বিসিএস প্রিলিমিনারির শেষ সময়ের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত

মোঃ ফজলে রাব্বী
মোঃ ফজলে রাব্বী  © টিডিসি ফটো

আগামী ১৯ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্য অনুযায়ী, ৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন মোট ৩ লাখ ১৮ হাজার প্রার্থী। আবেদনকারীর এ সংখ্যাই প্রমাণ করে বর্তমান চাকরিপ্রত্যাশীদের বড় অংশের স্বপ্নই বিসিএস। তাই অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার তুলনায় বিসিএস অধিক প্রতিযোগিতামূলক। আর এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার একমাত্র উপায় ভালো প্রস্তুতি। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতির বিষয়ে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (৪০তম বিসিএস) মোঃ ফজলে রাব্বী-


১. গুরুত্ব দিন মডেল টেস্টে
কথায় আছে শেষ ভালো যার সব ভালো তার। সারা বছর ভালো পড়ালেখা করেও যদি শেষটা ভালো না হয় তাহলে লেখাপড়া অর্থবহ হয় না। তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ৪৫ তম প্রিলি যেহেতু খুব তাড়াতাড়িই হবে তাই শেষ মুহূর্তে প্রচুর পরীক্ষা/ মডেল টেস্ট দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাজারের যেকোনো মডেল টেস্ট বই থেকে নিজে মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারবেন। এতে পরীক্ষার হলে সময়ের শৃঙ্খলাও আয়ত্ত  হবে। অথবা চাকরির বাজারের যেকোনো কোচিংয়ে গিয়েও সরাসরি মডেল টেস্ট দিতে পারেন। এর ফলে আপনি আপনার প্রস্তুতি কে মূল্যায়ন করতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন কোন সাবজেক্টে আপনাকে বেশি সময় দিতে হবে।

২. দূর্বলতা বুঝে সময় ব্যবস্থাপনা করুন
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে সব সাবজেক্টই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে প্রশ্ন করে -‘অমুক সাবজেক্টে সম্পূর্ণ মার্ক নিশ্চিত করতে পারলে তমুক সাবজেক্ট বাদ দেয়া যাবে না?’ এটার উত্তর হচ্ছে-‘না’। সকল সাবজেক্টেই আপনার প্রস্তুতি থাকতে হবে। তারপরেও নিজের দক্ষতা অনুযায়ী গুরুত্বের ক্রম ঠিক করে নিতে পারেন। যেগুলোতে আপনি দুর্বল সেখানে একটু বেশি সময় দিবেন। আমার যেমন ম্যাথ, সাইন্স এগুলোতে দুর্বলতা কম ছিলো বলে আমি বাংলা সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য, সাধারণ জ্ঞান এগুলোকে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তাম।

৩. সাম্প্রতিক বিষয়াবলীতে যা গুরুত্বপূর্ণ
সাম্প্রতিক বিষয়াবলী থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে  বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১০ থেকে ১৫ মার্ক থাকবে। তাই সাম্প্রতিক বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের জন্য সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সর্বশেষ বাজেট, সর্বশেষ আদমশুমারি ও উন্নয়ন প্রকল্প গুলো থেকে প্রশ্ন আসবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। আর আন্তর্জাতিক এর জন্য সমসাময়িক সকল ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরীক্ষার পূর্ববর্তী ৬-৭ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ার বিষয়ে আমি উৎসাহিত করি এবং একটু ডিটেইলস জানতে পারলে ভালো হয়।

উদাহরণস্বরূপ ৩৮ তম বিশেষ প্রিলিমিনারিতে একটি প্রশ্ন ছিল -"গুয়াম দ্বীপের গভর্নর কে?" লজিক্যাল মাইন্ডের চিন্তা করেন কোন দ্বীপের গভর্নরের নাম কোন সাম্প্রতিক  প্রশ্ন না কিন্তু ২০১৭ সালের অগাস্টে গোয়াম দ্বীপ নিয়ে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রেষারেষির সম্পর্ক তৈরি হয়। কারণ এই দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ঘাঁটি ও এশিয়ার মধ্যে একমাত্র ভূমি যেখানে বিমানবন্দর আছে। তাই কোরিয়া এবং তাইওয়ানের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুয়াম দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেহেতু গুয়াম দ্বীপ তখনকার সময়ে আলোচ্য বিষয় ছিল তাই যারা একটু ডিটেইলস পড়ালেখা করেছেন তারা কোশ্চেনটি আন্সার করতে পেরেছিলেন৷  

আমি আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি বর্তমান সময়ে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশটি স্বাধীনতাকামী একথা আমরা সবাই জানি কিন্তু এর পাশাপাশি স্বাধীনতাকামী সংগঠনের নাম,স্বাধীনতাকামী নেতা/নেতাদের নাম, প্রদেশটির অবস্থান এবং এটার পক্ষে-বিপক্ষে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশ বা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান জেনে রাখলে নিজেকে রিক্স ফ্রি রাখা যায়।

৪. চাপমুক্ত থাকুন
সত্যি কথা বলতে বিসিএস ক্যাডার হলে আপনি একটা চাকরি পাবেন আর দশটা চাকরির মতো এটাও একটা চাকরি। তাই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে খুব বেশি ক্রেজ দেখানোর পক্ষপাতী আমি না। পড়াশোনা নিয়ে হতাশ হয়ে সুইসাইডাল অ্যাটেম্পটের মতো ঘটনা ঘটতে দেখেছি। তাই বিসিএস পরীক্ষায়  ভালো করার উপায় হচ্ছে এটাকে আর দশটা চাকরির মত একটা চাকরি মনে করা। এবার নাহলে পরের বার হবে, তা নাহলে তারপর হবে(তাই বলে নিজের প্রচেষ্টা  কমানো যাবে না)। যে যে ধর্ম পালন করেন সে ধর্মের প্রার্থনা করবেন, আশেপাশের মানুষের সাথে নমনীয় থাকবেন-তাহলে একটা মানসিক প্রশান্তি থাকবে। শেষ মুহূর্তে একদমই নতুন কিছু পড়তে যাবেন না। আগে যা পড়েছেন সেগুলো রিভাইস দিবেন।

৫.পরীক্ষার হলে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে হলের স্ট্রাটেজি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন পেয়েই আগে পুরো প্রশ্নটা চেক করে নেবেন। দুইটা বিচ্ছিন্ন কাগজে মোট ২০০টি প্রশ্ন থাকে তাই ১ থেকে ২০০ পর্যন্ত প্রশ্ন আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। কারণ মাঝপথে গিয়ে যদি দেখেন একটি পেজ প্রিন্ট হয়নি তাহলে কিন্তু আপনাকে নতুন প্রশ্ন দেওয়া সম্ভব হবে না। আপনার প্রশ্নের সেট কোড ঠিকমতো পূরণ করবেন। বেঞ্চ নড়লে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনভিজিলেটরকে কে জানাবেন। ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন হলে পরীক্ষার আগেই যাবেন, কারণ পরীক্ষার চলাকালীন বের হতে পারবেন না। এছাড়াও যে কোন সমস্যা হলে ইনভিজিলেটর বা দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অবগত করুন। প্রত্যেকটা হলে ঘড়ি থাকবে তাই সময়ের সাথে আপনার গতি সামঞ্জস্যপূর্ণ  রাখবেন।

আর নিজের বুদ্ধিতে ফকির হওয়াও ভালো। আমার এক বন্ধু তার পাশের এক ভদ্রলোকের এক নাগাড়ে উত্তর করা দেখে  তার কাছে শুনে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর করে।  পরবর্তীতে দেখা যায় ওই ভদ্রলোক ২০০ টি প্রশ্নের ২০০টি উত্তর করেছেন। পরীক্ষার পরে যখন তার কাছে জিজ্ঞেস করা  হয় ‘ভাই কি  সব পারেন?’  তখন উত্তর দিয়েছিল-‘৭০০ টাকা দিয়ে ২০০ টি প্রশ্ন কিনেছি একটা না দাগালে সাড়ে তিন টাকা লস।’ তাই এসব বিষয়েও কেয়ারফুল থাকবেন। সবশেষে আপনাদের সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ