বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের র‍্যাগিং কালচার

বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ ও লেখক
বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ ও লেখক  © টিডিসি ফটো

ভাবসিলাম ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে গেছি, এসব নিয়ে আর ঘাটাবো না। কিন্তু শ্রদ্ধেয় আসমা নাজ ম্যামের স্ট্যাটাস দেখে মনে হইল এসব সামনে আসা খুব দরকার। এই ক্যান্সারটা অনেক পুরোনো এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের স্থাপত্যচর্চার জন্য মারাত্মক হুমকি।

সদ্য কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে ঢুকলাম। স্থাপত্য পড়ার তীব্র ইচ্ছা নিয়েই ডিপার্টমেন্টে ঢোকা। আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট এ অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢুকেছিলাম, ভাবতাম দেশের সবচেয়ে সৃজনশীল মানুষগুলোর সাথে ক্লাস করব। 

I was very wrong. Have seen how monsters are groomed and praised here. I had been to hell and back to tell the following story.

PS: I will exclude the minor insults, rags, and humiliations to spare my fingers from writing a novel. I will only state 2-3 occasions that needs to be addressed.

১.
প্রথমদিন আহসান স্যার এর রিগোরাস ডিজাইন স্টুডিও শেষ করার পর "বড় ভাই"দের ফোন আসে, ব্যাচের সব ছেলেকে আহসানুল্লাহ হলে ডাকা হয়ছে। ইতিপূর্বেই আমাদের জানানো হয় এইখানে "বড়ভাই"দের ইশারায় সব চলে, ডিজাইন স্টুডিও পাশ করা থেকে শুরু করে চাকরি পাওয়া এমনকি বড় স্থপতি হওয়া সবকিছুতেই এই সিনিয়রের পদলেহনেই চলে যুগের পর যুগ ধরে। 

আহসানুল্লাহ হলের নিচতলায় উত্তর পাশের একটা রুম, ঢুকেই দেখি ভেতরে অন্তত ২৫-৩০ জন সিনিয়র, ২০০৫ থেকে ২০১২ ব্যাচের সবাই। এক কথা দু’কথায় সেদিন আমাদের এক বন্ধুকে উলঙ্গ করা হয়, অন্তর্বাস খুলে তাকে ট্রেসিং পেপার পরানো হয়, তারপর সেই ট্রেসিং পেপারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আমার ধারণা ছিল তথাকথিত র‍্যাগিংয়ে সর্বোচ্চ কিছু নোংরামো আচরণ করাবে, থ্রি ইডিয়টসের র‍্যাগিং দেখে ভাবসিলাম সর্বোচ্চ উপরের জামাকাপড় খোলাতে পারে। আমার বিন্দুমাত্র আইডিয়া ছিলনা এতটা হিংস্র আকার ধারণ করতে পারে এই র‍্যাগ। 

আমার আবছা মনে পরে, সেদিন আরেক বন্ধুকেও উলঙ্গ করে তার মাথায় প্যান্ট পড়ানো হয়, এক বন্ধু (এক্স-ক্যাডেট) এই টর্চারে ফিট হয়ে যায় ফেরার সময়। এক বন্ধুকে চার লিটার পানি গেলানো হয়, কোনোটায় ইচ্ছা করে করিনি আমরা, বাধ্য হয়েছি তাদের মারমুখী আচরণের কারণে। তারপর সেদিন রাত পাঁচটায় শেষ দশ মিনিটে আমাদের বলা হয় বুয়েট স্থাপত্য একটা পরিবার, এইখানে থাকতে হইলে এইভাবেই মিলে মিশে থাকতে হয়। 

২.
পরের কোনো এক শুক্রবার, আমি আর দুই বন্ধু ডিপার্টমেন্টে গেলাম, একেবারে ভীত সন্ত্রস্ত চলাফেরা, সারা ক্যাম্পাসে সেসব সিনিয়রদের ভয়ে আড়ষ্ট থাকতাম, ভাবলাম আজ তো শুক্রবার ক্যাম্পাসের কেউ অন্তত ডিপার্টমেন্টে আসবেনা। সোজা চলে গেলাম পাঁচতলার পেছনের সিড়িতে। তিনজন ভয়ে ভয়ে একটা সিগারেট ধরালাম, ৩০ সেকেন্ড পরেই পায়ের শব্দ শুনলাম, কেউ আসছে। আমরা পূর্বের এক্সপেরিয়েন্স এর কারণে ভয়ে তিনতলায় দৌঁড়ে পালালাম, সাথে থাকা সিগারেটের বাডটাও ফেললাম না, পাছে সেটা নিয়েও ধরা খাই। ১১ ব্যাচের স্টুডিওর চিপায় এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নেভানো সিগারেটটা বন্ধু আমার ছুড়ে ফেলল, সেটা ডাস্টবিনে ঢুকল না দুর্ভাগ্যবশত। সাথে সাথেই দেখলাম ১১ ব্যাচের টিকটিকি এসে হাজির। আমরা কিছুটা বুঝে ওঠার আগেই চলে আসলাম।

রাতে আমাদের ডাকা হল সেই টিকটিকির রুমে। আমি তখন ভয়াবহ অসুস্থ, জ্বর এবং কাশি, আমার আজ অবদি এত ভয়াবহ কাশি কখনো হয়নি। ১১টা থেকে অনবরত ফোন, আমি তখন ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে ওষুধ হাতে নিয়েই অগত্যা রওনা দিলাম তিতুমীর হলের ৪০০৫/৪০০৬ রুমের দিকে। আমি যখন রুমে ঢুকি তখন দেখি আমার দুই বন্ধু হাটু গেড়ে বসে বসে মার খাচ্ছে, তাদের শরীরের উপরের অংশে কাপড় নেই, গায়ে অশ্রাব্য গালাগালি মার্কার দিয়ে আঁকা। তারা গাঁজা সেবন করছেন আর আমাদের ট্রেসিং পেপারের রোল, ফুলের ঝাড়ুর নিচের অংশ দিয়ে পেটাচ্ছেন সিগারেট খেতে সন্দেহ করেছেন বলে। এবং অদ্ভুতভাবে আমার সেই ক্যাডেট বন্ধুটিও সেদিন সেখানে জড়িয়ে যায় এবং সেই সর্বোচ্চ নির্যাতনের শিকার হয়। এরপর কাহিনী অনুমেয়, তারপর রাত তিনটার দিকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় আরেক বড় ভাই এর রুমে। তিনি তখন ঘোর মদ্যপ, আমার নাকি মাইর ঠিকমতন পরে নাই। তো সেই ভাই আমাকে মোটা লাঠি দিয়ে আরো কিছুক্ষণ পেটান। 

আমার মনে আছে সেই রাতে আমি মেসে ফিরতে পারিনি ভয়ে (হলে উঠার কথা তখন কল্পনাতীত)। আমি বুয়েট শহীদ মিনারের দুই স্তম্ভের মাঝে শুয়ে রাত পার করলাম লুকিয়ে, ভোরবেলা বৃষ্টি নামে তখন। আমি ক্লাসের আগ পর্যন্ত ডিপার্টমেন্টের মিম আপুর বানানো রিয়েল লাইফ মডেলের ভেতরে মাচায় উঠে বাকি রাত কাটাই, এবং সকালে ক্লাসে যাই। আমাকে স্যার জিজ্ঞাসা করে গতদিনের কাজ করিনি কেন? আমার কাছে কোনো উত্তর ছিলনা। 

৩.
টার্মের মাঝামাঝি একটা সময়, ডিপার্টমেন্টের হোমড়া চোমড়া ব্যক্তিবর্গ আমাদের কজনকে দলে ভেরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তারপর নানান কাহিনী করে একটা ফাঁদ পাতেন। আমার উপর ব্যক্তিগতভাবে এলিগেশন দেয়া হয় আমি আমার মেসে মাদক, দেহব্যবসা ইত্যাদি পরিচালনা করি, তাই আমার ব্যাচের সব ছেলেকে ডাকা হয়, যাতে আমাকে তারা বয়কট করে। আহসানুল্লাহর তিনতলায় উত্তরপাশে সেদিন ঢুকে দেখি ০৯ এর ৭-৮ জন, ১০ ব্যাচের এক দুইজন, ১১ ব্যাচের ৩-৪ জন, ১২ ব্যাচের ১০-১২ জন মিলে রেডি। যথারীতি প্রচন্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমার এক বন্ধু আমাকে এবিউজ থেকে ডিফেন্ড করতে এগিয়ে আসে, এবং আরো কয়েকজন মৌখিকভাবে মানা করে। পরিনামে তাদের মাঘ মাসের শীতে বাথরুমে নিয়ে নিয়ে ঘাড় চিপে পানির নিচে ধরে রাখে, এবং মোটামুটি কম বেশি সবাই শারীরিক/মানসিকভাবে লাঞ্চিত হই। 

৪) 
১ম সেমিস্টারের শেষ ক্লাস, মোটামুটি গত ১৩-১৪ সপ্তাহ ধরেই প্রতি উইকে অন্তত এক থেকে দুবার এই ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। বাসায় ফোন দিয়ে কান্না করতাম। বলতাম না এসব। ওপাশ থেকে আম্মা বলতেন, "আব্বু তুমি চলে আসলে সমাজের কাছে কি বলে মুখ দেখাবো?" মিডলক্লাস ফ্যামিলির বড় ছেলের জন্য এই একটা বাক্যই এনাফ ছিল মাটি কামড়ে ধরে বাকি সময়টা পার করার জন্য। 

শেষ সপ্তাহে যেতে যেতে আমার বোঝা হয়ে যায় এই ডিপার্টমেন্ট কতটা নোংরা, সারারাত যারা আমাদের এইভাবে র‍্যাগিং করেন তারাই সকালবেলা আর্কসা (আর্কিটেকচার স্টুডেন্ট এসোশিয়েশন) এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফাঁপড় নেন, বয়ান দেন এই ডিপার্টমেন্ট একটা ফ্যামিলি, এইখানে কোনো রাজনীতি নাই। তারাই জুনিয়র টিচারদের সবচেয়ে কাছের মানুষ, আয়েশ করে গল্প ফাঁদেন গতকাল কোন মুরগীকে কি করসিলেন, কে কাকে সালাম দেয়নাই এইসব। 
উপরের দুটো ঘটনার বাইরে আরো অনেক কিছুই ঘটে যায়, আমাদের এক বন্ধুকে উলংগ করে পেটানো হয়, বুকে পাড়া দেয়া হয়, আমাদের ছেলেদের হলের এইসব বিভীষিকার কিছুটা আমাদের ব্যাচের মেয়েদের উপরেও এসে পরে। আমার এক বান্ধবী রিসেন্টলি মাস্টার্স শেষ করেছে প্রথম সারির ইউনিভার্সিটি থেকে, একদিন সিনিয়ররা ব্যাচ ধরে ডাকায় তাদের স্টুডিওতে। আমার সেই বান্ধবী সেদিন ভয়ে টেবিলের নিচে ঢুকে অঝোরে কাঁদতে থাকে ভয়ে, কতটা ভয় পেলে একটা মানুষ এমন করে? সোহরাওয়ার্দী হল ছিল সবচেয়ে বিভীষিকাময় এলাকা। সেইখানে একটা বিশেষ গ্রুপ পুরো ডিপার্টমেন্ট এর এইসব সিন্ডিকেট করে নিয়ন্ত্রণ করত। 

যা হোক শেষদিকের একটা ক্লাসে আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র ১২ ব্যাচের অতিউৎসাহী ব্যক্তি আমাদের এমনিই কথাবলার জন্য ডাকেন আমার আমলার নেতৃত্বে। আমার বিশিষ্ট আমলা ছিলেন রাজাকার গোত্রের, সারাদিন ভং ধরে রেখে সে সেই সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের কাছে খবর পাঠাইতো কাকে কেমনে সাইজ করা যায়। 

তো সেদিন শুধুমাত্রই ১২ ব্যাচের ৬-৭ জন ছিল। এই কথা বলা রূপ নেয় নোংরামোর আরেক লেভেলে। ভাষায় প্রকাশ করার মতন অংশটুকু হল, আমাদের সেদিন রাতে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে সারা গায়ে উলংগ করে নানান অশ্লীল শব্দ লেখা হয় (along with many other abuses)। দিনশেষে এইটাতেও উনারা এনাফ মজা পাচ্ছিলেন না। অতি উৎসাহী একজন আইডিয়া দিলেন মরিচ বাটা লাগায়ে দিলে কেমন হয়?

যেই কথা সেই কাজ। রাত একটার সময় দপ্তরিকে দিয়ে ডাইনিং এর দরজা খুলিয়ে কাঁচা মরিচ আনা হয়। এই এক বাটি মরিচ পাতলা স্লাইস করে কেটে আইকা গাম এর সাথে মিশিয়ে আমাদের ৬ জনের বগল, পেট তথা লোমসর্বস্ব সব যায়গায় মাখিয়ে দেয়া হয়। আমার মনে আছে কি পরিমাণ জ্বললে সেদিন আমাদের মনে হইসিল আমার চামড়ার সকল অনুভুতি নষ্ট হয়ে গেছে, my skin went numb that day. এইসব অত্যাচার করে রাত চারটার দিকে ডিমভাজা পরোটা খাইয়ে we are a family বলে আমাদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। 

৪.
এইটুক পর্যন্ত হলেও না আমার ব্যাচে ড্রপয়াউট এর সংখ্যা এত হত না, আমার জানামতে রিসেন্ট হিস্ট্রিতে সর্বোচ্চ। (আমরা ৫৫ জন ঢুকেছিলাম, থিসিস একসাথে করতে পেরেছিলাম আমরা ৩৯ জন)। প্রথমদিকের পরীক্ষা বুয়েটের, খুব সম্ভবত প্রথম পরীক্ষা। এর দুদিন আগে সিনিয়র ব্যাচরা ডেকে বললেন কালকেই ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে আর সাথে পিঠা উৎসব। একদিনের নোটিশ এ এমন একটা প্রোগ্রাম এর আয়োজন করা সম্ভব না তাও বুয়েট টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার একদিন আগে। আর শুধু আয়োজন হলে তো হইতই, সে এক বিশাল আড়ম্ভর, আট দশ ব্যাচের সিনিয়রদের দাওয়াত করে এনে এক পাচটাকার পিঠা খাওয়াতে হবে, নেচে কুঁদে তাদের বিনোদন দিতে হবে, জ্বী হুজুর বলে দৌড়ায়ে তাদের ম্যাচের কাঠি এনে দিতে হবে আরো কত কিছু।

কিন্তু ওই "do it now, we are a family" এর প্রেশারে পরে আমরা প্রোগ্রামটা নামাই। প্রোগ্রাম শেষ করে পড়তে বসতে গিয়ে দেখি গিয়াসউদ্দিন এর ১২০০ পৃষ্ঠার বই যার একটা পাতাও এই আদর যত্নের মধ্যে থেকে আমার ধরা হয়নাই, এর মধ্যেই শুনি আমাদের বন্ধুবান্ধবদেরকে হল থেকে সিনিয়ররা বের করে দিসেন তুচ্ছ কারণে, রাতের বেলা সবাই মেসে এসে হাজির। ভোর পর্যন্ত ট্রাই করলাম পড়ার। নিশ্চিত ফেল জেনে পরীক্ষার হলে আমি গেলাম, অনেকেই যেতে পারল না। প্রশ্ন দেখে আক্কেল গুড়ুম, ৩০ মিনিটের মাথায় হড়হড় করে খাতা ভরে বমি করলাম মেন্টাল প্রেশারে, পরের ৩০ মিনিট সেটা পরিষ্কার করে লেখার ট্রাই করলাম, তারপর আবার বমি করলাম খাতার উপর। তারপর বেরিয়ে আসলাম, এসে দেখি বন্ধুবান্ধব গোল হয়ে বসে তাস খেলছে। সেদিনই বুঝেছিলাম আমার পড়ালেখাটা বুঝি গোল্লায় গেল। 

এই ফিজিক্স পরীক্ষা পরবর্তীতে আমার জন্য ট্রমার মতন কাজ করেছে। আমি এরপর পাচবার এটেম্পট নেই পরীক্ষাটা দেয়ার, কিন্তু প্রতিবার শেষ মুহুর্তে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়, শেষবার পাশ করি। 

উপরের চারটা ঘটনা হল সারসংক্ষেপ, এর বাইরে চড়ুইভাতির আগের রাত, নবীনবরণ এবং অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনা মোটামুটি আমাদের একাডেমিক লাইফটা হেল করে দেয়। প্রতি বুধবার রাত আমাদের নিশ্চিতভাবেই কাটতো দুপায়ে দাঁড়িয়ে সারারাত র‍্যাগিং এর শিকার হয়ে, পান থেকে চুন খসলেই বিচার। এর বাইরে আর্কির ১ম সেমিস্টারের কারিকুলামে জীবন শেষ। কতবার যে আমরা ক্লাস চলাকালে স্টুডিও এর ফ্লোরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছি, আমার ১৭ কেজি ওজন কমে গেছিল এই একটা সেমিস্টারে। 

আপনারা যদি মনে করেন এইখানেই শেষ ছিল সব তা নয়। এইসব এবিউজ মোটামুটি আরো ৩-৪ বছর চলে নানানভাবে। সেসব স্ট্রাগল নিয়ে আরেকদিন আলাপ দেয়া যাবে। এইসব ঘটনা একটা নির্দিষ্ট সার্কেলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে, একটা নির্দিষ্ট অফিস (আর্কিটেকচার ফার্ম) কে কেন্দ্র করে এইসব মিথ ছড়ায়, একটা একটা করে এসবের পেছনের গডফাদাররা সামনে আসতে থাকে। 

খালি শুকায় না আমাদের ঘা, এইসব ট্রমাটিক মেন্টাল আর ফিজিকাল এবিউজ আমাকে পরবর্তীতে এমন একটা পথে ঠেলে দেয় যা আমি কখনোই চাইনি, জীবনের পথচলার প্রতিটা পদক্ষেপে এইসব এক্সপেরিয়েন্সের প্রচ্ছন্ন প্রভাব led me to the worst possible decisions i could take. 

ফার্স্ট ইয়ারের এইসব নির্যাতন পার করে এসে পরবর্তীতে নানানভাবে হুমকি দেয়া হয়, ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়া হবে (they tried their level best), ডিপার্টমেন্ট থেকে বের করে দেয়া হবে, চাকরি পাব না, কাজ পাব না, শিখতে পারব না ব্লা ব্লা ব্লা। 

looking back, i have done quite well considering the conditions and this is only the start. On the other hand এই চাটার লাইনে থাকা মানুষগুলোর স্ট্রাগলগুলো বেশ এঞ্জয় করেছি। কথায় আছে না পাপ বাপকেও ছাড়েনা। এদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং প্রফেশনাল লাইফ হেল হয়ে গেছে, যেসব সিনিয়রের পদলেহন করে এনারা নিজেদের সেমি হেডম ভাবতেন, এদের স্ট্রাগল দেখে এখন জুনিয়ররা প্রকাশ্য মজা নিয়ে নেয়।

And this is only the beginning, মা বাবারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে পোলাপানকে বুয়েটে স্থাপত্য পড়তে পাঠায়, এসব জানোয়ারের কারণে অনেক পরিবারের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। এই স্বপ্ন ভাঙ্গার মূল্য তাদের দিতেই হবে। কর্মফল এদের পিছু ছাড়বেনা। 

আমরা এজ আ ব্যাচ এই কালচারটাকে যথাসাধ্য দমন করতে চেষ্টা করেছি, এবং জুনিয়র ব্যাচগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় এই সমস্যাগুলো অনেকাংশেই সমাধান হয়ে গেছে। পেছনের ইন্ধনদাতা তথাকতিত এইসব গডফাদারদের নামটা নাই বা নিলাম, তবে ০৯ এর মইন প্রত্যয় গ্রুপ, ১০ এর যুবায়ের গ্রুপ, ১১ এর একটা সার্টেইন গ্রুপ, ১২ এর আমার স্বয়ং আমলা সাইফ, সানিম গং এর মধ্যে অন্যতম। 

অদ্ভুতভাবে এদের ভেতরে কোনো প্রকারের অনুশোচনার লেশমাত্র দেখিনাই, আবরার হত্যাকান্ডের পরে এরা যেইরকম ভন্ডামো দেখাইসে তা হিন্দি সিরিয়ালকেও হার মানায়। এত ইগো আপনাদের একটাবার পাবলিকলি ক্ষমা চাইতে বাঁধে? আমরা কেউ এইসব ভুলিনাই, নামগুলোও ভুলিনাই। এখনো সময় আছে, পাবলিকলি ক্ষমা চান। লং রানে জুতার বারি কিন্তু একটাও মাটিতে পড়বেনা। ভেঞ্জেন্স খুব খারাপ জিনিস। দিন অনেক বদলায়ে গেছে, পরম্পরার নামে এইসব ক্যান্সারের দিন শেষ। 

এরকম এবিউসিভ কালচারে থেকে অনেকদিন আমার ধারণা ছিল এইটাই বুঝি নরমাল, আমিও অনেক সময় হয়ত অনেক জুনিওর এর সাথে এমন কিছু করেছি যাতে তারা মনে কষ্ট পেয়েছে। আমি নিজে এমন কিছু করে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। বি.দ্র.- ঘটনার সময়কাল ২০১৪-২০১৫ সাল। (লেখাটি ফেসবুক থেকে নেওয়া)

লেখক: বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী


সর্বশেষ সংবাদ