সিট দখলের সংস্কৃতি ভেঙ্গে ছাত্রত্ব শেষেই হল ছাড়লেন ঢাবি শিবির সেক্রেটারি

মহিউদ্দিন খান
মহিউদ্দিন খান  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দীর্ঘদিনের একটি আলোচিত সংস্কৃতি ছাত্রত্ব শেষে হওয়ার পরেও ছাত্ররা হলে সিট দখল করে রাখা। শুধুমাত্র ছাত্রনেতারাই নন, চাকরিপ্রার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এ প্রথায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে গত বছরের জুলাই মাসের ছাত্র-আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে।

এই নতুন বাস্তবতায় ব্যতিক্রমী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান। স্নাতকোত্তরের ফল প্রকাশের পরপরই তিনি নিজ উদ্যোগে হল ছেড়ে দিয়েছেন। ছাত্ররাজনীতিতে এমন সচেতন পদক্ষেপের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।

গত ২২ এপ্রিল প্রকাশিত স্নাতকোত্তর ফলাফলে মহিউদ্দিন খান ৩.৯৭ সিজিপিএ নিয়ে ব্যাচে প্রথম হন। এরপর ২৫ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এক পোস্টে হল ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি।

তার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকের এক মন্তব্যে সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, “আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি হিসেবে এখনও হলে অবস্থান করলে হয়তো বাধা দেয়ার সাহস কারও থাকতো না। কিন্তু নিজের থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো হল ছাড়ছেন—এটাই বড় মানসিকতা।”

আরেকজন, মেহেদুল ইসলাম, লেখেন, “সেই ছাত্রলীগের ভয়াল গণরুম-গেস্টরুম কালচার আর ফিরে না আসুক। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার সাথে সাথে হল ছেড়ে দেয়া—নতুন বন্দোবস্তের ক্ষুদ্র পদক্ষেপ।”

ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে মহিউদ্দিন খান লেখেন, “হলের সুন্দর এই পরিবেশ চলমান থাকবে যদি ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর আমরা নিয়ম মেনে হল ছেড়ে দিয়ে অনুজদের অধিকার বুঝিয়ে দিই। আর্থসামাজিক বাস্তবতায় সিদ্ধান্তটা কঠিন মনে হলেও, যারা ছাত্রলীগের জুলুম সহ্য করেছে, তারা আর নতুন জুলুমের জন্ম দিতে পারে না।”

তিনি আরও জানান, প্রথম বর্ষে হলে ওঠার ১২-১৩ দিনের মধ্যে গেস্টরুমের ভয়াবহতা তাকে হল ছাড়তে বাধ্য করেছিল। এরপর দ্বিতীয় বর্ষের শেষদিকে লিগ্যাল এলিমেন্টে থাকার সুযোগ পেলেও ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি এক ভয়াবহ রাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, “শাহরিয়াদ ও মাহমুদের উপর ছাত্রলীগ যে নির্যাতন চালায়, তার জেরে আমাকেও ঝুঁকির মুখে হল ছাড়তে হয়েছিল। মাসের পর মাস হলমুখো হওয়া যায়নি।”

স্নাতকোত্তর শেষ করার পর নিয়ম অনুযায়ী হল ত্যাগ করেছেন বলেও জানান তিনি। তার ভাষায়, “ছাত্রলীগ হলে সিট নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষার্থীদের উপর দখলদারি কায়েম করতো। কিন্তু জুলাইয়ের পর হলে এখন নিয়মতান্ত্রিকতা ফিরে এসেছে। গণরুম-গেস্টরুমের সেই জঘন্য চর্চা আর নেই। এখন সবাই নিয়মমাফিক হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।”

মহিউদ্দিন খানের হল ছাড়ার এই পদক্ষেপকে অনেকে দেখছেন একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে—যেখানে ছাত্ররাজনীতির নেতারা নিয়মকানুন মেনে চলার মাধ্যমে একটি সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence