্তন করে না। এছাড়া ওয়েব এড্রেসে http এর সঙ্গে s না থাকলে অর্থাৎ https না থাকলে সেই ওয়েবসাইট থেকে দূরে থাকুন।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আফিফা আব্বাস বলছেন, সত্যিকারের ওয়েবসাইটে ঢুকছেন কি-না, সেটা দুইভাবে বোঝা যায়।
তিন বলেন, প্রথমত: একটি অরিজিনাল ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেসের শুরুতে অবশ্যই https থাকবে এবং ওয়েবসাইটটির একটি পূর্ণ ডোমেইন নেইম থাকবে, অর্থাৎ ডাব্লিউ ডাব্লিউ ডাব্লিউ ডট (WWW.), এর পরে কোন একটি নাম এবং শেষে ডটকম (.COM) থাকবে। দ্বিতীয়ত: ওয়েবসাইটটি কোন র্যানডম নাম্বার দিয়ে শুরু হবে না।
রিভিউ এবং ঠিকানা
আপনি অনলাইনে যেখান থেকেই পণ্য কিনুন না কেন, কেনার আগে রিভিউ দেখে নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় ফেইক রিভিউও থাকে। অনলাইন মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সায়ন্তনী তিষা এক্ষেত্রে দুটি জিনিস খেয়াল করার কথা বলছেন।
তিনি বলেন, প্রথমত: রিভিউয়ের বেশিরভাগই নতুন কি-না এবং দ্বিতীয়ত: রিভিউগুলো ভুয়া একাউন্ট থেকে কি-না, সেটা খেয়াল করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে, অনেক বেশি সংখ্যক রিভিউ পড়ে প্রতিষ্ঠানটির সেবা সম্পর্কে ধারণা পেতে। এছাড়া ওয়েবসাইটের বাস্তব কোন ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার আছে কি-না, সেটি দেখে নিন।
অতিরিক্ত ছাড়, চটকদার বিজ্ঞাপন
বিশ্বব্যাপি প্রতারণার একটি বড় হাতিয়ার, চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করা। এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মূল্য ছাড় বা ক্যাশব্যাক অফার কিংবা অস্বাভাবিক কম দামে পণ্য বিক্রি'র চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।
‘এই সুযোগ খুবই স্বল্প সময়ের জন্য’ এমন ঘোষণা দিয়ে গ্রাহকদের দ্রুত অর্ডার করতে প্রলুব্ধ করা হয়। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে হুটহাট অর্ডার করার আগে অবশ্যই আপনার সতর্ক হওয়া উচিত।
পেইজের বয়স
ফেসবুকে অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণার ঘটনাগুলোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেই পেইজগুলো নতুন করে তৈরি করা। সুতরাং আনকোরা কোন পেইজ থেকে অর্ডার করার আগে সেটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। দেখুন, পেইজটিতে প্রোডাক্ট নিয়ে ফেসবুক লাইভ হচ্ছে কি-না।
পেইজটিতে যেসব পোস্ট বুস্ট করা হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় অন্য পোস্টগুলোতে লাইক-কমেন্ট অস্বাভাবিক কম থাকলে সতর্ক হোন। এছাড়া ঠিকানা এবং রিভিউ অপশন আছে কি-না দেখে নিন। পোস্টের কমেন্টগুলো পড়ুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
পণ্য যাচাই-বাছাই
সব দেখেশুনে যদি অর্ডার করতেই চান, তাহলে যে পণ্যটি পছন্দ করেছেন, সেটির বিবরণ বিস্তারিত আছে কি-না দেখে নিন। পণ্যের মাপ, ওজন ইত্যাদি তথ্য জানুন। প্রয়োজনে চ্যাটিংয়ে গিয়ে আরো প্রশ্ন করুন।
সন্দেহ হলে বিজ্ঞাপনের ছবি ছাড়াও পন্যটির রিয়েল ছবি চাইতে পারেন। সবশেষে প্রতিষ্ঠানটির রিটার্ন এবং রিফান্ড পলিসি আছে কি-না, থাকলে সেটা কেমন এবং গ্রাহকবান্ধব কি-না, সেটা যাচাই করুন।
অগ্রিম পেমেন্ট
অনলাইন কেনা-কাটায় প্রতারণার একটি বড় হাতিয়ার, গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নেয়া। সুতরাং প্রতিষ্ঠিত অনলাইন না হলে কিংবা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না গেলে অগ্রিম পেমেন্ট না করাই ভালো।
সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি যদি সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি অর্ডারটি ক্যাশ অন ডেলিভারিতে করেন এবং পণ্য হাতে পেয়ে দেখে-শুনে তারপর অর্থ পরিশোধ করেন।
এছাড়া অনলাইনে বা ফেসবুকে লোভনীয় অফারের কোন পপআপ, ইমেইলে পাওয়া কোন ফিশিং লিংকে ক্লিক করা কিংবা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইনে কেনা কাটা না করাই ভালো। সবমিলিয়ে কেনার আগে আপনি যতো যাচাই-বাছাই করবেন, যতো বেশি সন্দেহ প্রবণ এবং সতর্ক থাকবেন, ততই কমে যাবে আপনার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]