পবিপ্রবি

ছোট ক্যাম্পাস থেকে ৪১তম বিসিএসে বড় সাফল্য

এ ছয়জন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে ৪১তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন
এ ছয়জন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে ৪১তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন  © টিডিসি ফটো

শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠের শেষ হয় ক্যারিয়ার দিয়ে। চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকা লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীদের কাছে একবিংশ শতাব্দীর বাংলায় চাকরি যেন এক সোনায় মোড়ানো হরিণ। আর সে চাকরিই যদি হয় স্বপ্নের ‘বিসিএস’ তবে তা যেন সৃষ্টি করে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের এক অপার সম্ভাবনার।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) থেকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। ফার্স্ট গেট থেকে সেকেন্ড গেট, নীল কমল থেকে লাল কমল কিংবা বকুলতলা থেকে বিচ্ছেদ মোড়, কেমন ছিলো পবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের বিসিএস যাত্রা?

ছোট ক্যাম্পাস থেকে বড় সাফল্য
আমি ২০১৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করি। এরপরই আমি ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাই। আমি যখন অনার্সে অধ্যয়নরত ছিলাম তখন আমরা ব্যাচমেটরা মিলে একটা গ্রুপ করি সেখান থেকেই মূলত এই জার্নি শুরু।

এরপর অনার্সের শেষের দিকে আমরা কয়েকটা ফ্রেন্ড মিলে কোচিংয়ে ভর্তি হই। ক্যাম্পাস থেকে কোচিংয়ে যেতে ১ ঘণ্টার বেশি লাগতো। অনার্স শেষ করে বরিশাল থেকে পড়াশোনা শুরু করি। প্রথম দিকের চাকরির পরীক্ষাগুলোতে নাকানিচুবানি খেতাম। একসময় খুব হতাশায় ছিলাম। বাবা এতো কষ্ট করে টাকা পাঠায় কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার করতে পারছি না।

সংকল্প নিয়েছিলাম যে একসময় এমন একটা প্রিপারেশন নেবো যাতে প্রিলির কাট মার্ক নিয়ে টেনশন করতে না হয়। তারপর করোনার ধাক্কা আসে। তখন আসে জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। তখনও যতদিন পেরেছি বরিশাল ছিলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে বাসায় চলে যেতে বাধ্য হই। তখন আমি রাত ৮টায় পড়তে বসতাম আর বেশিরভাগ দিনেই ভোরে ঘুমাতে যেতাম।

এভাবে একটা সময় প্রিলিমিনারিতে এমন প্রিপারেশন হয়ে যায়, যার ফলে প্রতিটা চাকরির পরীক্ষায় টিকতে থাকি। এ পর্যন্ত আমি মোট ৮টা ভাইভা দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। যার মধ্যে ৬টায় ভাইভা দিয়ে ৫টা চাকরি পেয়েছি। ৪১তম বিসিএস ছিলো আমার স্বপ্নের পঞ্চম চাকরি।

আজকের এই সফলতার পেছনে বাবা-মায়ের পাশাপাশি আমার সহধর্মিণীর অবদানও রয়েছে। সে আমাকে সবসময়ই সাপোর্ট করতো। সবার উদ্দেশ্যে এটাই বলবো, কখনো হাল ছাড়বেন না, কখনো পিছিয়ে আসবেন না। কেউ পারেনি, আমিও পারবো না, এটা ভাববেন না। আমিই উদাহরণ হবো, এটা মনে করবেন। চেষ্টা করবেন আর সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আপনাকে নিরাশ করবেন না। নিশ্চয়ই দেখা হবে আবার কোনো বিজয়ে, হয়তো আপনার বা আমার। ধন্যবাদ, সকলের দোয়া প্রার্থী।

অপু মন্ডল
সহকারী পুলিশ সুপার (সুপারিশপ্রাপ্ত)
৪১তম বিসিএস (পুলিশ) 

সাফল্যের জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রম, কৌশল ও মেধার সমন্বয়
অনার্সে থাকাকালীন আমি চাকরির জন্য আলাদাভাবে কোনো প্রস্তুতি নেইনি, অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় গুরুত্ব দিয়েছিলাম। যা পরবর্তীতে টেকনিক্যাল ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভাতে অনেক কাজে দিয়েছিল। এ সময়ে আমি নিয়মিত পত্রিকা পড়েছি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস-ইতিহাস গ্রন্থ, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়েছি, নিজের সীমিত জ্ঞানকে বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।

এছাড়া লেখালেখি, বক্তৃতা, বিতর্কসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম। যা চাকুরির পরীক্ষায় পরবর্তীতে আমার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছিল। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ—এটাই আমার মূলমন্ত্র ছিল। তাই স্নাতক সম্পন্নের পর চাকরির প্রস্তুতি শুরু করেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়েছি।

বিসিএস পরীক্ষা হলো ধৈর্য, পরিশ্রম, কৌশল ও মেধার সমন্বয়। বিসিএসের প্রিলিমিনারি ধাপকে আমার সব থেকে কঠিন মনে হয়। প্রিলিমিনারি যে যত সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে বিস্তারিত ও বুঝে বুঝে পড়ে, তার সফলতার হার তত বেশি।

এমনকি বিস্তারিত পড়া থাকলে লিখিত পরীক্ষার বিরাট সিলেবাসও অর্ধেক হয়ে আসে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো মার্কস ক্যাডার নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। সম্পূর্ণ উত্তর করা ও সময়ের মধ্যে শেষ করাই বিরাট চ্যালেঞ্জ। সাধারণ জ্ঞানের উপর ভালো দক্ষতা ও নিয়মিত গণিত-ইংরেজি প্র্যাকটিস আপনাকে আর দশজনের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।

অনেকেই মনে করেন, ভাইভার জন্য হয়ত কিছু পড়া লাগে না। এটা ঠিক নয়। ভাইভা হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপূর্ণ সমন্বয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা সম্পন্নের পর এক বছর ধরে ভাইভার প্রস্তুতি নিয়েছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবকে পড়াশোনার কাজে লাগিয়েছি, মক ভাইভা দিয়েছি ও ইংলিশ স্পিকিং প্র্যাকটিস করেছি। ভাইভার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিই হয়ত আমার প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছে।

আমার এই সাফল্য প্রাপ্তিতে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়া আমার যোগ্যতার উপর বিশ্বাস রাখার জন্য আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, আইনজীবী শেখ হারুন অর রশিদ, মাতা সহকারী অধ্যাপক শাহানা পারভীন, বোন সানিয়া তাসমিন লিয়া, বোন জামাই মোস্তাফিজুর রহমান, প্রিয় বন্ধু ও সার্বক্ষণিক সঙ্গী আপন, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষকবৃন্দ, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্খীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

প্রজাতন্ত্রের একজন ক্ষুদ্র কর্মচারী হিসাবে যেন সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারি সেই দোয়াপ্রার্থী।

শেখ নাইমুর রশিদ লিখন 
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (সুপারিশপ্রাপ্ত)
৪১তম বিসিএস (কৃষি)

গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি
ধৈর্য্য ও সুপরিকল্পিত পরিশ্রম আমার বিসিএসে সফলতার মূলমন্ত্র। আমি প্রস্তুতির শুরুতে বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত প্রশ্ন বিশ্লেষণে সময় দেই। এই দীর্ঘ পথে নিজেকে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়মিত পড়ার টেবিলের সাথে বন্ধুত্ব করেছি। এক সপ্তাহ বা পনের দিনের টার্গেট করে পড়া শেষ করতাম। যেহেতু লিখিত পরীক্ষা ক্যাডার হওয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে তাই প্রিলির সময় থেকেই গণিত, ইংরেজি ভোকাবুলারি ও পত্রিকার সম্পাদকীয় অনুবাদ নিয়মিত করতাম।

ইউটিউবে সমসাময়িক বিষয়ের খবর ও টকশো দেখার অভ্যাস গড়ে তুলি। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও বিশ্ব ভূ-রাজনীতির জ্ঞানকে বিসিএস লিখিতের অন্যতম স্তম্ভ মনে করে আত্মস্থ করা শুরু করি। যেখানে নম্বর ভালো তোলা যায় (গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান) সেখানে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।

প্রিলিমিনারিতে ভুল উত্তরের ফাঁদে না পড়ে লিখিততে সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও ভাইভাতে আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশে আমি সফল হয়েছি। সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া, আমার বাবা-মা ও সহধর্মিণীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। সেইসাথে সকল শিক্ষক, বন্ধু -বান্ধবী, ভাই-বোন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাকে সবসময় সাহস ও সমর্থন দিয়েছে।

মো. সাব্বির হোসেন 
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা 
৪১তম বিসিএস (মৎস্য)

বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছি
আমার জন্মস্থান বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামে। ছাত্র জীবনে কখনোই খুব বেশি ভালো ছাত্র ছিলাম না। যদিও হাইস্কুলে এক বনের এক রাজা হিসেবেই ছিলাম। গ্রামের স্কুল থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করি। এরপর বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২-১৩ সেশনে কৃষিতে ভর্তি হই।

পরবর্তীতে অনার্স শেষ হলে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যানত্ত্বে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। এবার আসি বিসিএস জার্নি নিয়ে। অনার্সের শেষ দিকে মাঝে মধ্যে অল্প অল্প সাধারণ জ্ঞান পড়তাম। তবে সেটা নিয়মিত কিংবা সিরিয়াস ছিলাম না। পরবর্তীতে ব্যর্থতা দিয়ে জার্নিটা শুরু হয়।

পরপর দুটি বিসিএসে প্রিলিমিনারি ফেল, আর এই ব্যর্থতার জন্য নিজেই অনেকটা দায়ী ছিলাম। মাস্টার্সে থাকা অবস্থায় বিসিএসের থেকে বিদেশি উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও পাবলিকেশনের (Research paper) প্রতি খুব বেশি আগ্রহ ছিল। যদিও  আমার পরিবার কখনোই চাইতো না আমি বিদেশে যাই। সর্বদা চাইতো দেশে থেকে কিছু একটা করি। 

অনেক ব্যর্থতার পরে হলেও  আল্লাহ নিরাশ করেননি। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সিনিয়র কিছু বড় ভাই পেয়েছি যাদের কারণে বিসিএস জার্নিটা কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। কিছু মানুষের কথা উল্লেখ না করে পারছি না। প্রথমে  আমার বাবা যিনি আমার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ছায়ার মতো ছিলেন। বাবা খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন আমি পারবো। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ বাবাকে হতাশ করেননি।

এরপরে যদি বলি দুইজন সিনিয়র ভাই পেয়েছি, যাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। একজন হলেন মানস কীর্তিনীয়া নয়ন দা (বর্তমানে ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে আছেন)। নয়ন দা’র একটি কথা খুব বেশি মনে পরে, ‘রাসেল হতাশ হইও  না’। দাদার প্রতি কৃতজ্ঞ। আর একজন হলো সমর বিশ্বাস ভাই। অনেক কাছের একজন মানুষ (বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত)। ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

সর্বশেষ অন্য একজন মানুষের প্রতি রইলো ভালোবাসা, তিনি হলেন আমার প্রিয়তমা সহধর্মিণী। যার বিশ্বাস ও ভালোবাসা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষী, গুরুজন ও মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

নতুন যারা প্রিলিমিনারি দেবে তাদের উদ্দেশ্য বলবো, প্রতিটি বিষয়ের জন্য অন্তত একটি বই ভালোভাবে শেষ করেন। সাথে নবম-দশম শ্রেণির সাবজেক্ট রিলেটেড বই এবং পরীক্ষার আগে বারবার রিভিশন দেয়াটা খুব বেশি জরুরি।

যারা রিটেন দেবে তাদের উদ্দেশ্য বলবো, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন যদি আপনি লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেন। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ম্যাপ, চার্ট, গ্রাফ, কোটেশন, চিত্র দিলে ভালো মার্কস তোলা  সম্ভব। এছাড়া গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজির প্রতি একটু গুরুত্ব দিয়ে পড়লে এখানেও খুব সহজেই ভালো নম্বর তুলতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষায় টাইম ম্যানেজমেন্ট ও দ্রুত লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে আগে থেকেই।

ভাইভা প্রার্থীদের উদ্দেশ্য বলবো, নিয়মিত পত্রিকা পড়া, মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধু, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দিক, সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা, নিজ জেলা, নিজের সম্পর্কে, অনার্স-মাস্টার্সে পঠিত বিষয় ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবেন। ভাইভা বোর্ডে বিনয়ী হওয়াটা খুব জরুরি। সব কোশ্চেনের উত্তর পারবেন এমন মানসিকতা ত্যাগ উত্তম। ভাইভা বোর্ডে কোন কোশ্চেনের উত্তর না পারলে বিনয়ের সাথে সরি বলুন। সকলের জন্য শুভ কামনা।

সর্বোপরি একটা কথা বলবো, যখন যে কাজই করেন না কেন, নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে করেন। পরিশ্রম করেন, সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন। আল্লাহ কোন পরিশ্রমীকে নিরাশ করেন না। 

মো. রাসেল মনির
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (সুপারিশপ্রাপ্ত) 
৪১তম বিসিএস (কৃষি) 

ভালো প্রিলির প্রস্তুতিই আমাকে এগিয়ে রেখেছিল
বিসিএস একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। যার শুরুটা হয়েছিল আমার ২০১৮-এর প্রথম দিকে। ক্যাম্পাস লাইফে চাকরি নিয়ে ২-১ জন বড় ভাই কথা বললেও গুরুত্বটা বুঝতে সময় লেগেছিলো। প্রিলির প্রস্তুতিটা ভালো হলে লিখিত আর ভাইভাতে কাজে লাগে, যার ফল আমি পেয়েছিলাম।

আমার পড়াটা ছিলো রুটিন মাফিক। তাই পরীক্ষার আগে প্রেশারটা কম ছিলো। তবে চাকরি করে ভাইভা কিংবা লিখিত দিয়ে ভালো ফলাফল করাটা কঠিন। তবে একটা সরকারি ব্যাংকে কর্মরত থেকেও আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় সব কিছুই ভালোভাবে সম্পন্ন করেছি। নতুনরা যদি প্রিলি আর লিখিততে বেশি গুরুত্ব দেয় তাহলে ভাইভাতে এগিয়ে থাকবে । 

মো সাইদুর রহমান 
পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা 
বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা)

সাফল্যের খবরে খুশিতে কান্না করেছি
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ও সকলের দোয়ায় ৪১তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। রেজাল্ট শীটে নিজের রোল নম্বরটা দেখতে পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছে। সে অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তেছিল। বাড়িতে মাকে ফোন দিয়ে কান্না করতে লাগলাম। এত দিনের স্বপ্ন, সৃষ্টিকর্তা যে আমাকে ওই ২৫২০ জনের মধ্যে কবুল করেছেন এজন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ।

জীবনে স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো। অথবা বিসিএস ক্যাডার হবো। প্রথমটা হয়ত নানান কারণে হয়নি। তবে দ্বিতীয়টা আজ অর্জন হলো। অনার্স শেষ হল ২০১৬ সালের মার্চে। তখন ৩৭তম বিসিএসের কেবল সার্কুলার দিয়েছে। খুব তোড়জোড় করে আবেদন করলাম। ওদিকে মাস্টার্সেও ভর্তি হলাম। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৭ মে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনায় জীবনে নেমে আসে এক করুণ ট্র্যাজেডি। প্রায় দেড় থেকে দুই বছর স্টাডি গ্যাপ যায়।

এর মধ্যে অনেক কষ্ট করে শুধু মাস্টার্সটা শেষ করলাম ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এসে পড়াশুনা শুরু করলাম। জীবনের প্রথম প্রিলি ৪০তম বিসিএস। কিন্তু ফেল করলাম। ২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএসের সার্কুলার হলো। আবেদন করে পড়াশুনা ভালোই করতে লাগলাম। এর মধ্যে আসলো করোনা। চলে গেলো ২০২০ সাল পুরোটা।

ধৈর্যকে স্থির রেখে ২০২১ সালের মার্চের ১৯ তারিখ প্রিলি দিয়ে ৪১তম বিসিএসের যাত্রা শুরু করে সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুনে ভাইভা দিলাম। আল্লাহ খালি হাতে ফেরাননি। বিজ্ঞ সদস্য কে এম আলী আজম স্যারের বোর্ডে ভাইভা দিয়েছিলাম। ভাইভা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। দীর্ঘ ৪ বছরের জার্নি শেষে আল্লাহর রহমতে মা-বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছি। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি।

৪৩, ৪৪, ৪৫ সবগুলোতেই আছি ইনশাল্লাহ। সবচেয়ে বড় কথা হলো এটাই আমার জীবনের প্রথম চাকরির ভাইভা ছিলো। সুতরাং চেষ্টা করলে যে সম্ভব তার প্রমাণ আমি নিজে। বিসিএসের জন্য যারা চেষ্টা করছে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, যদি আপনারা ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে পারেন অবশ্যই আপনি জয় করতে পারবেন। তবে বর্তমানে চাকরির বাজারে শুধু বিসিএস নিয়ে বসে থাকলে (যেহেতু এটা একটু লং জার্নি) হবে না। অন্যান্য জবের এক্সামগুলোও দেবেন। 

সাজেদুল ইসলাম সাজিদ
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (সুপারিশপ্রাপ্ত) 
৪১তম বিসিএস (কৃষি) 


সর্বশেষ সংবাদ