ভোটের ডিউটিও করেছিলেন

কলকাতায় রাতভর হাসপাতালের শয্যা মেলেনি, ভোরে শিক্ষকের মৃত্যু

শিক্ষক সন্দীপ মন্ডল
শিক্ষক সন্দীপ মন্ডল  © ফাইল ফটো

কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে একটা বেড ব্যবস্থা হয়নি। যখন তা মিলল, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

গত বুধবার সন্ধ্যার পর শিক্ষকের অক্সিজেন ব্যাপকহারে কমতে থাকলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে রাতে কলকাতা পৌঁছে কোনো হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ স্বজনেরা দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষককে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা শুরু হয় ২৪ পরগনার বুড়ুল হাইস্কুলের সন্দীপ মন্ডলের। কিন্তু আধা ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান তিনি।

৪১ বছরের ওই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এপ্রিল মাসজুড়ে ভোটের ডিউটি থেকে শুরু করে মিড-ডে মিলের খাবার বিতরণ― সবই করেছেন। সহকর্মীরা বলছেন, ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে ডিসিআরসি সেন্টারের ভিড় থেকে অথবা মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়েই তিনি সংক্রমিত হয়েছেন।

স্কুল সূত্রের খবর, বজবজের বাড়ি থেকে রোজ বুড়ুল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতে যেতেন তিনি। ৬ এপ্রিল ভোটের ডিউটি করতেও গিয়েছিলেন। ২১ ও ২২ এপ্রিল স্কুলের মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণের কাজ করেন। পরদিন সকাল থেকে জ্বর ও করোনার কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসক তাঁকে ওষুধ দেন এবং করোনা পরীক্ষা করতে বলেন।

আরও পড়ুন : সব ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ পেছানো হতে পারে, ৫ মে বৈঠক

সহকর্মী চন্দন রায় বলেন, “বুধবার ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে অক্সিজেন কমতে থাকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। অ্যাম্বুলেন্সে রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকেই ওঁকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। সারা রাত ঘুরেও কলকাতার কোনও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা মেলেনি। চন্দনবাবু আরও বলেন, “পালস অক্সিমিটারে মেপে দেখা যায়, রক্তে অক্সিজেন ৩৮-এ নেমে গিয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রাথমিক ভাবে তাঁকে দেখে ভেন্টিলেটরে দেওয়ার কথা বলেন। ওই হাসপাতালে কোনও ভেন্টিলেটর খালি ছিল না।”

শিক্ষকের স্ত্রী বীথিকা মণ্ডল বলেন, সন্দীপবাবু আগেই প্রতিষেধকের দুটি ডোজ় নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন সন্দীপ। ১১ বছর আর পাঁচ বছরের দুটো ছেলেমেয়ে আছে আমাদের। জানি না ওদের কীভাবে মানুষ করব।”


সর্বশেষ সংবাদ