স্নাতকোত্তরে ভর্তি নিয়ে বিভক্ত পবিপ্রবি ছাত্রলীগ, ছাত্রী হলে হামলা তদন্তে কমিটি

  © ফাইল ছবি

হঠাৎ দুই ভাগে বিভক্ত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ। ঘটেছে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও এবং সাংবাদিক হেনস্তার মতো ঘটনা। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে সর্বনিম্ন সিজিপিএ (২.৫০) ও জিপিএ মানদন্ড তুলে নিয়ে ভর্তি করার নিতীমালাকে কেন্দ্র করেই এই বিভক্তি। এ ঘটনার জেরে ছাত্রী হলে হামলাও করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে পর্যাপ্ত সিজিপিএ না থাকায় সাবেক অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। সেসকল সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার জন্য সিজিপিএ মানদন্ড বাতিল করে ভর্তির সুযোগ পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর সম্প্রতি একটি আবেদন জমা দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় রাজনৈতিক প্রবেশের সুযোগ করে দিতে তাদের এ দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর। 

পরবর্তীতে গত ৩ এপ্রিল পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ কমিটির ৫৮তম জরুরি সভায় একাডেমিক কাউন্সিলে রিপোর্ট পেশ করার শর্তে বিশেষ বিবেচনায় শুধুমাত্র জানুয়ারি-জুন'২০২২ সেমিস্টারে স্নাতক পাশকৃত (সিজিপিএ ও জিপিএ মানদন্ড তুলে) প্রার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং এ বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ ফজলুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অনেকের আপত্তির প্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর এমন সিদ্ধান্তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে গত ৫ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের বাসভবন অবরুদ্ধ করে রাখে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশ। রাত ৯টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বাসভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। একই দিন দুপুরে উপাচার্যসহ পবিপ্রবি'র শিক্ষক সমিতিকে টিএসসি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে শিক্ষক সমিতির তোপের মুখে অবরোধ তুলে নেন।

অপরদিকে উপাচার্য অবরুদ্ধের আন্দোলনে আরাফাত ইসলাম খান সাগরের অনুসারীরা মেয়েদের হলে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেকের অনুসারী মেহজাবিন আক্তার মেধাাহ অন্যান্যরা তাতে বাধা প্রদান করেন। এতেই বাঁধে বিপত্তি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের উপর সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের অনুসারীদের হামলার অভিযোগ ওঠে। এ সম্পকৃত একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।

সংঘর্ষের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। ডেইলি সান ও বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আবদুল কাইউমের উপর এ হামলার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে হাজির হন। পরবর্তীতে তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করে এবং ইতোমধ্যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এগ্রোনমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে আহ্বায়ক ও উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলমকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক জানান, মাস্টার্স ভর্তিতে সিজিপিএ শিথিলকরণের এ আন্দোলনের সাথে বর্তমান ছাত্রলীগের কোন সম্পর্ক নেই এবং এ হামলায় ছাত্রলীগ কোন দায় নেবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে একাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই আমরা মেনে নেব। আর এটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রী হলে যে বিশৃঙ্খলা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এমনটাই আশা প্রকাশ করছি। 

অন্যদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর বলেন, আবাসিক হলের ছাত্রীদের উপর হামলা করা হয়নি। কিছু শিক্ষার্থী র্যাগিং এর শিকার হয়েছিল, ছাত্রলীগ তাদেরকে উদ্ধারের জন্য গিয়েছিল। এসময় ছাত্রীদেরকে উদ্ধার করার জন্য হলের গেটে আঘাত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ. দা.) ও প্রক্টর অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু জানান, উপাচার্য মহোদয় একক ক্ষমতা বলে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ মেম্বার এটার বিরোধীতা করেছেন। তাই পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

মেয়েদের হলে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্তের রিপোর্টের  প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, এমন একটি দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন অবরুদ্ধ করার যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের যে দাবি রয়েছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড রয়েছে, একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নীতিমালা বিদ্যমান সে অনুযায়ী সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। 

এসময় ছাত্রী হলে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম দোষী সাব্যস্ত হবে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ