প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও এনালগ পবিপ্রবি, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সোহান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী এম. কেরামত আলী হলের বাসিন্দা তিনি। সম্প্রতি  বিশ্ববিদ্যালয় ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে ভর্তির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়ে তিন দিন পার করতে হয়েছে তাকে। 

সোহান জানান, প্রথমে হল থেকে ব্যাংক ভবন, সেখান থেকে আবার হলে ফিরতে হয়েছে। এরপর হল প্রভোস্টের স্বাক্ষরের জন্য একদিন অপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার সাক্ষর নিয়ে শেষে অনুষদের ডিন অফিসে জমা দিতে হয়েছে। এসবের মাঝে ছিলো ক্লাস ও ল্যাব। একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এনালগ পদ্ধতিতে ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে এভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করাটাা হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করেন এ শিক্ষার্থী। 

নাহিদের মতো এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করার পর ২৩ বছর অতিক্রম করলেও এখনো এনালগ পদ্ধতিতেই চলছে ভর্তি সহ অন্যান্য কার্যক্রম। 

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এনালগ পদ্ধতিতে ভর্তি ফরম পূরণের সময় প্রতিবারই বিশাল লাইনের সমারোহ দেখা যায় ব্যাংকের ভেতর। মাঝে মাঝে লাইনের চাপে স্থান সংকুলান হয় না। সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। ব্যাংকে টাকা জমাদান শেষে যেতে হয় হলের প্রভোস্ট অফিসে। প্রভোস্টগণ ক্লাস সহ অন্যান্য ব্যস্ততায় থাকায় তাৎক্ষণিক সাক্ষর করতে পারেন না। ফলে অনেকক্ষেত্রেই একদিন অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এরপর সাক্ষর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখায় গেলে শুরু হয় কর্মকর্তাদের ‘লাঞ্চের পর আসেন’ নামক বিড়ম্বনা। লাঞ্চের সময় শেষ হলেও কর্মকর্তাদের লাঞ্চ শেষ হয় না। তার উপর নির্ধারিত সময় শেষ হলেই গুনতে হয় অতিরিক্ত জরিমানা। 

এদিকে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ই বর্তমানে অনলাইনে ফরম পূরন ও টাকা জমা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হয় তেমনি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশেই হ্রাস পায়। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ভর্তির সময় কোন কোন কোর্স নেওয়া হবে তা ওয়েবসাইটেই সিলেক্ট করা হয়। কোর্সের উপর সংক্রিয় ভাবে কত টাকা দিতে হবে ওয়েবসাইটেই বলে দেওয়া হয়। পরে অনলাইনেই টাকা জমা দিলে এপ্রুভের পর রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড করতে হয়। 

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির এমন সুযোগ থাকলেও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও পবিপ্রবিতে কোনো সে সুযোগ নেই সেই প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রায়হান বলেন, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে শিক্ষার্থীদের যেভাবে এনরোলমেন্ট জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার হতে হয় তা সত্যিই হতাশাজনক। অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় এ কাজ গুলো দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ পবিপ্রবিতেও দ্রুত অটোমেশন কার্যকর করার ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা করছি।

অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে অবশ্যই আমাদের চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কাজে ডিপিবি-তে অটোমেশনের বাজেট ধরা রয়েছে। এবং এই ডিপিবি-র অনুকূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখা যেমন- লাইব্রেরী, একাউন্টসসহ অন্যান্য শাখা অটোমেশন প্রক্রিয়ায় ভেতর নিয়ে আসা হবে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টাকা জমা দেওয়ার এসব ভোগান্তি কমানোর জন্য আমি অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করছি, কিন্ত কিছু প্রতিকূলতার জন্য সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্তমানে রুপালি ব্যাংকে যেভাবে টাকা জমা নেওয়া হয় তার পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যমের কথা আমি অনেক আগেই প্রস্তাব করেছি কিন্তু যথাযথ কতৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না।’

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে লিখিতভাবে আবেদন জমা দিতে হবে। পরে তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ