এবার স্বপ্ন তাদের আকাশ ছোঁয়ার

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের উচ্ছ্বাস
সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের উচ্ছ্বাস  © টিডিসি ফটো

“ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম গ্র্যাজুয়েট হবো, আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো। এবার আমি দেশের ইন্ডাস্ট্রির জন্য একজন দক্ষ কর্মী হওয়ার স্বপ্ন দেখি।” শিক্ষাজীবন শেষে কালো গাউন গায়ে জড়িয়ে আর চারকোনা ক্যাপ হাতে নিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈদ আনোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭ম সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে তিনি একজন। 

আর বিবিএর শিক্ষার্থী তাবাসসুম ফাউজিয়া জানান, “গ্র্যাজুয়েট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ আনুষ্ঠানিক বিদায় নিচ্ছি। মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি, অনেক ভালো লাগছে। এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।”

শুধু সাঈদ আনোয়ার কিংবা তাবাসসুম ফাউজিয়া নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তনে অংশ নেওয়া ৩ হাজার ৯৫৪ গ্র্যাজুয়েটের প্রত্যেকের চোখে-মুখে একই উচ্ছ্বাস। গ্র্যাজুয়েট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেওয়ার দিন জানালেন তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা। কর্মজীবনে তারা প্রত্যেকে হতে চান একেকজন স্কিলড পারসন। তাদের স্বপ্নটা এবার যেন আকাশ ছোঁয়ার।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার বাড্ডায় সবুজে ঘেরা বিশাল ক্যাম্পাসের ২০ বিঘার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে তার প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

আরও পড়ুন: পরিশ্রম ও শৃঙ্খলাময় পড়াশোনায় সোনা মোড়ানো সাফল্য তাদের

সভাপতির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা না থাকলে শুধু উচ্চশিক্ষা দিয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য তিনি শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সফট স্কিল, মূল্যবোধ এবং ভাষা অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বৈশ্বিক নাগরিক হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে দেশের সামাজিক পরিবর্তন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে নবীন গ্র্যাজুয়েটদের কাজ করার আহবান জানান।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত সমাবর্তনে ডিগ্রি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং তাদের কর্মক্ষেত্রে সফলতা কামনার পাশাপাশি দেশের কল্যাণে একনিষ্ঠ ভাবে কাজের পরামর্শ দেন।

বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর নতুন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্য বলেন আজকের এই অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা শুধু ব্যক্তি সমৃদ্ধির কাজে নয় বরং সমাজ বা জাতি উন্নয়নের জন্যও কাজ করতে হবে। 

ইউআইইউ’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা বলেন, ইউআইইউ’র গ্রাজুয়েটরা তাদের পেশাগত প্রচেষ্টা এবং কৃতিত্বের মাধ্যমে তাদের পরিবার এবং দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনবে।

ইউআইইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া শিক্ষার্থীদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার পাশাপাশি সমাজ ও দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩ হাজার ৯৫৪ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য চারজন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

স্বর্ণপদকপ্রাপ্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তারেক হাসান, মরিয়ম বিনতে আব্দুর রউফ, রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এমবিএ) শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিফ ইমাম।

এর মধ্যে মো. ওয়াসিফ ইমরান ও রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ তাদের স্নাতোকোত্তর এবং বাকিরা স্নাতকে কৃতিত্বের সাফল্য স্বরূপ এবার স্বর্ণপদক পেলেন। তাদের সবারই সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ রয়েছে।

এদিকে, সমাবর্তনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্ণিল সাজে। সকাল থেকে এখানে এসেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিল গ্র্যাজুয়েটরা। অনেকে আবার অভিভাবকদেরও নিয়ে এসেছিলেন সঙ্গে। ক্যাম্পাস জীবনে কাটানো প্রাণের সতীর্থদের সঙ্গে নিজের স্মৃতিকে ফ্রেমে বন্দি করতে দেখা যায় অনেকের।

শুধু গ্র্যাজুয়েটরা নয়, এদিন তাদের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে দিন কাটাতে দেখা যায় তাদের বতর্মান অভিভাবক ও পরিবার পরিজনেরও। এ যেন এক মিলনমেলা।

সমাবর্তনে স্বর্ণপদক পাওয়া সিএসই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রানা মো. শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, গাউন আর ক্যাপ পরে এমন একটা দিন কে মিস করবে ফ্রেমে আবদ্ধ হতে? তাই বন্ধুদের সঙ্গে সমাবর্তনে এসেছি। এখন থেকে মিস করবো ক্যাম্পাসের বন্ধুদের, ক্লাসরুম, প্রিয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষকদের।

সমাবর্তনের সেই চিরচেনা কালো গাউন আর ক্যাপ পরে সবাই ব্যস্ত ছিলেন ক্যাম্পাসের শেষ স্মৃতি ধরে রাখতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের সকল বন্ধুদের একসঙ্গে হয়তো আর নাও পাওয়া যেতে পারে। নীল আকাশে ক্যাপ ছুড়ে আর একটু লাফ দিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন অনেক শিক্ষার্থী।

জানতে চাইলে বিবিএর শিক্ষার্থী ইফফাত জাহান মোহনা, শিক্ষাজীবন শেষে আজকের এই যেন প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েটের শত প্রতীক্ষার ফল। সমাবর্তনে সকল বন্ধুদের একসঙ্গে এসেছি, ক্যাম্পাসের শেষ স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলেছি। এমন একটা মুহূর্তকে কেউ মিস করে?


সর্বশেষ সংবাদ