এসএসসির প্রশ্ন ফাঁস: কুড়িগ্রামে কেন্দ্রসচিবসহ গ্রেপ্তার ৩

কুড়িগ্রামে এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিবসহ ৩ শিক্ষক গ্রেপ্তার
কুড়িগ্রামে এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিবসহ ৩ শিক্ষক গ্রেপ্তার  © সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি-২০২২ সালের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব ও প্রধান শিক্ষকসহ ওই বিদ্যালয়ের অপর দুই সহকারী শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় একজন পলাতক রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ দেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সদস্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালীক চৌধুরী। এরপরই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আসামি না করায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও জোবায়ের হোসাইন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থানায় এনে বাছাইয়ের (সর্টিং) সময় ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের ভেতরে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রের একটি করে খাম ঢুকিয়ে নেওয়া হয়। সিলগালা করা প্যাকেটের ওপরে স্বাক্ষর করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার দিন থানা থেকে বাংলা প্রথম পত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের খামগুলো কৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়। শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নপত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও কেন্দ্রের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার দায়িত্বে অবহেলা করে তা করেননি। পরে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরমালা তৈরি করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে চুক্তির ভিত্তিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়। 

আরও পড়ুন: এসএসসির ৪ বিষয়ে পরীক্ষা স্থগিত করলো দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নজরে এলে তাঁরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। পরে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ও পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ইংরেজি দ্বতীয় পত্র পরীক্ষার দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান, ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে গণিত, কৃষিবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উদ্ধার করে। এই বিষয়গুলোর পরীক্ষা এখানো অনুষ্ঠিত হয়নি।
 
প্রশ্নপত্র ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের কক্ষে রয়েছে নিশ্চিত হয়ে তাঁরা অভিযান চালান। পুলিশ জানতে পারে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্যাকেটে ওই প্রশ্নপত্রগুলো ঢোকানো ছিল। পরে বিকেলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে থানায় আনে। রাতে প্রধান শিক্ষককে আটক করা হলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক জোবায়ের হোসাইনকে আটক করা হয়। 

অন্যদিকে বুধবার  (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদুর রহমান ও সোহেল আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলার অপর আসামি অফিস সহকারী আবু হানিফ পলাতক রয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে প্রায় তিন ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তারা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি: ২য় রিলিজ স্লিপ আবেদনের সময় বেড়েছে

ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন পলাতক রয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে। আরও কেউ জড়িত থাকলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’ 

ভূরুঙ্গামারী-কচাকাটা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার আদম মালিক চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।  


সর্বশেষ সংবাদ