শিক্ষার্থীর বিকাশে ক্লাব-সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই

  © ফাইল ছবি

একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসে যুক্ত থাকা প্রয়োজন। এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসের জন্য ক্লাব ও সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। একজন শিক্ষার্থী যত বেশি ক্লাব সংগঠন করবেন তিনি তত বেশি কিছু শিখতে পারবেন, জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন। একে অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। নিজের মধ্যে গড়ে উঠবে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা। 

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। প্রত্যেক সংগঠনের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে অনেকে মনে করেন ক্লাব-সংগঠন করলে সময় নষ্টের সাথে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। এটি ভুল ধারণা। একটি প্রবাদ আছে, যে রাঁধতে জানে সে চুলও বাঁধতে জানে। আমরা সারাদিন পড়াশোনা করি বা কাজ করি এমন নয়। আমরা বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডায়, মোবাইল, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনেক সময় কাটিয়ে দেই। অথবা অলস সময় ব্যয় করি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই সময়গুলো আমরা ক্লাব বা সংগঠনে ব্যয় করলে সামাজিক ও আত্ম উন্নয়ন হবে এবং তাতে আমরাই লাভবান হবো।

একজন শিক্ষার্থী যখন একজন সংগঠক হবেন তখন ১০০ জনকে সাথে নিয়ে কাজ করবেন, তখন সেখান থেকে অনেক কিছু অর্জন করতে পারবেন। এতে তার সাংগঠনিক দক্ষতা, নিজেকে উপস্থাপন করার দক্ষতা , স্মার্টনেস, ইভেন্ট কমপ্লিটে কাজের দক্ষতা এবং জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। এতে করে তিনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। যা এই প্রবল প্রতিযোগিতার বিশ্বে ক্যারিয়ার গঠনে ভুমিকা পালন করবে। 

অনেক সময় দেখা যায় একই বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যাচের শিক্ষার্থী অথচ কেউ কাউকে চিনে না। উচ্চ শিক্ষায় এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসে যুক্ত শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়। বাংলাদেশে তার মূল্যায়ণ খুবই কম। সামনে কথা বলার সৎ সাহস সবার থাকে না, একটা নার্ভাসনেস কাজ করে। কিন্তু এক্টিভিটিসে যুক্ত একজন সংগঠকের সেটা আর থাকে না। 

তবে সংগঠন করতে হলে পরিবার, ধর্ম  রাষ্ট্রের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন ক্লাব‌ বা সংগঠন করতে হবে। কেউ রাজনীতি পছন্দ করলে রাজনৈতিক সংগঠন, বিতর্ক পছন্দ করলে ডিবেটিং ক্লাব, কেউ মিউজিক পছন্দ করলে মিউজিক ক্লাব, সংস্কৃতি পছন্দ করলে সাংস্কৃতিক ক্লাব, কেউ শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করলে বিএনসিসি, দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীরা নিজ শহরের মানুষের সাথে মিশতে জেলা এসোসিয়েশন এমন আরও অনেক সংগঠন আছে। কেউ সংগঠন করে দায়বদ্ধতা থেকে, আবার কেউ করে ভালো লাগা থেকে। 

সহকারী কমিশনার এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (সুপারিশপ্রাপ্ত) নিষাদ হাবিব বলেন, পড়াশোনায় সিরিয়াস হওয়া মানেই এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসকে বিসর্জন দেওয়া না। বরং যারা দুটোই সমান তালে চালিয়ে যেতে পারে তারাই কৃতকার্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকলে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে বাজিমাত করা যায় কেননা রাষ্ট্র একটা সংগঠন। সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা যাদের থাকে তাদের জন্য ক্যারিয়ার হয় অন্যদের থেকে অধিক সুগম। কিন্তু যারা সংগঠন করেনা তারা কোথাও একটা গিয়ে সামান্য হলেও পিছিয়ে থাকে। সুতরাং পড়াশোনা করুন পাশপাশি সংগঠনও করুন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে উপভোগ করুন সম্পূর্ণরূপে।

সহকারী পুলিশ সুপার (সুপারিশপ্রাপ্ত) সোয়েব মুহাম্মাদ বলেন, গ্রামের মফস্বল এলাকা হতে উঠে আসা ছেলেমেয়েদের অধিকাংশের ভেতরে জড়তা থাকে, সবার সাথে মিশতে পারে না। ক্লাবে আসলে এই জড়তা কেটে যায়। ক্লাবে সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে সবার সাথে সহজভাবে কমিউনিকেট তৈরি করার সক্ষমতা তৈরি হয় এবং চিন্তা ধারা উন্মুক্ত হয়। ডিপার্টমেন্টের বাইরে বড় কানেকশন তৈরি হয় সব ডিপার্টমেন্ট এর ছেলেমেয়েদের সাথে। এর সুফল কর্মজীবন সহ জীবনের প্রতিটি ধাপে পাওয়া যায়।

ক্লাব করার মাধ্যমে মানুষ শিখতে পারে কিভাবে একটা অনুষ্ঠান সুন্দর করে সম্পূর্ণ করা যায়, বৃদ্ধি পায় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, তৈরি হয় পরিকল্পনা করার সক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা, সৃষ্টি হয় দলগত কাজ বা সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা,  বৃদ্ধি পায় আত্মবিশ্বাস ও স্মার্টনেসসহ নানাবিধ গুণ। যা যেকোনো শ্রেণী বা যেকোনো পেশার মানুষের সাথে মিশতে পারার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক এক্টিভিটি নৈতিকতা, মানবিকতা জাগ্রত করতে পারে এবং মানুষের পেশাগত জীবনেও উপকারে আসে। তরুণ ত-সে, যার মধ্যে আছে তারুণ্য। তারুণ্য তার মধ্যেই আছে যে একজন সংগঠক।

লেখক: শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)


সর্বশেষ সংবাদ