টেকনিক্যাল স্কুল প্রকল্পের ভবন না হতেই আসবাব-যন্ত্রপাতি ক্রয়

দেশের ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে
দেশের ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে  © সরকারি ওয়েবসাইট

দেশের ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের কাজ এখনো ৫০ শতাংশও শেষ হয়নি। তারপরও পুরোদমে চলছে আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রক্রিয়া। ছয় বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পাঁচ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করেছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এসব সামগ্রী কিনতে কাজ শেষ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০২৫ সালের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা। মেয়াদের আর মাত্র এক বছর সময় রয়েছে। অথচ ১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ এখনো ৫৫ শতাংশ বাকি।

সরকারের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ৩২টি প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গত মে মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইএমইডি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ হলেও পণ্য কেনাকাটা চলছে পুরোদমে। ৪৪টি প্যাকেজের মধ্যে ১৩টির কেনাকাটা সম্পন্ন হয়েছে। কেনাকাটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বাকি ৩১টি প্যাকেজের। অথচ এ প্রকল্পের অধীন ঝালকাঠি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অগ্রগতি মাত্র ছয় শতাংশ।

এ ছাড়া নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন একটিসহ ৭৫ শতাংশের ওপরে অগ্রগতি ১৮টির। আর ৫০ শতাংশের ওপরে ১২টি, ২৫ শতাংশের ওপরে ১৫টি এবং ১৭টি প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে।

অভিযোগ উঠেছে, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ভবন নির্মাণে আগ্রহ কমেছে ঠিকাদারদের। তারা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের চেষ্টা করছে। তবে যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয়েছে প্রকল্প অফিস থেকেই। এতে কমিশন বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। এ প্রকল্পের আসবাব নতুন ভবনের জন্যই কেনার। যন্ত্রপাতিও নতুন ভবন নির্মাণের পরই স্থাপন করার কথা ছিল।

এ প্রকল্পে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ নেই। এটি একটি সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প। এতে আমাদের কাজ হলো বিদ্যমান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সক্ষমতা বাড়ানো। এখানে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ভবনের কাজ শেষ হওয়ার প্রয়োজন নেই। -প্রকল্প পরিচালক সুব্রত পাল

জানা গেছে, ভবন নির্মাণ শেষ না হলেও শরীয়তপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। অন্য কিছু প্রতিষ্ঠানের ভবনে নিচতলার বারান্দায় গ্রিলের ব্যবস্থা করা হলেও দোতলা থেকে ওপরের তলাগুলোতে দেওয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক সুব্রত পাল সোমবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ প্রকল্পে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ নেই। এটি একটি সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প। এতে আমাদের কাজ হলো বিদ্যমান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সক্ষমতা বাড়ানো। এখানে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ভবনের কাজ শেষ হওয়ার প্রয়োজন নেই।’

আরও পড়ুনঃ এবার পুনর্গঠন হচ্ছে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড

তিনি বলেন, ‘এসব আসবাব কিছু পুরোনো ভবনে দেওয়া হবে। পাশাপাশি অসম্পূর্ণ নতুন কিছু ভবনেও কার্যক্রম চালুর জন্য আসবাবপত্র নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।’

৩২টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের গুণগতমান পরীক্ষা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইটের পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য ১৭টি টেস্টের মধ্যে ১১টি উত্তীর্ণ হয়েছে। ইটের মান ৬৫ শতাংশ ভালো ছিল। এছাড়া পাথরের সাইজের পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য ছয়টির মধ্যে দু’টি উত্তীর্ণ। এক্ষেত্রে ৬৭ ভাগ ওভার সাইজ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাত্র একবার অডিট হলেও এখনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। প্রকল্প পরিচালক প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে, কোনো অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়নি। বর্তমান পরিচালক ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে এ প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন।

নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে হলে কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার বিষয় সহ প্রতিবেদনের সুপারিশে সাতটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণকাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে তদারিক ব্যবস্থা জোরদার, নিয়মিতভাবে প্রতি অর্থবছরে অডিট সম্পন্ন করা, শূন্যপদে জনবল নিয়োগসহ ভবিষ্যতে অনুরূপ প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ