ভারতের আদানির বিদ্যুৎ বাণিজ্যিক আমদানি শুরু হলো

দুদিনে গড়ে ঘণ্টাপ্রতি ৭২০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি।
দুদিনে গড়ে ঘণ্টাপ্রতি ৭২০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি।  © টিডিসি ফটো

ভারতের ঝাড়খন্ড প্রদেশের গোড্ডা জেলার আলোচিত আদানি গ্রুপের নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ আনা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) থেকে এই বিদ্যুৎ নেওয়া শুরু করেছে দেশের সরকারি সংস্থা একক পাইকারি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। শুক্রবারও (৭ এপ্রিল) আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে।

পিডিবি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, দুদিনে গড়ে ঘণ্টাপ্রতি ৭২০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি।

জানা গেছে, গত ৯ মার্চ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী এক টানা ৭২ ঘণ্টা পূর্ণ সক্ষমতায় বা লোডে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে হয়। তারপর ঠিক হয় ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা বা প্রকৃত ক্ষমতা কত। এরপরেই শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ। 

এই পরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে।

ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা এলাকায় আদানি ১৪৯৮ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি এতদিন পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল। এই ইউনিটের স্থাপিত বা প্রকৃত ক্ষমতা হলো ৭৪৯ মেগাওয়াট। আগামী জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ নিতে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটারের একটি সঞ্চালন লাইন করা হয়েছে। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে উঠবে, সেখান থেকে বিদ্যুৎ আসবে বগুড়াতে। বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালনের দায়িত্বে রয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী টেলিফোনে দৈনিক বাংলাকে বলেন, আদানি গড়ে ৭২০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এটি চাহিদার ওপর নির্ভর করছে কতটুকু বিদ্যুৎ সেখান থেকে নেয়া হবে। চাহিদা বাড়া কমার ওপর ভিত্তি করেই তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছরের চুক্তিতে বিদ্যুৎ কিনছে পিডিবি। আদানির সঙ্গে পিডিবির এই ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। যা নিয়ে সমালোচনা, তার মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি ভাড়া, কয়লার দাম, বিদ্যুৎ না কিনেও কয়লার মূল্য পরিশোধসহ বেশ কিছু বিষয়।

এবিষয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন , ভারতের আদানির সাথে করা চুক্তির আওতায় মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে আদানির বিদ্যুৎ আসবে। আদানির বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে  অনিশ্চয়তার কিছু নেই।

নসরুল হামিদ বলেছিলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারমূল্যেই বাংলাদেশ আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাবে। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। মার্চ মাসে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। এপ্রিল মাসে আদানির দ্বিতীয় বিদ্যুৎ ইউনিট থেকে আরো ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। তাই আসন্ন সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে উদ্বেগের কিছু নেই। এছাড়াও খুব শিগগিরই কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতোমধ্যেই উৎপাদনে এসেছে। পাশাপাশি, এসএস পাওয়ার ও বরিশাল পাওয়ার প্লান্ট শিগগিরই উৎপাদনে আসবে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

উল্লেখ্য, ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আদানি গ্রুপের সাথে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, আদানি গ্রুপ ঝাড়খন্ডের গোদায় ৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদনে সক্ষম দুটি ইউনিট বিশিষ্ট ১৬০০ মেগাওয়াট একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। পরে, আদানি গ্রুপ ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে।


সর্বশেষ সংবাদ