করোনা: সাত কলেজের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা!

বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। করোনা মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। সেই সঙ্গে বন্ধ দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর উপরে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজনে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রভাব দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতির মুখে পড়লেও সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। ছাত্র-ছাত্রীদের ধারণা, এমনিতেই সাত কলেজ ছাত্ররা নানাভাবে বঞ্চিত, এর উপরে করোনার কারনে দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কা। বিষয়টা যেন ‘মরার উপর খরার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা কারণে সেশনজট বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের কলেজগুলোয়। আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরিকতায় অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিল সেশনজটের সমস্যা। নতুন সেশনগুলো চলছিল প্রায় জটমুক্ত হয়ে। কিন্তু করোনার প্রকোপ কেটে গেলে সরকার ও ঢাবি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আবারও ভয়াবহ হবে সেশনজট- এমনটাই আশঙ্কা সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থীর।

যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা অনলাইন ক্লাসের পরিকল্পনা করছি। ইতোমধ্যেই বৈঠক হয়েছে, সব অনুষদের ডিনবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। আশা করছি পজেটিভ কিছু হবে; যে সুবিধা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও পাবে। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সাত কলেজেও অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা চালুর ইঙ্গিত দেন।

জানতে চাইলে সরকারি তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. আমিনুল জানান, নানা কারণে সৃষ্ট সেশনজটে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই তিন বছর পিছিয়ে। ২০১৭ সালের মাস্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছিলাম ২০২০ সালে। এখন করোনায় পরীক্ষা পেছানোয় আরো এক বছর পিছিয়ে যাব। স্বল্প পরিসরে কিছু উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা অন্যান্য অফিস যেভাবে খোলা রাখা হচ্ছে, তেমন করে আমাদের যথাযথ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে আমাদের পেন্ডিং পরীক্ষাগুলো নেয়া যেতে পারে।

ইডেন কলেজে শিক্ষার্থী সোনিয়া বলছিলেন, করোনায় যদিও বেঁচে যাই, কিন্তু পাশ করতে দেরি হলে চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে। এমনিতেই পূর্বের সেশনজটে অন্যদের থেকে পিছিয়ে আছি। পারিপার্শ্বিক চাপে তখন আরো সমস্যায় পড়ব। সরকারের উচিত করোনার প্রকোপ কেটে গেলো আমাদের জন্য বিশেষ কিছু করার। না হলে সেশনজটের মহামারী আমাদের উপর ভর করবে।

তিতুমীর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা তালুকদারের ভাষ্য, আমরা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা অনেকটাই সেশনজটমুক্ত ছিলাম। তবে করোনা পরর্বতী সময়ে মনে হচ্ছে সেশনজটেই পড়তে হবে।

ইডেন কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ জানান, করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্লাস পরীক্ষা সবই বন্ধ। সেশনজটও বাড়বে। কিন্তু অন্য কোনো উপায়ও নাই। করোনা ও সেশনজট দুটো মহামারীই মোকাবেলা করতে হবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিভুক্ত সাত কলেজের ফোকাল পয়েন্ট ও কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা আমরা বুঝতে পারছি। তবে করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকায় তেমন কিছু করাও যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরাও তাদের নিয়ে চিন্তিত। আসলে মহামারীতে শিক্ষার্থী ও আমরা সবাই নিরূপায়। তবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ঢাবির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আটকে থাকা ফলাফলগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব কলেজের প্রিন্সিপালরা মিলে মিটিং করব। আশা করি সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছু প্রস্তাবও ঢাবিকে দিতে পারব।


সর্বশেষ সংবাদ