মেট্রোরেল কর্মীদের কর্মবিরতি,যাত্রী ভোগান্তি ও সমালোচনার ঝড়

মেট্রোরেল
মেট্রোরেল  © সংগৃহীত

ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশের বিরুদ্ধে মৌখিক ও শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন মেট্রোরেলের কর্মীরা। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে পরে কাজে ফেরেন তারা। কর্মবিরতির ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়, আর এই আচরণের কারণে যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তি ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

রবিবার (১৬ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে সচিবালয় স্টেশনে মেট্রোরেলের কাস্টমার রিলেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট (সিআরএ) এবং এমআরটি পুলিশের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় এক টিকিট মেশিন অপারেটরের (টিএমও) শার্টের কলার ধরে তাকে পুলিশের বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই মেট্রোরেলের কর্মীরা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল ৭টা ১০ মিনিটে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলেও স্টেশনের কর্মীরা যাত্রীদের কোনো সহায়তা দিচ্ছিলেন না। পরে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনে এসে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দেন। এরপর সকাল ৯টায় কর্মীরা কাজে ফিরে আসেন।

এই আকস্মিক কর্মবিরতির ফলে যাত্রীরা নানা সমস্যায় পড়েন। একক যাত্রার টিকিট মেশিন বন্ধ থাকায় টিকিট কেনা যায়নি, প্রবেশ ও বহির্গমন গেটের মেশিন চালু না থাকায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই বিনা টিকিটে যাতায়াত করেন, যা সরকারের রাজস্ব ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ‘মেট্রোরেল প্যাসেঞ্জার কমিউনিটি-ঢাকা’ ফেসবুক গ্রুপে একাধিক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মাইনুদ্দিন মোল্লা নিরব মন্তব্য করেন, ‘মেট্রোরেলের কর্মচারীরা কথায় কথায় কর্মবিরতি দেয়! মনে হয় তারা এটি নিজেদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান মনে করেন, যাত্রী সেবার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’

ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘এই কর্মবিরতির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বেতন কেটে সেই ক্ষতি পূরণ করা হোক।’

সাজেদা আক্তার সাজু লেখেন, ‘সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করা যেত। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও সরকারকে বিপদে ফেলা অগ্রহণযোগ্য। যারা এর উসকানিদাতা, তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা উচিত।’

বাংলাদেশ মেট্রো রেলওয়ে ইনফরমেশন গ্রুপে মাসুম বিল্লাহ লেখেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানে চেইন অব কমান্ড থাকা দরকার। যদি একটি ঘটনার জন্য পুরো সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়, তবে এত বড় প্রকল্প কীভাবে চলবে?’

ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে মেট্রোরেলের কর্মীরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছেন: ঘটনার মূল অভিযুক্ত এসআই মাসুদকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি দিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মেট্রোরেল, স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে হবে। এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। স্টেশনে কর্মরত সব স্টাফের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কেউ যেন পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আহত কর্মীদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেল পরিচালনায় নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। কর্মীদের নিরাপত্তা ও সেবার মান নিশ্চিত করতে কতৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আবারও দেখা দিতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ