সরকারি স্কুলে ভর্তিতে কোটার ছড়াছড়ি, ৬৮ শতাংশ শূন্য আসনই কোটার দখলে

ক্লাসে স্কুল শিক্ষার্থী
ক্লাসে স্কুল শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

আগামী বছর শিক্ষার্থী ভর্তিতে সরকারি হাইস্কুলগুলো শূন্য আসনের ৬৮ শতাংশ কোটায় সংরক্ষিত থাকবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা এড়াতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও সিংহভাগ শিক্ষার্থী কোটা সুবিধা নিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন।

এমন বিধান রেখে সম্প্রতি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ভর্তির নীতিমালা জারি করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রসঙ্গত বিগত বছরগুলোতেও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সিংহভাগ আসন সংরক্ষিত থাকতো। 

সংরক্ষিত কোটার বড় অংশ অর্থাৎ মোট আসনের ৪০ শতাংশ স্কুল সংলগ্ন এলাকার বা ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য বহাল থাকছে। যা বরাবরই ছিল। তাছাড়া বীর ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৫ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর-সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানরা ১ শতাংশ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ১০ শতাংশ, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা ২ শতাংশ, অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর যমজ ও সহদোর ভাই-বোনরা ৫ শতাংশ কোটায় সংরক্ষিত আসনে ভর্তির সুযোগ পাবেন। আর এর বাইরেও দূর থেকে বদলি হয়ে আসা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ আসন কোটায় সংরক্ষণ করা হবে। আর সরকারি হাইস্কুলগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তানরাও কোটা সুবিধা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন।  

নীতিমালা থেকে জানা গেছে, সংরক্ষিত কোটার বড় অংশ অর্থাৎ মোট আসনের ৪০ শতাংশ স্কুল সংলগ্ন এলাকার বা ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য বহাল থাকছে। যা বরাবরই ছিল। তাছাড়া বীর ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৫ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর-সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানরা ১ শতাংশ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ১০ শতাংশ, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা ২ শতাংশ, অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর যমজ ও সহদোর ভাই-বোনরা ৫ শতাংশ কোটায় সংরক্ষিত আসনে ভর্তির সুযোগ পাবেন। আর এর বাইরেও দূর থেকে বদলি হয়ে আসা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ আসন কোটায় সংরক্ষণ করা হবে। আর সরকারি হাইস্কুলগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তানরাও কোটা সুবিধা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন।  

আরও পড়ুন : স্কুলে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ

ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর সরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরীর সব সরকারি বিদ্যালয়ের আওতাধীন ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করে দেবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্তিযোগ্য সন্তান পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে ওই আসনগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। 

এতে আরও বলা হয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির মোট আসনের ১০ শতাংশ আসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা শর্তে ভর্তির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। তবে ভর্তির সময় এ সংক্রান্ত প্রমাণ হিসেবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন দাখিল করতে হবে। ওই আসনে কোন শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে অপেক্ষমান তালিকা থেকে শূন্য আসন পূরণ করতে হবে।

আরও পড়ুন : মাধ্যমিকে প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নয়

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে মহানগর, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান ভর্তির আবেদনের সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। 

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোন সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর যমজ ভাই-বোন যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে বা যেসব যমজ ভাই-বোন নতুন আবেদন করবে তাদের জন্য ৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সহোদর-সহোদরা যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে অথবা যেসব সহোদর-সহোদরা নতুন আবেদন করবে তাদের জন্য ওই সরকারি হাইস্কুলগুলো ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। এ দুই সুবিধাই কোন দম্পতির মোট তিন সন্তান পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। সহোদর-সহোদরার জন্য নির্ধারিত কোন আসন শূন্য থাকলে যমজ সন্তানদের ভর্তির মাধ্যমে আসন পূরণ করতে হবে। একইভাবে যমজ ভাই-বোনের জন্য নির্ধারিত কোন আসন শূন্য থাকলে সহোদর-সহোদরা দ্বারা পূরণ করা যাবে। কোনক্রমে আসন শূন্য রাখা যাবে না।

এছাড়া এক কর্মস্থল থেকে অন্য কর্মস্থলে বদলি হওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ভর্তির জন্য প্রমাণকসহ ভর্তি কমিটির সভাপতি বরাবর বদলির আদেশের তারিখ থেকে দশ মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। সব মহানগরী, সিটি কর্পোরেশন, বিভাগীয় শহরের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থল ১০ কিলোমিটারের বেশি হলে তাঁর সন্তান কর্মস্থলের কাছের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। জেলা, উপজেলা বা থানার ক্ষেত্রে বদলিকৃত কর্মস্থলের কাছের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তার সন্তান ভর্তির সুযোগ পাবে। বদলিজনিত কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের ভর্তির জন্য শ্রেণি কক্ষে স্থান সংকুলান সাপেক্ষে প্রতি শ্রেণি শাখায় মোট আসনের ৫ শতাংশ অতিরিক্ত আসন সংরক্ষিত থাকবে। সরকারি বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী অগ্রাধিকার পাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁর আগের কর্মস্থলে পুনরায় বদলি হয়ে আসলে তাদের সন্তানদের পূর্বতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় ভর্তির সুযোগ পাবে।

এরবাইরেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ভর্তির উপযুক্ত সন্তান সংখ্যার সমসংখ্যক আসন স্ব স্ব বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত থাকবে। তবে শিক্ষক মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে এবং তার ভর্তি উপযুক্ত সন্তান বালিকা হলে নিকটতম সরকারি বালিকা ও সহশিক্ষা বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। শিক্ষক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে এবং তার ভর্তি উপযুক্ত সন্তান বালক হলে নিকটতম সরকারি বালক-সহশিক্ষা বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। একইভাবে শিক্ষক যদি সহশিক্ষা বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকে তাহলে তার ভর্তি উপযুক্ত সন্তানের ভর্তির জন্য কর্মরত বিদ্যালয়েই আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। তবে কর্মরত বিদ্যালয়ে ভর্তির উপযুক্ত কাঙ্খিত শ্রেণি না থাকলে নিকটতম বালক, বালিকা বা সহশিক্ষা বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভর্তি কমিটিকে জানাবেন।

ভর্তি নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার সন্তান যে এলাকায় স্থায়ী হবে সে এলাকার সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে। সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোন সরকারি বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যার পিতা-মাতা নেই এমন শিক্ষার্থী কোন কারণে বাসস্থান পরিবর্তন করলে পরিবর্তিত এলাকার সরকারি স্কুলে সে সমশ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকারি স্কুলে অধ্যয়নরত কোন শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের মৃত্যুজনিত কারণে বর্তমান আবাস্থল স্থানান্তর করলে স্থানান্তরিত এলাকার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমশ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


সর্বশেষ সংবাদ