স্বাধীনতার ঘোষণা, ৭১ এবং ২৪: সামঞ্জস্য ও পার্থক্য 

মো. ফিরোজ আলম
মো. ফিরোজ আলম  © টিডিসি সম্পাদিত

১৯৪৬ সালে ধর্মের উপর ভিত্তি করে ভারতীয় উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান নামে একক রাষ্ট্র হলেও তা ভৌগোলিক সীমারেখায় দুইটি অংশে বিভক্ত ছিল। উত্তর পশ্চিম অংশের নাম হয় পশ্চিম পাকিস্তান এবং দক্ষিণ পূর্ব অংশের নাম পূর্ব পাকিস্তান। মাঝখানে ভারত অধ্যুষিত দুই পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় ১০০০ মাইল। দুই পাকিস্তানের শাসনকর্তা মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের থেকে নির্বাচিত হতো এবং ভাষা ছিল উর্দু। প্রশাসন কার্যে উর্দু ভাষার ব্যবহার থাকলেও পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তখন উর্দুকে জোর করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চাইলে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ শুরু করে মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন। সালাম,রফিক, জব্বার বরকতসহ অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়।

কেবল ধর্মের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান নামে একক রাষ্ট্র হলেও পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা, সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা সবকিছুই ছিল আলাদা। পশ্চিম পাকিস্তান ছিল অপেক্ষাকৃত অধিক উন্নত, জীবনযাপন ছিল আধুনিক। পূর্ব পাকিস্তান ছিল অপেক্ষাকৃত অনুন্নত, সুযোগ-সুবিধা ছিল অনেক কম। ইতিহাসের আলোকে বলা যায় পূর্ব পাকিস্তান ছিল উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু এবং পশ্চিম পাকিস্তান ছিল বণ্টন এবং ভোগের কেন্দ্রবিন্দু। রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা, সরকারি-বেসরকারি সকল চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রেই পূর্ব পাকিস্তান বৈষম্যের শিকার হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এই বৈষম্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সমগ্র পাকিস্তানের শাসনকর্তা নির্বাচন করেন। এই নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পরাজয় হলেও তারা শাসনভার পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে দিতে গড়িমসি এবং টালবাহানা শুরু করেন। 

তৎকালীন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ধৈর্য এবং কৌশল অবলম্বন করে দুই পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন হতে পারে এমন ধারণা থেকে অধিক সৈন্য, অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামাদি পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে আসলেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী (দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় নাই) শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারলেন এবং জানতেন তাকে গ্রেফতার করা হবে। তিনি জানেন তাকে গ্রেফতার করতে না পারলে দলীয় নেতা কর্মীদের উপর অত্যাচার করা হতে পারে। 

২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর আক্রমণের নৃশংসতার সংবাদ জানতে পেরে দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মগোপনে চলে যেতে নির্দেশ দিলেন। তিনি নিজে তার ধানমন্ডির বাসায় অবস্থান করলেন। 

সেই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি, শুরু করে গণহত্যা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে যখন গ্রেফতার করা হয় কিংবা দলীয় নেতাকর্মীদের নিরাপদ রাখতে যখন স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হন, বাংলাদেশের মানুষ তখন দিশেহারা। পুলিশ, ইপিআর কিংবা মিলিটারিতে তখন পূর্ব পাকিস্তানের লোকবল ছিল অনেক কম। যারা চাকরিতে আছেন তারাও বিভিন্ন শোষণ এবং পদোন্নতির দিক থেকে বৈষম্যের শিকার ‌ছিলেন।

রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বহির্ভূত হওয়ার মানে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নির্ঘাত মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিদ্রোহ করে যার নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে খেমকারান সেক্টরে সম্মুখ সাড়িতে থেকে তিনি যুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে ভারতীয় যোদ্ধারা পিছু হাঁটতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য জিয়াউর রহমান এবং তার কোম্পানিকে পাকিস্তানের সরকার সর্বাধিক বীরত্বসূচক পুরস্কার ঘোষণা করায় তার সুনাম সেনাবাহিনী এবং পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

জিয়াউর রহমান সাহসিকতার সহিত বিদ্রোহ করতে পারে এমন সম্ভাবনা থাকায় তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাসের নামে পাঠিয়ে। পেছনে পাকিস্তানের সৈন্য পাঠিয়েছিলেন যাতে পথিমধ্যে তাকে হত্যা করতে পারেন। জিয়াউর রহমান অত্যন্ত সুচতুর হওয়ায় পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেনারেল জানজুয়াকে গ্রেফতার করেন এবং বিদ্রোহ করেন। চট্টগ্রামে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র গিয়ে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তখনও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অতিপরিচিত না থাকায় তৎকালীন অপামার জনসাধারণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে পুনরায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে। ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, এবং অসংখ্য যোদ্ধাহতদের লড়াইয়ে বিনিময়ে জন্ম হয় নতুন রাষ্ট্র, যার নাম বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে আসেন‌। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সহযোগী আল বদর বাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীন বাংলাদেশে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেও পরবর্তীতে বাকশাল কায়েম করে সেই পথরুদ্ধ করে দেন‌। শেখ মুজিবুর রহমানের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ও রক্ষীবাহিনীর নির্বিচারে শোষণ, গুম-খুন, ধর্ষণ, ব্যাংক ডাকাতিসহ নির্যাতন-নিপীড়ন,আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে।  নির্মম অত্যাচারের সীমা লঙ্ঘন করলে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর একদল সশস্ত্র গোষ্ঠী শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বিচারপতি আবু সায়েম রাষ্ট্রভার গ্রহণ করলে শান্তিশৃঙ্খলা পরিপূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রভার গ্রহণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেন। 

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা থেকেও পরবর্তীতে গণতন্ত্রকে বহুবার রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলেছে স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশকে শাসন করেছেন। এরশাদের নির্যাতনের মাত্রা সীমা লঙ্ঘন করলে দলমত নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৯০ সালে রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে মাইনাস টু ফর্মুলার মাধ্যমে গণতন্ত্রের যাত্রা আবারও রুদ্ধ করা হয়েছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়। নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও এবার কুচক্রী মহল গণতন্ত্রের যাত্রা রুদ্ধ করতে কৌশল পরিবর্তন করেন। তারা একটি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের মুখোশ পরিয়ে নির্বাচনকে করে তোলেন ছেলেখেলা। অসংখ্য মৃত মানুষের ভোটদান এবং দিনের ভোট রাতে দেয়ার প্রহসন এবং কারচুপির নির্বাচন প্রত্যক্ষ করে বাংলাদেশের মানুষ।

জোরপূর্বক রাষ্ট্রকে কুক্ষিগত করে আওয়ামী লীগ নামক ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী শুরু করেন শাসনের নামে শোষণ, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার। বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং তিন বারে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।  বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী রাখা হয়। জামায়াত ইসলাম এবং তাদের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ ক্ষমা করে দিলেও তা প্রত্যাহার করে শুরু করেন নির্মম নির্যাতন, অবিচার। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্মম নির্যাতনের পাশাপাশি জামায়াতেরও কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীদের ঝুলানো হয় ফাঁসির কাষ্ঠে।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শতভাগ অনুগত, অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আদালত নির্যাতনের হাতিয়ার এবং বৈধতা দানকারী প্রতিষ্ঠান। বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গুম-খুন করা হয়। লক্ষাধিক মামলা দিয়ে কয়েক কোটি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ছাড়া করা হয়। অসংখ্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে প্রকাশ্যে পিটিয়ে পঙ্গু করা হয়। মৃত ব্যক্তিরা ভোটদানের পাশাপাশি অভিযুক্ত হয় পুলিশের উপর ককটেল মামলার আসামি করা হয় মৃত দলীয় নেতাকর্মীদেরও। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ফাহমিদা মজিদ ঊষা’র পিতা বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ কমিশনারসহ আরও অনেক মৃত ব্যক্তি পুলিশের গায়ে ককটেল মারার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগে অভিযুক্ত হয় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে লালনকারী মানুষ। রাষ্ট্রীয় পুলিশবাদী সেই মামলায় মৃত দলীয় নেতা-কর্মীদের ককটেল মারতে দেখেন পুলিশ বাহিনী, অথচ তখন তাদের মৃতদেহ গলিত হয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে নিশ্চয়ই। দলীয় অনুগত প্রশাসনের দ্বারা বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতনের জন্য তৈরি করেন আয়না ঘর নামক গোপন নির্যাতন ও বন্দিশালা। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে ছিলেন ভারতে, দেশের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন আত্মগোপনে তারাই হয়ে ওঠেন মুক্তিযুদ্ধের ধারক এবং বাহক। মুক্তিযুদ্ধের সনদ বিক্রি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, মানি লন্ডারিং এমন কোনো অপকর্ম নেই যা শুরু করেননি। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শোষকশ্রেণী মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে অধিকতর বিশ্বস্ত এবং অনুগত দাসদের  প্রশাসনে বসাতে পারতেন এসব নির্মম নির্যাতনের জন্য। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এই কোটা প্রথার সংস্কার চাইলে তাদের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতনের খড়্গ। বিএনপির নেতা-কর্মীরা শুরু থেকেই এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা চরম এবং চূড়ান্ত নৃশংসতার বহিঃপ্রকাশ করেন। তখন বাংলাদেশের সকল শ্রেণি পেশার নির্যাতিত মানুষ এবং আন্দোলনরত সকল শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদ বিরোধী একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই এতো মামলা, হামলা অবিচার প্রতিরোধ করে রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দী রাখা হলেও দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নির্বাসিত এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা লন্ডনে অবস্থানরত জনাব তারেক রহমান। তিনি দলীয় নেতাকর্মী এবং বাংলাদেশের অপামার জনসাধারণ ও তরুণ প্রজন্মের আস্থা, আবেগ এবং ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। চরম নির্যাতনের শিকার তারেক রহমানকে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশে আসতে দিতেন না, এমনকি তার ভয়ে তটস্থ হয়ে মিডিয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবুও তিনি দূরে থেকে দলীয় নেতাকর্মী, নির্যাতিত সকল গোষ্ঠীর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টেলিকনফারেন্সে যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন। দলীয় নেতাকর্মীদের এবং সকল আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী একক প্লাটফর্ম তৈরি করে সম্মিলিতভাবে ডাক দেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাতের।

 শেখ হাসিনার সন্ত্রাসী নেতাকর্মী এবং অনুগত সরকারি বাহিনী টানা ৩৬ দিনে ২০ হাজারেরও বেশি বিএনপি নেতাকর্মী এবং আন্দোলনরত অন্যান্য বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের আটক করে বিনা বিচারে জেলখানায় বন্দী রাখেন। প্রকাশ্যে গুলি এমনকি হেলিকপ্টারে করে গুলি করে, নারী-পুরুষ-শিশুসহ ২০০০ বেশি মানুষকে হত্যা করেন, ২০ হাজারেরও অধিক মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করেন । গণহত্যা করে মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, জনতার ঢল গণভবনে প্রবেশ করলে জীবন বাঁচাতে হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা এবং পতন হয় শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলের। 

সর্বোপরি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে, উভয় আন্দোলন হলো গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বৈষম্য এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন। তবে বৃহৎ পার্থক্যও রয়েছে, ৭১ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের দুঃশাসনের কবল থেকে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির আন্দোলন আর ২৪ ছিল স্বাধীন দেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ৭১ এর আন্দোলন ছিল ৯ মাসব্যাপী এবং ২৪ এর আন্দোলন ছিল ১৬ বছরেরও অধিক সময়ব্যাপী। জামায়াত ইসলামী ধর্মের উপর ভিত্তি করে দল হওয়ায় ৭১ এ ছিল অখণ্ড পাকিস্তানকে রক্ষা করতে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি, ২৪এ ছিল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের উৎখাতের পক্ষে!  ৭১ সালে বিএনপি জন্ম না হলেও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান রাজপথের মুক্তি যোদ্ধাদের সমন্বয়ে, এবং বিভিন্ন দল ও শ্রেণী-পেশার যোগ্য নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি গঠন করেন। বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের পক্ষের শক্তি হিসেবে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২৪ এর ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের সকল স্বাধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে জনমনে আস্থা করে নিয়েছে।

লেখক: এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক গণসংযোগ সম্পাদক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ


সর্বশেষ সংবাদ