সমালোচকদের স্বাগত জানাবে এনসিটিবি

পাঠ্যবই ও এনসিটিবির লোগো
পাঠ্যবই ও এনসিটিবির লোগো  © সংগৃহীত

মানসম্মত ও নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়নে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিগত বছরের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। প্রায় প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণের পর আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। যদিও পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসংগতি থেকেই যায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে মাধ্যমিকে ষষ্ঠ এবং সপ্তম দুই শ্রেণির নতুন পাঠ্যবইয়ে প্রায় আড়াইশ ভুল এবং অসঙ্গতির তথ্য আসে গণমাধ্যমে।

ভুল এবং অসঙ্গতি নিয়ে ২০২৩ সালে দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম হয়। এক পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগে এনসিটিবির মামলায় চারজন শিক্ষককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।

‘ভুলের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন, ভুলের ধরন বিবেচনায় তাদের ভূমিকাও আমরা পর্যালোচনায় নেব। কারো গাফলতি থাকলে সেটাও আমরা বিবেচনায় নেব। আমরা কাজের মান নিয়ে যথেষ্ট সচেতন— অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি

চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য গত বছর প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই ছেপেছে সরকার। তবে, পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের কারণে ২০২৫ সালের জন্য বই ছাপতে হবে ৪০ কোটি। সময় স্বল্পতা ও বাড়তি কাজের চাপ সামলে নির্ভুল বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে সংশয় দেখা দিয়েছে। একাধিক প্রেস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বল্প সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে নির্ভুল বই তুলে কঠিন হবে। ফলে আগামী শিক্ষাবর্ষেও নতুন বইয়ে ভুল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এনসিটিবির নতুন বই ছাপার কাজ করছেন এমন একজন প্রেস মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এবার বইয়ে ভুল থাকার সম্ভাবনা আরো বেশি। তার উপর এবার সময়ের স্বল্পতা ও কারিকুলামে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কাজেই ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। 

আরও পড়ুন: নোট-গাইড বন্ধে বড় পরিকল্পনা এনসিটিবির

এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন বইয়ে ভুল থাকাটা নেতিবাচক নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কর্তৃপক্ষ কীভাবে নিচ্ছে বিষয়টিকে। এবার ভুল থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে কারণ, সময় স্বল্পতা একটা বড় কারণ। আর এনসিটিবির প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং কারিকুলামের পরিবর্তনের ফলে অনেক কাজ চাপের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়েছে।

তবে ভুল থাকার বিষয়ে প্রতিবারের ন্যায় বিরূপ আচরণ থেকে বিরত থাকার কথা বলছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, সমালোচনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে আমাদের পরামর্শ  থাকবে সমালোচনা যেন যৌক্তিক হয়। 

নতুন বই প্রকাশের পর ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সমালোচনার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে চাই। আগের মতো মামলা হামলা কিংবা আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ করার প্রশ্নই আসে না। আমি বলবো, যেকোনো ব্যক্তি দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সমালোচনা কিংবা পরামর্শ দিতে পারবে। চেয়ারম্যানের মেইলে কিংবা ডাকযোগে তাদের পরামর্শ পাঠালে আমরা সেটিকে আমলে নেব।

আরও পড়ুন: নতুন বইয়ের কাজ শেষে কারিকুলাম পরিমার্জন শুরু হবে: এনসিটিবি চেয়ারম্যান

তবে কোন স্তরে ভুল হবে, সেটার যথাযথ কারণও খতিয়ে দেখার কথা জানান চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ভুলের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন, ভুলের ধরন বিবেচনায় তাদের ভূমিকাও আমরা পর্যালোচনায় নেব। কারো গাফলতি থাকলে সেটাও আমরা বিবেচনায় নেব। আমরা কাজের মান নিয়ে যথেষ্ট সচেতন।

জানা গেছে, এবার মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৩০ কোটি ৯৫ লাখ ৪১ হাজার ৪৮৬টি ও প্রাথমিক স্তরের জন্য ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই ছাপানো হবে। এসব বই ছাপানো ও বিতরণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এবার কাগজের পুরুত্ব ও উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। গত বছর কাগজের পুরুত্ব ছিল ৭০, আর উজ্জ্বলতা ছিল ৮০। এ বছর কাগজের পুরুত্ব ৮০ এবং উজ্জ্বলতা ৮৫ করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ