বুক রিভিউ: অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী
- শাহজাহান শাহীন
- প্রকাশ: ১০ মে ২০২০, ০৮:৪৯ PM , আপডেট: ১০ মে ২০২০, ০৮:৪৯ PM
জনপ্রিয় লেখক ও ঔপন্যাসিক আহমদ ছফার আত্মজৈবনিক উপন্যাস হচ্ছে ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী। ব্যক্তিগত জীবনে লেখক অবিবাহিত হলেও কিছু নারীর সাথে তাঁর প্রণয়সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেইসব সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই তিনি এই উপন্যাসের কাহিনী দাঁড় করিয়েছেন। অনেক সাহিত্যিকের মতে, মীর মোশাররফ হোসেন এবং কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন ছফা।
সোহিনী নামক এক নারী চরিত্রের রূপের বর্ণনায় সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কি দারুণ একটা ধারাবাহিকতা। চরিত্র চিত্রায়ন করেছে সমাজের ঊর্ধ্বে , চরিত্রের রূপায়ণ সব কিছু মিলে অসাধারণ বলা যায়।সোহিনীর রূপ লাবণ্য ও মাধুর্য বর্ণনায় তাকে দেয়ার মত কোন নাম পেতে রীতিমতো হাঁপাতে হল।
সোহিনী জীবনে আসারা আগেও নারী জাতির যে একটা ধারাবাহিক আগমন ছিল তার বর্ণনায় প্রথমে আসে দুরদানা আফরাসিয়াব। দুরদানা দেখতে যেমন পুরুষালি ছিল তেমনি সমাজের চোখে সেই ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।তাছাড়া ষাট-সত্তরের দশকে শার্ট প্যান্ট পরে কোন মেয়ে ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে কিংবা ছুরি বের করে যাকে তাকে হুমকি দিচ্ছে তা কল্পনা করা যায়??
সব চেয়ে মজার কথা হচ্ছে অনেক মেয়েও দুরদানার প্রেমে পড়েছিল পুরুষ মনে করে। তা লেখক তখনই বুঝতে পারছিলেন দুরদানার কোন এক রুমমেট এসে যখন হুমকি দিয়ে রীতিমতো স্ট্যাম্পে সাক্ষর নিয়ে গেলো যেনো দুরদানার সাথে আর না মিশে এবং কোন সম্পর্ক না রাখে।মাঝে মাঝে লেখকের সন্দেহ লাগত দুরদানা, আসলে কি মেয়ে? তবে সমাজের বিচিত্র দৃশ্যের আড়ালেও এক জন যোদ্ধা ছিলেন দুরদানা সেই কথা কি তখনকার সমাজের অবুঝ মানুষ বুঝবে কোন দিন?
নানা চড়াই-উতরাই, আর নানা কলংক নিয়ে দুরদানার অধ্যায় শেষ হলে ও উপন্যাসের শেষ অবধি বেঁচে ছিলেন শামারোখ। শামারোখ ছিল অসম্ভব ধরনের সুন্দরী।পুরোনাম কন্যা শামারোখ।পাকিস্তানে পড়াশোনা করে, লেকচার হিসেবে কর্মজীবন শুরু হলেও লন্ডনের হাওয়া বাতাস তার জীবনে বিশাল তফাৎ ছিল সমাজের চোখে।তাই সব কিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও তাই ঢাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপকসহ সবাই মিলে থাকে জয়েন করতে দিলেন না ঢাবি তে।
সবাই জানে এই রকম সুন্দরী মহিলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে খতরনাক অবস্থা হবে।তাই যেকোনো উপায়ে তা প্রত্যাখ্যানের ব্যবস্থা করলেন।সেই সূত্রে লেখকের সাথে ঘনিষ্ঠতা।নানা কুৎসা রটনা, শিক্ষক সমাজের রাজনীতি, নারীজাতির প্রতি লোভাতুর দৃষ্টি সব কিছু অনেক সুন্দর করেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
সবাই এক দিকে আর লেখক একদিকে।যেনো বল্মম যুদ্ধের চাইতে কোন অংশেই কম ছিল না।সব কিছু ছেড়ে যখন একদিন শামারোখ প্রস্তাব দিল বিয়ে করতে তখন মনে হয়েছিল সব কিছু পেয়েও রেখে দেওয়াই ভালো।পৃথিবীতে কিছু যিনি সব পেলেই যে সব কিছু হয়ে যায় বিষয়টি তা না। সৎপাত্র রাখার মত কোন সঠিক ব্যবস্থাও থাকতে হই।
আগেই বলে রাখি শামারোখ ছিল অসাধারণ সুন্দরী যেটা লেখক সমাজ তার রূপ লাবণ্যের বর্ণনা সাহিত্যেও দিত।তবে এখানে একটু বলে রাখি শামারোখের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল, বর্তমান বয়স চল্লিশের কোটায়। তার পরও মনে হবে বিশ বাইশ বচ্ছরের এক্টা কিশোরী। অনেক বুড়া বুড়া প্রফেসর ও উন্মাদ ছিল তাকে কাছে পেতে।সবাই জেসাল ফিল করতে যখন বেকার টাইপের একজন লেখকের সাথে তার চলাফেরা আর ঘনিষ্ঠতা।
সবাই তার উপরের রূপ লাবণ্য দেখলেও লেখক দেখছিলে এক অসহায় মহিলাকে একজন সত্যিকার যোদ্ধাকে।তাই সব কিছু পেয়েও তার অসহায়ত্ব কে পুঁজি না করে তাকে তার সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে দিয়ে বীরের মত আসলেন।নিজেই ফুল কিনে নিজেই নিজের গলায় পড়িয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে জয় উদযাপনের যে একটা পৈশাচিক আনন্দ পেলেন তা নোংরা রাজনীতিতে মগ্ন মানুষ গুলো কেমন করে অনুভব করবে।শেষ পর্যন্ত শামারোখ কাছের একজনকে বিয়ে করেছিলেন।হইতো লেখককে না পাওয়ার তীব্র বেদনায় জ্বলে জ্বলে পুড়ে ছারখার থেকে রক্ষা পেতেই এক কাজ করছিল।
‘নারী আসলে যা, তার বদলে যখন সে অন্যকিছুর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার আকর্ষণ করার শক্তি হাজার গুণ বেড়ে যায়।’ প্রথম দিকে প্রেমের দর্শন নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বিশ্লেষণ হয়েছে। এখানে পাঠকের খানিকটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটলেও সেটা অযৌক্তিক হবেনা।
সোহিনী কে এখানেই রেখে দিলেন।কেন যে উপন্যাসের ইতি টানলে না সেটা লেখক ভালো জানে তবে আমার মত নব্য পাঠক সমাজ পরবর্তী পর্ব না পাওয়ার বেদনার কথা কেমন করে বুঝাবে??