রাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে জড়িতদের ফল বাতিল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত সকলের ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত করা হয়।

সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ সেশনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত সকলের পরীক্ষার ফল বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি অভিযোগ রয়েছে এবং প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, সেহেতু এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল বলে গণ্য হয়েছে।

এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ডীন ও এ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়ে জরুরি সভায় মিলিত হয়। সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

জালিয়াতি প্রমাণের পরেও ফল প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভর্তিচ্ছু তানভীরের হয়ে কেউ প্রক্সি দিয়েছে, এই তথ্য আমাদের দেওয়া হয়নি। সেজন্য তার নাম রয়ে গেছে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ফল প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু আজ এসম্পর্কে অবিহিত হয়ে ঐসব শিক্ষার্থীর ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। 

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত সকলের ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডীন ও অন্যান্যদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করা সকলের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

রাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ড

২ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে ২০২১-২২ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার এ ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে স্ব স্ব রোল দিয়ে ফলাফল জানা যাচ্ছে। সেই অনুসারে ওয়েবসাইটে প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকা শিক্ষার্থীদের ফলাফল সার্চ করেট দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটের গ্রুপ-২ এ জালিয়াতি করা ৩৯৫৩৪ রোলের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ৯২ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। 

আরও পড়ুন: প্রক্সিতে শাস্তি পাওয়া সেই ছাত্রই রাবিতে প্রথম

আবার ৬২৮২৮ রোল নম্বরধারী ইশরাত জাহানের হয়ে প্রক্সি দিয়ে ২ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন জান্নাতুল মেহজাবিন। প্রকাশিত ফলাফল অনুসারে তিনিও এ ইউনিটের তৃতীয় শিফটে ৪৬ দশমিক ৯০ পেয়ে ৬ হাজার ৯২১ তম অবস্থানে রয়েছেন। 

গত ২৬ জুলাই এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় গ্রুপ-২ এ তানভীর আহমেদের বদলে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের এই শিক্ষার্থী বায়েজিদ খান। পরে প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞেসাবাদ শেষে নিজের দোষ স্বীকার করলে ১ বছরের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমান আদালত। একই দিন
ইশরাত জাহানের হয়ে প্রক্সি দিয়ে ২ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন জান্নাতুল মেহজাবিন। প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞেসাবাদে জানা যায়, জান্নাতুল মেহজাবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। এটা ছাড়াও চাকরির বিভিন্ন পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে প্রক্সি দিয়েছিলেন তিনি। তার ব্যাংক একাউন্ট তালাশ করে প্রায় ৩ লাখ টাকার সন্ধান পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া বায়েজিদ খানকে জিজ্ঞেসাবাদে শেষে বেরিয়ে আসে প্রক্সি চক্রের মূলহোতা সন্ধান। জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নির্দেশে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়েছেন। পরে এ ছাত্রলীগ নেতার ব্যাংক একাউন্ট অনুসন্ধান করে বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৪২ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ মেলে। এঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন এ ছাত্রলীগ নেতা। এদিকে অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে তন্ময়ের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থান নেয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো: এখলাসুর রহমান। তিনি ভর্তি পরীক্ষার রোল ১৭২২৮ এর পরীক্ষার্থী লিমনের হয়ে প্রক্সি দেন। অন্যদিকে ‘এ’ ইউনিটের ৪র্থ শিফটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে প্রক্সি দেয়ার অভিযোগে আটক করা হয় খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. সমীর রায়। তিনি রোল ৮৪৬৪৮-এর পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ রাহাত আমীন রিয়াদের পরিবর্তে শেখ রাসেল মডেল স্কুলে পরীক্ষা দেয়ার অপরাধে ১ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন। এসময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাহাত আমিনকেও ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ