ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগের ফল নিয়ে অসন্তোষ, পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার দাবি

সরকারি কর্ম কমিশন
সরকারি কর্ম কমিশন  © ফাইল ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট/টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম গ্রেডভুক্ত ইনস্ট্রাক্টর (টেক) ও ওয়ার্কসপ সুপার পদে নিয়োগের ফল নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া এই নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বলছে, চাকরি না হওয়ায় প্রার্থীরা ঢালাওভাবে নানা অভিযোগ করে থাকেন। সব অভিযোগ আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়।

এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগের ফলাফলে অনিয়ম হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

‘ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগের কোন কোন ভাইবা বোর্ডে ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন টিকেছে। আবার কোন কোন ভাইবা বোর্ড এ ১৫ জনের মধ্যে একজনও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অনেক প্রার্থীর লিখিত এবং ভাইভা অনেক ভালো করেও নিয়োগ সুপারিশ পাননি। অথচ তারই সহপাঠীর ভাইবা ও রিটেন খারাপ হয়েছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- চূড়ান্ত সুপারিশে তার নাম চলে এসেছে। ভাইভা বোর্ডে অসঙ্গতি থাকার কারণে ফলাফলের এমন অসংগতি হতে পারে। অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করে পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে।’—ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ মে ইন্সট্রাক্টর নিয়োগের মৌখিক শুরু হয়। ২০২৪ সালের ২ জুন পরীক্ষা শেষ হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। ১৮১টি পদের বিপরীতে ৬৯০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে ১৭৮ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। সুপারিশের পর থেকেই ফলাফলে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ জানাতে থাকেন চাকরিপ্রার্থীরা।

প্রার্থীদের অভিযোগ, ইন্সট্রাক্টর ফুড (বিজ্ঞপ্তির ক্রমিক নং ৮২)-এর দুই নম্বর বোর্ডে ০০০৩৫৩ থেকে ৬০০০৪০ পর্যন্ত মোট ১৭ জন ভাইভায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফলে কেউ সুপারিশপ্রাপ্ত হয় নি। একই দিনে ৩ নম্বর বোর্ডে ০০০১৪৫ থেকে ০০০২১৬  পর্যন্ত মোট ১৬ জনের মধ্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন দুইজন। আবার একই দিনে একই দিনে ১ নম্বর বোর্ডে ০০০০০১ থেকে ০০০৩১৬  পর্যন্ত মোট ১৭ জনের মধ্য সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন ১১ জন। কোনো বোর্ড থেকে একজনও সুপারিশপ্রাপ্ত হননি, আবার কোনো বোর্ড থেকে অধিকাংশই সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। 

একইভাবে আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইন্টেরিওর ডিজাইন, অ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং বেসিকস্, মেকাট্রনিক্স, ইলেক্টিক্যাল, ওয়ার্কসপ সুপার, ইলেট্রোমেডিক্যাল এবং ওয়ার্কসপ সুপার (সিভিল) পদের মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডগুলোতেও একই ধরনের অসংগতি দেখা গেছে। বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য কোনো বোর্ডে বেশি প্রার্থীদের উত্তীর্ণ করা হয়েছে। আবার কোনো বোর্ডে কাউকেউ উত্তীর্ণ করা হয় নি। 

ফলাফলে অসঙ্গতি নিয়ে সম্প্রতি পিএসসিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বিভিন্ন পলিটেকনিক ও টিএসসি এর মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা। স্মারকলিপি জমা দেওয়াদের মধ্যে একজন প্রার্থী নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ভুক্তভোগী এক চাকরিপ্রার্থী জানান, ‘ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগের কোন কোন ভাইবা বোর্ডে ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন টিকেছে। আবার কোন কোন ভাইবা বোর্ড এ ১৫ জনের মধ্যে একজনও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অনেক প্রার্থীর লিখিত এবং ভাইভা অনেক ভালো করেও নিয়োগ সুপারিশ পাননি। অথচ তারই সহপাঠীর ভাইবা ও রিটেন খারাপ হয়েছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- চূড়ান্ত সুপারিশে তার নাম চলে এসেছে। ভাইভা বোর্ডে অসঙ্গতি থাকার কারণে ফলাফলের এমন অসংগতি হতে পারে। অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করে পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে।’

আরেক চাকরিপ্রার্থী জানান, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিসিএসসহ নন-ক্যাডারের বিভিন্ন নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। ভাইভা বোর্ডে সুপারিশের অভিযোগও ছিল। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ৪৪তম বিসিএস ভাইবার ন্যায় ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগের ভাইভা নতুন করে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ভুক্তভোগীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ