ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে গর্ভবতী নারীদের সতর্কতা

এডিস মশা
এডিস মশা  © ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের পর দেশে মহামারী রূপ নিতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। গতকাল মঙ্গলবার (১ আগস্ট) পর্যন্ত হাসপাতাল ভর্তি হয়েছেন ৫৭ হাজার জন। দিন দিন এ ভাইরাসে আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে দেশর মানুষ। ছোট্ট শিশু থেকে বয়স্ক কেউই বাদ যাচ্ছে না ডেঙ্গুর ছোবল থেকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আজ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৬১ জনের। ডেঙ্গু আক্রন্ত হলে সবচেয়ে কঠিন  পরিস্থিতে পড়তে হয় গর্ভবতী নারীদের। বিশেষজ্ঞরা এসময় গর্ভবতী নারীদের বিশেষ সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে এ সময় যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। গর্ভবতী মায়েদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি।

শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের যে পরিবর্তন হয় তাতেও গর্ভবতী নারীরা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আর সবচেয়ে বড় ভয় রক্তক্ষরণ। এতে বাচ্চা ও মায়ের বড় ক্ষতি হতে পারে।

এ কারণে প্রসবের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। খুব বাধ্য না হলে কোনোভাবেই অপারেশন বা ব্যথার ওষুধ দিয়ে প্রসব করানো যাবে না। কোনো রকম ঝুঁকি নেয়া যাবে না। সমস্যা মনে হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে গর্ভপাত বা শিশুর শারীরিক জটিলতার কোনো তথ্য–উপাত্ত এখনো পাওয়া যায়নি। শেষ তিন মাসে ডেঙ্গু হলে যে অপরিণত অবস্থায় সন্তান প্রসবের ঝুঁকি তৈরি হয়, তা–ও নয়।

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মা থেকে শিশুতে এই রোগের ভাইরাস সরাসরি সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। মায়ের জটিলতাগুলোর মধ্যে আকস্মিক রক্তপাত সবচেয়ে উদ্বেগজনক উপসর্গ। প্রসবের বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের (সিজারিয়ান) সময় অথবা পরে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। বুকে পানি জমা, যকৃতের সমস্যা, মাড়ি বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে রক্তপাত হতে পারে।

অন্তঃসত্ত্বা নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ সময় ডেঙ্গুর উপসর্গ অন্যান্য জটিলতার সঙ্গে মিলে যায় (যেমন হেলপ সিনড্রোম বা যকৃতে এনজাইম বেড়ে যাওয়া ও রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়া)। তাই অভিজ্ঞ মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা জরুরি।

হাসপাতালে প্রতি চার ঘণ্টা পরপর রোগীর হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও পালস প্রেশার পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১০০ সিসি প্রস্রাব হওয়া জরুরি। হিমোগ্লোবিন, হেমাটোক্রিট ও প্লাটিলেটের সংখ্যা প্রতিদিন দেখা উচিত। বুকে পানি জমলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। প্রতিটি বিষয়ই নিবিড়ভাবে লক্ষ রাখতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বরের সময় প্যারাসিটামল খেতে পারেন। আগে থেকে কেউ অ্যাসপিরিন খেয়ে থাকলে এ সময় বন্ধ করে দেয়া ভালো। পানি ও তরল খেতে হবে বেশি। তবে বমি বেশি হলে শিরায় স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার পর শুরু হয় ক্রিটিক্যাল ফেজ। এ সময় প্লাজমা লিকেজের লক্ষণ থাকলে সতর্কতার সঙ্গে স্যালাইন দিতে হবে। ক্রিটিক্যাল ফেজে প্রসব বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব এড়ানো উচিত।

যদি প্রসব ব্যথা শুরু হয়, তাহলে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে প্রসব করাতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ