ছাত্রসংগঠনগুলোকে শিবিরের নতুন ধারার রাজনীতি অনুসরণের আহ্বান সাদিক কায়েমের
সব ছাত্রসংগঠনকে শিবিরের নতুন ধারার রাজনীতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, ‘খুনি হাসিনা ছাত্রশিবিরের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল। সর্বশেষ ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু শিবির থেকে গেছে মানুষের হৃদয়ে, আর হাসিনা পালিয়েছে দিল্লিতে। ছাত্রশিবির দেশের মানুষের ন্যায়ের পক্ষে, আজাদীর জন্য সব সময় লড়ে গেছে এবং যাবে। একই সঙ্গে শিবির যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে আপনারা প্রতিবাদ করবেন।’
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ আখ্যা দিয়ে সাদিক কায়েম বলেন, ‘আজকের এই নবীনবরণ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করব, খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তার ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। তার সঙ্গে যারা ছিল তাদেরও বিচার করতে হবে। দেশের বিচার বিভাগ, সচিবালয়, আইন বিভাগে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। যারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে, তাদের আপনারারা প্রতিহত করবেন। এই দেশে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। বাংলাদেশে রাজনীতি করবে তারা, যারা বাংলাদেশপন্থি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি; কারণ এটি ব্রিটিশ ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে তৈরি।
রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে ডাকসু ভিপি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগ-ককোরবানির গল্প শুনে বড় হয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছিল। বিগত ফ্যাসিবাদী সময়ে এই সুন্দর ক্যাম্পাস ছিল না। গণরুম, গেস্টরুমের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চলত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হতো। কেউ ইসলাম চর্চা করতে পারতো না। যারা করতো তাদের ট্যাগিং করা হতো এবং নির্যাতন করা হতো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই, তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর কোনো নব্য ফ্যাসিস্ট জন্মাতে পারবে না। তোমাদেরকে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে হবে।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত বিধিতে আটকা আড়াই হাজার প্রভাষকের পদোন্নতি
রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল। সেই ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। সেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে অন্যান্য মতাদর্শের ভাইয়েরা বুমেরাং হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। নবীনবরণ আয়োজনের পর আমাদের চার ভাই আর ঘরে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের আঘাতে আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাব্বির ভাই, হামিদ ভাই, আইয়ুব ভাই এবং জব্বার ভাই। তারা ইসলামি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও বিবেচিত। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের প্রতি জুলুমের ইতিহাস।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই দিন আজ পাল্টে গেছে। এই নবীনবরণ করতে গিয়ে আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, আর আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারছি, এ জন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৮২ সালের পর আজই প্রথম আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বড় নবীনবরণের আয়োজন করেছি। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করলেও সেখানে আমরা আমাদের বোনদের রাখতে পারিনি। কিন্তু এবার আমরা তা করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।’
চাকসু ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, ‘১৯৮২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল; সেই প্রোগ্রামকে ভন্ডুল করতে যারা সম্মিলিত আক্রমণ চালিয়েছিল এবং তাদের অপতৎপরতার কারণে শহীদ হয় আমাদের শহীদ ছাব্বির ভাই। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে যখন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সারাদেশ অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়েছিল; তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের অবদানকে গভীরভাবে স্মরণ করছি। জুলাই-আগস্টের সব শহীদকে গভীরভাবে স্মরণ করছি এবং যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছে তাদের জন্য দোয়া করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত এত শিক্ষার্থী দেখে মনটা সত্যিই ভালো হয়ে গেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা গভীর। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও আমি এখানকারই ছেলে। কলেজ পর্যায় থেকেই আমি এ ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করার কারণে খুব পরিচিত হয়ে গেছিল সবকিছু। এ ক্যাম্পাসে তখন পড়ার সুযোগ হয়নি। রাজশাহী কলেজে কয়েকজন ছাত্রশিবিরকে চিনলে তার মধ্যে আমাকেও চিনত ছাত্রলীগ।’
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চার পদে নিয়োগে জরুরি নির্দেশনা
ছাত্রসংসদ নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হয়তো ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা একটা পরিস্থিতিতে এসেছি কিন্তু যেমন রাষ্ট্র, যেমন ক্যাম্পাস আমাদের প্রত্যাশা ছিল সে রকম ক্যাম্পাস এখনও পর্যন্ত আমরা বিনির্মাণ করতে পারিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আমরা দেখেছি মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তারাই পরে এই ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে গেছে। আমরা প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের সহযোগিতা করবে কিন্তু তারাই আমাদের কাজে আরও বাধা সৃষ্টি করছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনগুলো না রাষ্ট্রই আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।’
সর্বশেষ তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের চাহিদা কী তাহলে আমরা বলব, আমরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চাই। আমাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমরা কী চাই? আমরা বলব হলে একটা ছিট চাই, মিলের ভরতুকি বৃদ্ধি চাই, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোহাইমিন, কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেনসহ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন।