স্নাতকে ২.৯৮ সিজিপিএ, যেভাবে সহকারী জজ হলেন ববির সুব্রত

সুব্রত পোদ্দার
সুব্রত পোদ্দার  © সংগৃহীত

জীবনে হার-না মানা এক যোদ্ধার নাম সুব্রত পোদ্দার। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। স্নাতক সম্মান শেষ করেছেন ২০২২ সালে। স্নাতকে ২.৯৮ অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। অ্যাকাডেমি রেজাল্ট আশানুরূপ না হরেও তিনি অদম্য চেষ্টায় ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে (বিজেএস) চূড়ান্ত পরীক্ষায় সহকারী জজ মনোনীত হয়েছেন তিনি।

সুব্রত পোদ্দারের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের শুকতাইল ইউনিয়নের পাইকেরডাঙ্গা গ্রামে। বাবা শিবেন পোদ্দার ও মা সুমিত্রা পোদ্দারের দুই সন্তানের মধ্যে সুব্রত পোদ্দার জ্যেষ্ঠ। তিনি আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সুব্রত পোদ্দার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। স্থানীয় স্কুল-কলেজে লেখাপড়া তার। এসএসসিতে জিপিএ ৪.৫৬ ও এইচএসসিতে ৪.৫০ পেয়েছিলেন। পিতামাতার স্বপ্ন ছিল অনার্সে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াতে। কিন্তু সে স্বপ্ন ভিন্ন রূপ নিল ছেলে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়ে। ডি ইউনিটে ২৯তম মেধাক্রম পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ভর্তি হন সুব্রত পোদ্দার। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় প্রথমে মানবিকে পড়ার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ পেলেও পরে আইন বিভাগকে আপন করে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন তিনি। ফেলে আসা তার সব গল্প কালবেলার কাছে বলেছেন তিনি।

সহকারী জজে মনোনীত সুব্রত পোদ্দার বলেন, আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হওয়ায় শুরু থেকে মানবিকের বিষয়ে আগ্রহ কম ছিল। পরে আইনের বিষয়টি আপন করে নিয়েছিলাম। অনার্স শেষের দিকে ভালো লাগা কাজ করে। এর একটা কারণও আছে। আমি যখন চতুর্থ বর্ষে ছিলাম তখন অতিরিক্ত জেলা জজ আমাদের ক্লাস নিতে আসতেন। সেখানে দেখি পুলিশ প্রোটোকলে তিনি গাড়িতে চড়ে আসেন। তখন থেকেই ভাবনা শুরু যে, এটাই তো জীবন। আমাকে ভাবায় যে, এটা তো বিশাল ব্যাপার! আমাকেও একদিন এমন হতে হবে। তখন থেকেই আইনকে আমি আপন করে নিয়েছিলাম। তারপর থেকেই আইনের বিষয় অনুভব করেছি, মজা নিয়ে পড়েছি। আর স্বপ্ন দেখা তখন থেকেই শুরু করে দিলাম। ক্লাস নিতে আসা স্যারও ছিলেন খুবই ভালো মানুষ ও দিকনির্দেশনামূলক কথাবার্তাও বলতেন তিনি।

কম সিজিপিএ নিয়ে তিনি বলেন, আমার সিজিপিএ কম ছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ১২ জন সহকারী জজ হয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে কম সিজি আমার। কম সিজি আত্মবিশ্বাস ডাউন করে ফেলে। অথচ আমি বারবার চেষ্টা করেছি। অবশেষে তিন বছর কষ্টের ফল হিসেবে সহকারী জজ চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৯৫তম হয়ে মনোনীত হই। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত এক বড় ভাইও কম সিজি নিয়ে সফলতা অর্জন করেছিল। তার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। মা-বাবা ও আমার সহধর্মিণীর থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদেরও এই জার্নিতে সহযোগিতা ছিল। আমার চেষ্টা ও সবকিছুতেই সৃষ্টিকর্তা আমার প্রতি সহায় ছিলেন বলেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সুব্রত পোদ্দার বলেন, সিজিপিএ কম বা বেশি থাকুক সেটা ব্যাপার না। সবকিছুতে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, হতাশ হওয়া যাবে না। আমি ১০ ঘণ্টা নিয়মিত পড়তাম। নিয়মিত পড়ার কারণে আমার ভেতরে দৃঢ়তা চলে আসে যে, আমি কিছু করেই ছাড়ব। তিন বছর ধরে আমি লেগেছিলাম। অবশেষে সৃষ্টিকর্তা আমার ওপর সহায় হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বলবো- আত্মবিশ্বাস ও চেষ্টায় চূড়ান্ত সফলতার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাবে। সেজন্য দরকার- পড়াশোনা আর সেটির ওপর মনোযোগ দেওয়া।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence