বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে ডোপ টেস্ট কোথায় করাবেন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২২, ০৬:৩০ PM , আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২২, ০৬:৩০ PM
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ করে কি না সেই পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এমনকি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে অনেকেরই অজানা আসলে কী এই ডোপ টেস্ট। আর কেনই বা করা হয় এই পরীক্ষা। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ডোপ টেস্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত সব তথ্য-
ডোপ টেস্ট কী?
যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ওই নেশাজাতীয় পদার্থের কিছুটা হলেও থেকে যায়। আর সেটিই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। কোনো ব্যক্তি আদৌ মাদকাসক্ত কি না তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে।
এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মূত্র বা রক্ত, আবার কখনো দুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মাদক গ্রহণ করা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শেষ ১ সপ্তাহে মুখের লালার মাধ্যমে, শেষ ২ মাস রক্তের মাধ্যমে, শেষ ১২ মাস বা ১ বছরে চুল পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায় মাদকের নমুনা।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগ ডে বন্ধের নির্দেশ ইউজিসির
ডোপ টেস্টে কোন কোন মাদক ধরা পড়ে?
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) এর প্রণীত খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু মাদক পরীক্ষা করা হয়। যেমন- ডায়াজেপাম, লোরাজেপাম, অক্সাজেপাম, টেমাজেপাম, কোডিন, মরফিন, হেরোইন, কোকেন, গাজা, ভাং, চরস, অ্যালকহোল বা মদ, ফেনিসিডিল, ইয়াবা ও এলএসডি।
ডোপ টেস্ট কীভাবে করা হয়?
ইউরিন বা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হয়। কোনো মাদক সেবনের পর মুখের লালা বা থুথু পরীক্ষা করে শনাক্ত করা যায় তার উপস্থিতি। যেমন- গাজা সেবন করার পরবর্তী ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত মুখের লালা থেকে এই মাদক পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায় মুখের লালা পরীক্ষা মাধ্যমে।
শরীরে মাদকের কোনো উপস্থিতি আছে কি না তা পরীক্ষার অন্যতম এক উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা। আপনার শরীরে রক্ত টেস্টের মাধ্যমে মাদকের উপস্থিতির সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
ডোপ টেস্টের ক্ষেত্রে চুল পরীক্ষা করার মাধ্যমেও মাদক শনাক্ত করা হয়। যে কোনো মাদক গ্রহণের পরবর্তী ৯০ দিন পরেও চুল পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধরা পড়ে সহজেই।
ট্রাফিক পুলিশরা সন্দেহজন চালকদের নিঃশ্বাস পরীক্ষার মাধ্যমে মাদক শনাক্ত করেন। অ্যালকোহল ডিটেক্টরের মাধ্যমে এই টেস্ট করা হয়।
ডোপ টেস্ট কোথায় করা হয় ও কত খরচ?
সারাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করানো যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক ডোপ টেস্টের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ ফি ৯০০ টাকা। নন-স্পেসিফিক পরীক্ষা যেমন- বেঞ্জোডায়াজেপিন, এমফেটামাইনস, অপিয়েটস ও কেননাবিনেয়েডস- এই চারটির প্রতিটির ফি ১৫০ টাকা এবং অ্যালকোহল পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদিত ডোপ টেস্টে মহানগরীর হাসপাতালগুলো হলো, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
এছাড়া বাংলাদেশের বেশ কিছু স্থানে ডোপ টেস্ট শনাক্তকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে- রংপুর, ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, খুলনা, বগুড়া, গাজীপুর, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, যশোর, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল। এই জেলাগুলোতে ডোপ টেস্টের জন্য মিনিল্যাব বসানো হয়েছে।
ডোপ টেস্ট করার নিয়ম
কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে ডোপ টেস্ট করা হয়। প্রথমে যে ব্যক্তির ডোপ টেস্ট করানো হবে তার পরিচয় জমা নেওয়ার জন্য একটি ফরম পূরণ করতে হবে। সেখানে তার নাম, ঠিকানা, বয়স, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদির তথ্য দেওয়া থাকবে।
আরও পড়ুন: জীবনকে উপভোগ করতে মোবাইল থেকে দূরে থাকতে বললেন মোবাইলের স্রষ্টা
ডোপ টেস্টের ফরম পূরণ করার পর নমুনা জমা দিতে হবে। একজন বিসিএস ক্যাডার ডাক্তার দিয়ে ওই নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনাতে যে কোনো মাদক ধরা পড়লে ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে। আর ওই ব্যক্তি যদি মাদকাসক্ত না হন তাহলে তার নমুনা পরীক্ষায় ডোপ টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে।