চাকরিপ্রার্থীদের ‘অপহরণের’ প্রমাণ গায়েবে সিসিটিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিল ছাত্রলীগ

যবিপ্রবি ও ছাত্রলীগ
যবিপ্রবি ও ছাত্রলীগ  © লোগো

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যাবিপ্রবির) নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যাওয়া ১১ চাকরিপ্রার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী প্রার্থী আরাফাত হোসেন বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাসহ ১৩ নেতাকর্মীর নামে মামলাটি করেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের হলে আটকে রাখার প্রমাণ গায়েব করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে গেছেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানা গেছে, মামলার পর আসামিদের আটক করতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্র হলে অভিযান চালাতে যায়। অভিযানের খবর পেয়ে হলের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে সমবেত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে সেখান থেকেই পুলিশ ফিরে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি লিফট অপারেটরের ১২টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৩৮ প্রার্থীকে পরীক্ষার জন্য গতকাল ক্যাম্পাসে ডাকা হয়। সকাল ১০টা থেকে চাকরিপ্রার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাঁদের ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে, প্রার্থীদের মধ্যে ১১ জনকে ক্যাম্পাসের ছাত্র হলে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ ক্যাম্পাসে পৌঁছালে বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যায় আটকে রাখা প্রার্থীদের মধ্যে আরও পাঁচজনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ৩৮ প্রার্থীর ২৬ জন শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। তাঁদের মধ্যে আরাফাত হোসেন ইমন নামের এক প্রার্থী রাতে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফট অপারেটর পদে চাকরি পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে গেলে শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্র হলে সোহেল রানা (বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি), বেলাল হোসেন, রাফি হাসান, রেদোয়ান হাসান, রাব্বি, শোয়েব, জিসানসহ অন্তত ১৫ জন তাঁদের ধরে হলের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের আটকে রেখে হত্যার উদ্দেশ্যে রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন তাঁরা। পরে তাঁদের চোখ বেঁধে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, আমি বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনেছি। আমার কোনো লোক কাউকে আটকে রাখেননি। যেসব কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমার প্রতিপক্ষের এক নেতার অনুসারীরা থাকেন।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার লোকজন চাকরিপ্রার্থীদের আটকে রাখেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্র হলের যে কক্ষগুলোতে প্রার্থীদের আটকে রাখা হয়, সেসব কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা থাকেন। ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকা হলে বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অপহরণ ও সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নেওয়ার অপরাধে মামলা করা হবে। একই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

উপাচার্য আরও বলেন, আগামী রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। তারপর মামলা ও তদন্ত কমিটি হবে। মামলার জন্য বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষার কারণ জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, আমি এ বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিতে চাই। এ কারণে রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আটকে রাখার ঘটনায় এক প্রার্থী ১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কাউকে আটক করা যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ