সাইনোসাইটিস নিরাময়ে হোমিও চিকিৎসা

  © ফাইল ফটো

সাইনাসের সমস্যা হলে দেহে জ্বর এবং দুর্বল একটা ভাব অনুভূত হয়। তবে একটু সচেতন হলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সাইনাসের আসলে কোন কাজ নেই। কেন যে এটা মানুষের শরীরে অবস্থান করে? গবেষকেরা অনেক মাথা ঘামিয়েও এর কোনা সমাধানে আসতে পারেননি। তবে এটা হলো আমাদের নাকের চার দিকে কিছু বায়ু প্রকোষ্ঠ থাকে যেগুলোর মধ্যে একটা ঝিল্লি থাকে যে ঝিল্লি নাকের সংগে সংযুক্ত। তাই নাকের কোনা সমস্যা হলে এটাকে অনেক ক্ষেত্রে সাইনাস বলা হয়।আজকের লেখা এখান থেকে শুরু...

সাইনুসাইটিস কি: নাকের চারপাশে হাঁড়ের বাতাসপূর্ণ কুঠুরি থাকে, যেগুলোকে সাইনাস বলা হয়। সাইনুসাইটিস হলো সাইনোসের ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ।

সাইনাসের প্রদাহের কারণ: সাইনাসের প্রদাহের মধ্যে ম্যাগজিলারি সাইনাসের প্রদাহ সবচেয়ে বেশী হয়। একিউট সাইনুসাইটিস ও শ্বাসনালির ওপরের অংশের প্রদাহ, এলার্জি, অপুষ্ঠি, স্যাঁত সেতে পরিবেশে থাকলে, দীর্ঘদিনের দাঁতের রোগ থেকেও প্রদাহ হতে পারে। আবার শ্বাসনালির ছিদ্র সরু হলেও এরকম হতে পারে। তবে বেশিরভাগ সাইনাসের প্রদাহ নাকের প্রদাহ থেকে হয়ে থাকে।
সাইনোসাইটিসের লক্ষণ: নাকের পাশে অনবরত ব্যথা, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা হতে পারে। সব সময় নাক বন্ধ থাকা, কোন স্বাদ ও ঘ্রাণ বুঝতে না পারা, সাধারণত বিমর্ষতা, অস্থিরতা ও অনীহা জাগা, মাঝে মধ্যে জ্বর আসা। মিউকোসার আবরণ পাতলা হয়ে যাওয়া।
নাকের পলিপ: নাকের পলিপ থেকেও সাইনুসাইটিস রোগ হতে পারে। নাকের পলিপের উৎপত্তি মূলত, নাকের সাইনাসগুলো থেকেই। আর এই পলিপ আসলে সাইনাসের কিংবা নাকের আবরণের একটি অংশ যা দেখতে অনেকটা আঙ্গুর ফলের থোকার মতো।

পলিপ রোগের উপসর্গ কি কি হতে পারে-
* নাক বন্ধ পলিপ রোগীদের প্রধান ও একমাত্র উপসর্গ বলা যেতে পারে।
* ঠাণ্ডাজনিত কারণে নাক বন্ধ প্রকট হয়।
* হাঁচি অন্যতম উপসর্গ।
* নাক থেকে পুঁজ বা পানি নির্গত হওয়া।
* মাথা ব্যথা।
* নাক ব্যথা বা মুখমণ্ডলে ব্যথা অনুভব করা।
* নাকের পিছনে ময়লা অনুভব করা, যা নাক টানলে কালো কালো পদার্থ বের হয়।
* ঘুষ ঘুষে কাশি, বার বার গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা।
* নাক থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া।
* নাকে কথা কথা।
* হা করে বা মুখ খুলে ঘুমানো বা শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া, নাকডাকা ইত্যাদি।

সাইনুসাইটিস হতে কিভাবে মুক্ত থাকা যায়-
* এলার্জি এবং ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা।
* আলো বাতাসপূর্ণ বাড়ির পরিবেশে বসবাস করা।
* ঘন বসতি পরিহার করা।
* পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ।
* নাকের প্রদাহ বা অন্য কোন নাকে রোগ বা গলার অন্য কোন সমস্যা, দাঁতের প্রদাহ ইত্যাদির সময়োপযোগী চিকিৎসা করলে অনেক ক্ষেত্রে সাইনোসাইটিস হতে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে পারে।

হোমিও প্রতিবিধান:
রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয় এজন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকে রোগী পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে হোমিওপ্যাথিতে সাইনাসের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আবার ইদানীং অনেক হোমিও চিকিৎসক বের হয়েছে নিজেদেরকে ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি বলে। কিন্তু এইসব ডাক্তার বাবুদের রোগীরা যখন আমাদের কাছে আসে তখন দেখি রোগীদেরকে বিভিন্ন ক্যামিকেল,এসিড দিয়ে,অপ হোমিপ্যাথি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এদেরকে ডাক্তার স্যামুয়েল হানেমান বলে থাকেন সংকর জাতের হোমিওপ্যাথি।

যেহেতু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা লক্ষণ ভিত্তিক সেহেতু লক্ষণের ভিত্তিতে চিকিৎসা করা বাঞ্ছনীয়। লক্ষণের উপর যেই সব ঔষধ আসতে পারে, নাক্স ভূমিকা, টিউবার কুলার, লেমনা মাইনর, ক্যালকেরিয়া কার্ব, সোরিনাম, থুজাসহ আরো অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে তবে  পলিপাসের জন্য অনেক সময় নাক বন্ধ থাকে। এলিয়াম সেফা-৩০, টিউক্রিয়াম-২০০, সোরিনাম-২০০, ১ম স্যাঙ্গুইনেরিয়াম-২০০ নিয়মিত সেবন করিলে সারিয়া যায়। যাদের নাকে পলিপাস হেতু মাঝে মাঝে ময়লা মিশ্রিত রক্ত হাতে লাগে তাদের প্রথমে ১ ডোজ ফেরাম ফস ৩x এবং তারপর দিন থেকে একডোজ টিউক্রিয়াম ২০০ সন্ধ্যায় সেবনে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাই ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক: স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ই-মেইলঃdrmazed96@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ