গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সংকট যেখানে

গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ভোগান্তি কমাতে গত বছর প্রথমবারের মতো ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে। তিনটি ইউনিটে ২৩ হাজার ১০৪টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় কর্তৃপক্ষ। শুরুর দিকে এই উদ্যোগকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সাধুবাদ জানালেও পরে নানা ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে আস্থা ধরতে রাখতে পারেনি পদ্ধতিটি। শিক্ষার্থীদের দাবি, গুচ্ছ পদ্ধতি ভোগান্তি কমানোর চেয়ে বরং বাড়িয়েছে।

গত বছর ১৭ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা নেয় গুচ্ছ কর্তৃপক্ষ। সবশেষ ইউনিটের ফল প্রকাশ করা হয় ৩ নভেম্বর। তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করানো শুরু করে জানুয়ারি থেকে। ফল প্রকাশের তিন মাস পার হলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই আসন সংখ্যা পূরণ করতে পারেনি। পছন্দের বিষয় না পেয়ে ভর্তি হননি অনেক শিক্ষার্থী। আরেকটি ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা সন্নিকটে। এখানো আগের বছরের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ক্লাস শুরু করতে না পারায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। ব্যবস্থাপনা ত্রুটি দূর করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে গতি আনার তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তারা গুচ্ছ পদ্ধতির বেহাল অবস্থার জন্য কমিটির সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন।

২০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো নিয়ে কমিটির মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো শুরু করে। ভর্তির কার্যক্রমও শুরু করে আলাদা সময়ে। সমন্বয়হীনতার কারণে একই সময়ে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণাও করতে দেখা যায়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন সাক্ষাৎকারের জন্য শিক্ষার্থীদের ডাকা হয় একই দিন সাক্ষাৎকার ছিলো পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ভর্তি করানোর কারণে পছন্দের বিষয় না পাওয়ায় একজন শিক্ষার্থীকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে হয়। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এদিকে কয়েক ধাপে মেধাতালিকা প্রকাশ করেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

আরও পড়ুন- গুচ্ছে আস্থা হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা 

সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করেছেন গুচ্ছ ভর্তির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির এই উপাচার্য বলেন, ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী না পাওয়ায় ভর্তি কার্যক্রমে ধীরগতি রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো গেলে এ সংকট অনেকাংশে কমে যাবে। যদিও আমি এ প্রস্তাব শুরু থেকেই দিয়ে এসেছি। হয়তো বাকীরা তখন এমন অবস্থা তৈরি হবে বুঝতে পারেন নি। শুধু নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করলে হবে না গুচ্ছের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেও সমন্বয় করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি নেয়ায় একজন শিক্ষার্থীকে পছন্দের বিষয়ে পড়তে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় বদল করতে হচ্ছে। একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে পরে সে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তখন সে জগন্নাথের ভর্তি বাতিল করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বারবার আসা যাওয়ার কারণে ভোগান্তিতেও ভুগছে।

আরও পড়ুন- গুচ্ছের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবে কবে?

ড. মুনাজ বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এমন সমস্যা হতো না। এছাড়া ভর্তি কার্যক্রম দেরিতে শুরু করার কারণেও এমন সমস্যা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আগে ভর্তি করিয়েছে শিক্ষার্থীদের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভর্তি নিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থী সংকট তৈরি হয়েছে। কারণ এই শিক্ষার্থীগুলোই একাধিক জায়গায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আগামীতে সমন্বয়হীনতা কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে বিদ্যমান ত্রুটি দূর করা গেলে গুচ্ছ পদ্ধতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, গুচ্ছের কারণে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ভোগান্তি কমেছে।


সর্বশেষ সংবাদ