রাতে ঘুম না এলে নিজের মনকে চাপমুক্ত করতে যা করবেন

ঘুম আমাদের সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুম আমাদের সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  © সংগৃহীত

ঘুম আমাদের সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি ঘুমও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেরই রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুম হয় না। সারা রাত শুধু পাশ বদলাতেই কাটাতে হয়। বহু লোকেরই এ সমস্যা হয়েছে কোনো না কোনো সময়। সুতরাং প্রশ্ন হলো, কীভাবে নিজের মনকে চাপমুক্ত করে চমৎকার ঘুমের জন্য নিজেকে তৈরি করা যায়।

ঘুমানোর আগে কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হতে পারে। সে সম্পর্কে জেনে নিন–

১. প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি কি সত্যি সত্যিই ক্লান্ত? অনিদ্রার সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের অনেক সময়ই প্যাঁচার সাথে তুলনা করা হয়। অনিদ্রার সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের অনেক সময়ই প্যাঁচার সাথে তুলনা করা হয়।

আপনি ভাবতে পারেন এ আবার কেমন প্রশ্ন? আমি যে ক্লান্ত সেটা কি আমি নিজে বুঝবো না? আসলে কথাটা হলো, আপনি যদি সত্যি বিছানায় যাবার জন্য তৈরি হন - তাহলে সহজেই ঘুম এসে যায়। তবে একজনের কাছে যা 'স্বাভাবিক' ঘুমানোর সময় - অন্য কেউ কেউ সে সময়টায় ঘুমাতে পারেন না।

যদি আপনার এ সমস্যা থাকে - তাহলে দিনের বেলা যত বেশি সম্ভব সময় প্রাকৃতিক আলোর মধ্যে কাটাতে চেষ্টা করুন, এবং সেটা শুরু করুন ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে এর ফলে রাত-জাগা লোকদের 'দেহ-ঘড়ি'কে আগেভাগে ঘুমানোর জন্য তৈরি করা যায়।

দিনের বেলা যথেষ্ট ব্যায়াম ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিছানায় যাবার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করলেই ভালো। কারণ এর ফলে শরীরে যে এ্যাড্রিনালিন নি:সৃত হয় - তা হয়তো আপনাকে ঘুমোতে দেবে না।

আপনি যদি ছোট্ট শিশু না হন এবং আপনার কম ঘুম হয় - এমন সমস্যা থাকে, তাহলে দিনের বেলা - বিশেষ করে বিকেল ৪টার পর - না ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার রাতে ঘুম হবার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।

রং চা নাকি কফি? শীতের সকালে কোনটি উপকারী?

২. রাতে ঠিকমতো ঘুম না আসার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে— ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা, কফি বা নিকোটিনজাতীয় কিছু সেবন করা।  সারা দিন কাজের শেষে যদি মনে করেন যে, এগুলো পান করে কিছুটা রিল্যাক্স হবেন, তা হলে আপনি ভুল ভাবছেন। বরং সেটিই হতে পারে আপনার রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়ার কারণ। 

৩. রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চাইলে তুলনামূলক ঠান্ডা স্থান নির্বাচন করুন। ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস প্রবেশ না করলে সেখানে ঘুমের সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। ঘুমানোর সময় ঘর গরম থাকলে এবং বিশেষ করে বালিশ ও বিছানা গরম থাকলে সেটি ঘুমের জন্য উপযুক্ত স্থান নয়। তাই ঘুমানোর জন্য ঠান্ডা ঘর এবং শোবার জায়গা ঠান্ডা নির্বাচন করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৪. রাতে ঘুমের সমস্যা হলে ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। অনেকে মনে করেন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে সেটি শরীরকে ঠান্ডা করে এবং ঘুম আসতে সাহায্য করে।  কিন্তু এটি ভুল ধারণা। ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে তা শরীরকে ঠান্ডা করে কিন্তু সেটি অল্প সময়ের জন্য। আর হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে সেটি শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা করতে পারে।

আরও পড়ুন: ভালোবাসার বিয়েতেও সংসারে অশান্তি? মাথায় রাখুন এ বিষয়গুলো

৫.বিছানায় যাবার আগে এমন একটা কিছু করুন যা আপনার দেহ ও মনকে চাপমুক্ত করবে। এটা আপনাকে প্রতিদিনই করতে হবে, যাতে এটা করলেই আপনার শরীর এবং মন্তিষ্ক বুঝে যায় যে ঘুমাোর সময় হয়েছে। এটা যে কোন কিছু হতে পারে। যেমন হালকা গরম পানিতে স্নান, মেডিটেশন বা ধ্যান করা, আপনার জীবনসঙ্গীর সাথে কথা বলা, ডায়েরি লেখা, বই পড়া, বা আলো কমিয়ে দিয়ে গান শোনা।

অস্বাস্থ্যকর ঘুমের লক্ষণ

কেমন সঙ্গীত ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত? ২০১৫ সালে ম্যাক্স রিখটার নামে একজন কম্পোজার নানা গবেষণার পর ৮ ঘণ্টার সঙ্গীত রচনা করেছেন শুধু ঘুমের জন্য। আপনি ঘুমানোর জন্য যে সঙ্গীদই শুনুন না কেন -আসল শর্ত হলো সেটা শুনে আপনার যেন মনের সব চাপ দূর হয়ে গিয়ে একটা শিথিল ভাব আসে

৬ . প্রতিদিন অনন্ত ৩০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে দিন ও রাতের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করবে। আপনার মস্তিষ্ক দিন আর রাতের পার্থক্য ঠিকমতো বুঝলে রাতে নিজে থেকেই ঘুম আসে।

সবার আগে জেনে রাখা খুব দরকার যে ঘুম না আসার পেছনে মানুষের কিছু বদ অভ্যাস আছে। অনেক সময় মানুষ ঘুমের অজুহাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুমানোর পরিবর্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন ব্যবহার করেন। ঘুমের সময় ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবহার করা ঘুমের ব্যাঘাতের প্রধান কারণ হতে পারে। 


সর্বশেষ সংবাদ