‘মায়ের দোয়ায় যদি কেউ বিসিএস ক্যাডার হয় তবে সেটা আমি হবো’

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ৪ বছর ‘অনলি মি’ করে রেখেছিলেন সাচ্চু

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু
মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু  © টিডিসি ফটো

গত ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে ৪৩তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু। ওইদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। সেখানে লেখেন, “আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আর মায়ের দোয়ায় ৪৩তম বিসিএসে সমবায় ক্যাডারে সহকারী নিবন্ধক হিসেবে গেজেটেড হলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া।” সেই পোস্টে প্রায় ৪ বছর আগে ২০২১ সালে ২৪ নভেম্বরের আরেকটি পোস্ট রি-শেয়ার করেন সাচ্চু। সেই পোস্টে লেখা ছিল, “মায়ের দোয়ায় যদি কেউ ক্যাডার হয় তবে সেটা আমি হবো, নইলে মায়ের দোয়া থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে।”

এই বিসিএসের প্রিলি, লিখিত, ভাইভার পর চূড়ান্ত ফলে উত্তীর্ণ— এমন সুখবর শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাতে পারেননি বছরের পর বছর। কারণ তিনি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ভয় ছিল চূড়ান্ত গেজেট থেকে বাদ পড়ার। অবশেষে চূড়ান্ত গেজেট হওয়ার দিনই সবাইকে সুখবরটি জানান তিনি। বিসিএসসের প্রস্তুতি-জয় তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের— ঢাবি প্রতিনিধি মুহাইমিনুল ইসলাম

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ৪৩তম বিসিএসে আপনি সমবায় ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাই?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার পর মনে হয়েছিল একটা ক্যাডার পেতে পারি। সেখানে যখন আশাভঙ্গ হলো তখন ৪৩তম নিয়ে আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। যখ দেখলাম একটা ক্যাডার আসছে তখন প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি হওয়ায় একটু বেশিই আনন্দিত। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মায়ের দোয়ায় যদি কেউ বিসিএস ক্যাডার হয় তবে সেটা আমি হবো— স্ট্যাটাসটির রহস্য কী?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: সেই স্ট্যাটাসটি দিয়ে চার বছর অনলি মি করে ছিলাম। কারণ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে শেখ মুজিবুর রহমান হলের জিএস প্রার্থী ছিলাম আমি। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিসিএসের ফল নিয়ে কোনো তথ্য পাবলিকলি শেয়ার করিনি। তবে পরিবার কিংবা কাছের সহপাঠীরা বিষয়টি জানতেন। এখন তো নতুন বাংলাদেশ সঙ্গে গেজেট প্রকাশ, তাই মনে হলো সেটি আবার রি-শেয়ার দেই। তাই পোস্টটি দিয়েছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশব, প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চাই?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় আমার জন্ম, শৈশব সেই মফস্বলেই কেটেছে। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল মায়ের হাতে, এরপর রাঁধা দিদি ছিলেন প্রথম শিক্ষাগুরু। বাসা থেকে কাছেই ছিল বাউফল দাসপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানীয়ভাবে বকুলতলা স্কুল নামে পরিচিত। একদিন সকালে মা নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো। এভাবেই অতিবাহিত হয়েছে শৈশবজীবন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে চাই?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঢাকা চলে আসলাম, মাধ্যমিক শুরু করলাম মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই এসএসসি পাস করি ২০১২ সালে। এরপর ২০১৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষা জীবনে আপনার এ যাত্রাটা কেমন ছিল, কেমন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: মোটামুটি স্মুথই ছিল। তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরি বাজারটা কেমন?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: সত্যি বলতে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির বাজারটা একটু কঠিন। বিষয়ভিত্তিক চাকরি তেমন একটা নেই বললেই চলে তাই সবার সাথে প্রতিযোগিতায় চাকরি পাওয়াটা একটু কঠিনই হয়ে যায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বিসিএসের জার্নিটা শুরু হয় কীভাবে?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: বিসিএসের প্রতি একটা ঝোঁক স্কুলজীবন থেকেই ছিল, এরপর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন একটা ইচ্ছা ছিল না চাকরি করার। কিন্তু মাস্টার্স পড়াকালীন ফুফাতো ভাই মাইনুল ভাইয়ের জোরাজুরিতে সিদ্ধান্ত নেই বিসিএস দেবো ভালোভাবে। মাস্টার্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় বিসিএসের দীর্ঘ যাত্রা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস প্রস্তুতিতে আপনি কেমন কৌশলী ছিলেন?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: কৌশলী হওয়া ছাড়া চূড়ান্তভাবে বিসিএস উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে তেমন কোনো বিশেষ কৌশল আমার ছিল না। প্রিলি পাসের জন্য একটা চিন্তা ছিল, এটাকে কৌশল বলা যাবে কিনা জানি না, যে বিষয়ে বেসিক ভালো সে বিষয়ে আরও ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ করা আর দুর্বল জায়গায় তুলনামূলক কম সময় দেয়া যাতে এভারেজ একটা নাম্বার পাওয়া যায়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন যারা বিসিএস দিতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন? তারা কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: প্রথমত, বিসিএস একটা দীর্ঘমেয়াদি যাত্রা, এ যাত্রায় প্রায় প্রার্থীকে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় সবার আগে। আগে থেকে যদি এটা বিবেচনায় না নিয়ে, মানসিকভাবে প্রস্তুত না হয়ে যদি কেউ নেমে পড়ে তবে হতাশ হওয়া কিংবা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সুতরাং তাকে আগে থেকেই চিন্তা করতে হবে এগুলো নিয়ে।

দ্বিতীয়ত, বিদ্যমান বাস্তবতায় একজন প্রার্থীর প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি স্কুলিং ভালো না হলে তার জন্য বিসিএস যাত্রা বিষময় লাগে। যেকোনো মৌলিক বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানে ঘাটতি থাকলে জেনারেল ক্যাডার প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক কমে যায় সেটাও চিন্তা করতে হবে। নতুনদের জন্য পরামর্শ বিসিএস সার্কুলার পুরোটা পড়বেন, প্রিলি এবং রিটেন সিলেবাস ভালোভাবে দেখবেন আর বিগত বিসিএসের প্রশ্নগুলোতে চোখ বুলাবেন। এরপর সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে শুরু করবেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস রিটেনের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: রিটেনই বিসিএসের মূল পরীক্ষা তাই রিটেনের প্রস্তুতি হওয়া উচিত অধিক গোছানো কিন্তু আমরা অধিকাংশ এখানেই ভুল করি। রিটেনের যেসব টপিক প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় থাকে সেগুলোর প্রস্তুতি প্রিলিমিনারির সাথেই নেয়া উচিত। সবার আগে যে ধারণাটা পরিবর্তন করা উচিত সেটা হচ্ছে 'প্রিলি পাসের পর রিটেন পড়বো'। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভাইভা প্রস্তুতি কেমন ছিল?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: ভাইভার ব্যাপারে আমি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম তাই প্রস্তুতি নেয়া হয়নি ভালোভাবে। কিন্তু ভালো প্রস্তুতি নেয়া অবশ্যই উচিত। ভাইভা একটা বড় চেঞ্জিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনের বিষয়ে কিছু জানতে চাই? 

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: সুখের দিন এত বেশি যে কোনটা যে সব থেকে সুখের দিন সেটা বলা বেশ কঠিন। আমাকে একবার একটা আবাসিক স্কুলে দেয়া হয়েছিলো, তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। মাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো, কান্নাকাটি করতাম খুব। মাস দেড়েক পর আমাকে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয়। দিনটি ছিল ২০০৬ সালের ২৫ মার্চ, আমার মনে হয় আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি পড়াশোনা চলাকালীন কোনো সাংস্কৃতিক বা সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন কিনা?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বলতে বিতর্ক এবং আবৃত্তি করতাম। এখনও কিছুটা সম্পৃক্ত আছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের সাথে যুক্ত ছিলাম। বিতর্ক এবং আবৃত্তির সুবাদে মঞ্চে, মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ানো হয়েছে বহুবার যে অভিজ্ঞতা ভাইভায় বেশ কাজে লেগেছে। এছাড়া বিতর্ক এবং কবিতা থেকে আহরিত জ্ঞান রিটেনের খাতাকে কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ করেছে বলে আমার বিশ্বাস।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাই?

মো. শাহনেওয়াজ সাচ্চু: ভবিষ্যতে পরিবার নিয়ে একটা সহজ জীবন কাটাতে চাই, জীবন যেন খুব বেশি জটিল না হয় সে চেষ্টা থাকবে। আর ক্যারিয়ারের কথা বললে বিদেশে একটা মাস্টার্স; আর সম্ভব হলে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। ‘দুঃখ জয়ের মন্ত্র’ হিসেবে সমবায়কে সারা বিশ্বে আরও পরিচিত এবং জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাই। সারাজীবন যেন আমার কথা এবং কাজের দ্বারা মানুষের উপকার হয়, মানুষের মুখে হাসি ফুটে ওঠে এটাই লক্ষ্য আপাতত।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence