‘প্রকাশ্যে’ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা পোমেল বড়ুয়া, গ্রেপ্তার দাবি

বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া
বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া  © সংগৃহীত

গত বছরের ১৬ জুলাই, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর সারা দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পথ তৈরি করে। তবে সেদিনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতারা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিহত হওয়ার আগে আবু সাঈদকে দুইবার শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া। ঘটনার দিন তার নেতৃত্বেই একাধিকবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এমনকি যে পুলিশ সদস্য আবু সাঈদকে গুলি করেন, তার সঙ্গেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন পোমেল।

আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে, পোমেল বড়ুয়াসহ সন্ত্রাসীরা প্রাচীর ডিঙিয়ে পালিয়ে যান। এরপর প্রায় আট মাস ধরে তিনি ও অন্যান্য অভিযুক্ত নেতারা আত্মগোপনে আছেন।

সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ফেসবুকে ফের সক্রিয় হয়েছেন পোমেল বড়ুয়া। একদিকে তিনি সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন, অন্যদিকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সাবিহা আক্তার বলেন, “পোমেল হঠাৎ করে ফেসবুকে ফিরে এসে আমাদের নানা রকম হুমকি দিচ্ছেন। অথচ প্রশাসন তা জানলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

শিক্ষার্থীরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর পোমেল পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো এক অঞ্চলে পালিয়ে যান এবং সেখান থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সরকারের পাশাপাশি এনসিপি, বিএনপি, জামায়াত, শিবির, ছাত্রদল এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, পোমেল বড়ুয়া দেশের বর্ডার পার করে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সংগঠকেরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “সরকার পতনের পর অনেক রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু যারা আন্দোলনে জীবনপণ ঝুঁকি নিয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। পোমেল বড়ুয়ার মতো চিহ্নিত অপরাধীকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।”

বেরোবি শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, “দেশে অবস্থানরত যেকোনো আসামিকে পুলিশ চাইলে খুব দ্রুত ধরতে পারে। কিন্তু পোমেল বড়ুয়ার ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তার অব্যাহত হুমকি ও অপপ্রচারে আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।”

তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, “আবু সাঈদ হত্যার মামলাটি আমাদের হাতে নেই। এটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ভালোভাবে জানেন।”


সর্বশেষ সংবাদ