‘ডামি নির্বাচন’ নিয়ে যা বলল হাবিপ্রবি শিবির-ছাত্রদল
- হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৬ PM , আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৬ PM
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দিনটি একটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এই দিনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। একতরফা নির্বাচনের আভাস পেয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের মুখে অনেকটা একা হয়ে পরে আওয়ামীলীগ। সেসময় নিজ দলের দুই প্রার্থীকে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। একারণে অনেকে এটিকে ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যা দেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে শুরু করে দেশের জনগণ পর্যন্ত এ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ, আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে অনুষ্ঠিত এই জাতীয় নির্বাচন সরকার এবং বিরোধীদলের মধ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায় রচনা করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এর বাইরে ছিল না। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) সেই সময় সরগরম ছিল নির্বাচন কেন্দ্রীক তৎপরতায়। সেসময় রংপুর বিভাগের বিএনপি ঘোষিত পদযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই পদযাত্রায় যোগ দিতে যাওয়া গাড়িবহর ক্যাম্পাসের সামনে পৌঁছালে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। সেখানে অনেকে হতাহত হন।
২০২৪ সালের সেই ঘটনাকে স্মরণ করে হাবিপ্রবির প্রধান দুই ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে এদিনের মূল্যায়ন তুলে ধরেছে।
হাবিপ্রবি ছাত্রদলের আহবায়ক বার্নার্ড পলাশ বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমি মনে করি এটা কফিনে পেরেক ঠুকার মতো অবস্থা ছিল। কারণ একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটা হচ্ছে জনগণের ভোটাধিকার। বিগত ৩টি নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেনি। বিগত বছর গুলোতে যেমন আমরা দেখেছি ব্যাংক লুট, তারপর আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, দুর্নীতি, টাকা পাচার হওয়া সবই হয়েছে এদেশে। ২৪ এ এসে একতরফা ডামি নির্বাচনে হাসিনা সরকার চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ করেছে। সকল দল এবং মতের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নির্বাচন করেছিলেন। পরবর্তীতে ৫ আগস্ট বিশাল জনক্ষোভ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে হটাতে পেরেছি।
একই বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেন হাবিপ্রবি শিবির সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৭ই জানুয়ারি, ডামি নির্বাচনসহ আওয়ামী লীগের অধীনে বিগত তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রের গলা কেটে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। রাতের আঁধারে সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, ভোট ডাকাতি, মৃত ব্যক্তির ভোট প্রদান—এসব কার্যকলাপ নির্বাচন ব্যবস্থাকে হাস্যকর ও প্রত্যাখ্যাত করে তুলেছিল। একতরফা, বিরোধীদলবিহীন ও পাতানো ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। ক্ষমতায় আসতে জোরপূর্বক জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গুম-খুন, আয়নাঘর তৈরির মতো অমানবিক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছিল। নিজেদের অবৈধ শাসন টিকিয়ে রাখতে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল। দেশপ্রেমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।"
রেজওয়ান আরও বলেন, ‘তবে সাহসী ও ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। আজ বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং জনগণের প্রকৃত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে—এটাই আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা।’