আত্মহত্যার পর হাফেজি মাদ্রাসা ছাত্রের পায়ুপথে ‘যৌন নিপীড়নের চিহ্ন’

কামরাঙ্গীরচর থানা
কামরাঙ্গীরচর থানা  © ফাইল ছবি

রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থেকে শরিফুল ইসলাম (১৪) নামের এক হাফেজি মাদ্রাসাছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব রসুলপুরের একটি বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। শরিফুল কামরাঙ্গীর চরে নুরিয়া মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ত, সেখানেই থাকত।

গত শুক্রবার হাফেজি শেষ করে পাগড়ি পায় সে। এরপর ছুটি পেয়ে ওইদিনই পূর্ব রসুলপুরের বাসায় ফেরে। সেখানে একটি ভবনের ছয়তলায় ভাড়া বাসায় তার পরিবারের সদস্যরা থাকে। গতকাল রাতে তাকে ঘরের ভেতর ঝুলন্ত অবস্থায় পায় তারা। রাত পৌনে ২টায় কামরাঙ্গীর চর থানা পুলিশ শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাসার সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল তার। সোমবার তার মাদ্রাসায় ফেরার কথা ছিল। তবে সেদিন সে তার বাবাকে জানায়, সে আরও একদিন বাসায় থাকবে। সোমবার রাতে সে তার দাদার হাত-পা ধুইয়ে দেয়। এরপর পাশের ঘরে ঢুকে সিটকিনি আটকে দেয়।

“পরিবারের লোকেরা ভেবেছে হয়ত সে মায়ের মোবাইল নিয়ে গেমস খেলছে। অনেকক্ষণ দরজা না খোলায় তারা কাঠের দরজার নিচের ফাঁকা দিয়ে ভিডিও অন করে একটি মোবাইল ঢুকিয়ে দেয়। পরে সুতা দিয়ে মোবাইল টান দিয়ে বাইরে এনে দেখে ফ্যানের সঙ্গে মায়ের ওড়না দিয়ে ঝুলছে ছেলেটি।”

পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে নামিয়ে হাসপাতালে নেয়। লাশের সুরতহাল করার সময় পায়ুপথে ‘অস্বাভাবিকতা’ দেখে পুলিশের ধারণা হয়, শিশুটি হয়ত যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। 

যৌন নিপীড়নের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ওসি বলেন, আমরা সুরতহালে যা পেয়েছি তা উল্লেখ করেছি। আরও কনফার্ম হওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। আমরা আপাতত একটা অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছি। কোন প্রকার নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন তথ্য-প্রমাণ পেলে পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুরতহাল প্রতিবেদনের যে ছকে যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের লক্ষণের বর্ণনা করতে বলা হয়, সেখানে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী এসআই আশরাফুল হক লিখেছেন, তার মলদ্বার দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় যে ভিকটিম ইতিপূর্বে মলদ্বার দিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কাউকে কিছু বলতে না পারায় নিজের সাথে অভিমান করে সে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

শরিফুলের বাবা মাছের ব্যবসা করেন। তার তিন ছেলের মধ্যে আত্মাহুতি দেওয়া শিশুটি ছিল সবার ছোট। তার ভাই শাহীন হাসান বলেন, শরিফুল হিফজ পাস করে তিন দিনের ছুটিতে বাড়িতে আসে। তিন দিন শেষ হলে বাবা তাকে মাদ্রাসা যেতে বলেন। কিন্তু সে মাদ্রাসায় যেতে চায়নি। রাতে একটি কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। রাত ১১টার দিকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।


সর্বশেষ সংবাদ