ফেসবুক লাইভে এসে থানার ওসিকে পেটানোর হুমকি

চাঁদার জন্য অস্ত্র হাতে সহযোগীদের নিয়ে সাজ্জাদ হোসেন। নগরের অক্সিজেন এলাকায়
চাঁদার জন্য অস্ত্র হাতে সহযোগীদের নিয়ে সাজ্জাদ হোসেন। নগরের অক্সিজেন এলাকায়  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামে ফেসবুক লাইভে এসে থানার এক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পেটানোর হুমকি দিয়েছেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুকে লাইভে নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফ হোসেনকে এ হুমকি দেন তিনি।

লাইভে তিনি কোনো অবস্থাতেই তাঁর হাত থেকে ওসি বাঁচতে পারবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এই লাইভে ওসিকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালও করেন। এ ঘটনায় ওসি বাদী হয়ে গতকাল রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ফেসবুক লাইভে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, তাঁকে নগরের অক্সিজেনে ধরে এনে পেটাবেন। প্রয়োজনে তিনি মরে যাবেন। কিন্তু হার মানবেন না।

পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ করে বলেন, ওসি আরিফ চাঁদাবাজিসহ তাঁর সন্তান হত্যায় জড়িত। তাঁকে যাতে বদলি করা হয়।

জানতে চাইলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বলেন, ফেসবুক লাইভে এসে সাজ্জাদের হুমকির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। গত সোমবারও সাজ্জাদের সহযোগীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাজ্জাদের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি বন্ধে বায়েজিদ থানা-পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে এই সন্ত্রাসী।

এদিকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তাঁর চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী।

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝরনা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান সাজ্জাদ। পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন। ৬০ জন মিলে ওই ভবনটি নির্মাণ করছেন।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ভবনমালিকদের সাজ্জাদকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এর আগে গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা লক্ষ্য করে গুলি করেন সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীরা। এ ঘটনার ভুক্তভোগী মো. ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় সাজ্জাদ আমার বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি করেন।’ এ ঘটনায় ইকবাল বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন। চাঁদা না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের বাসা লক্ষ্য করেও গুলি করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় হাছান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।

গত ২১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও নিহত আফতাব উদ্দিনের পরিবার বলছে, সাজ্জাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় আফতাবের পরিবারের করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক ও বায়েজিদ সীমানা-সংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামের দুই যুবককে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়।

পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। মামলা দুটিতে সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীদের আসামি করা হয়। আসামিরা ধরা না পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান নিহত মাসুদ কায়সারের ভাই মো. আরিফ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence