অর্থাভাবে ঢাবিতে ভর্তি হতে পারছেন না অন্তু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না চট্টগ্রামের পটিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থী অন্তু বড়ুয়া। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে সেখানকার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ থাকার ভয়ে হতাশায় ভুগছেন সব পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া এই শিক্ষার্থী।

জানা যায়, পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের মুকুটনাইট গ্রামের করুণ বিকাশ বড়ুয়া ও নিধু বড়ুয়ার দ্বিতীয় ছেলে অন্তু বড়ুয়া। বাবার দর্জি পেশার আয়ে এতদিন তাদের সংসার চলত। বর্তমানে তাঁর বাবা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় বড় ভাই চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের এম এ শেষ বর্ষের ছাত্র সাজু বড়ুয়া ও অন্তু বড়ুয়া দুজনেই টিউশনি করে নিজেদের পড়ালেখার খরচ মেটানোসহ পরিবারের খরচ সামলায়।

জানতে চাইলে অন্তু বড়ুয়া জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ছিল ৪১৯৬৯৯। ফলাফলে তাঁর মেধাক্রম ৭২। কিন্তু এত ভালো ফলাফল করার পরও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘দেশে অনেক বিত্তবান রয়েছেন। যে কেউ আমার দিকে তাকালেই আমার স্বপ্ন ভেস্তে যাবে না।’ তিনি ভর্তির জন্য বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চান।

অন্তু বড়ুয়ার মা নিধু বড়ুয়া বলেন, ‘আমার ছেলে জীবনের সব পরীক্ষায় জিপিএ-৫ নিয়ে পাস করেছে। কিন্তু আজ টাকার অভাবে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারছে না। আমার স্বামীও রোগে শয্যাশায়ী। সংসার চলছে ছেলেদের টিউশনিতে। আমি ছেলের ভর্তির জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

অন্তু বড়ুয়া পটিয়ার ধলঘাট মুকুটনাইট হাজী আনছুর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি, মুকুটনাইট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি এবং পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন।

ধলঘাট লোকনাথ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক প্রবোধ রায় চন্দন বলেন, ‘ছেলেটি খুবই মেধাবী। আমি বিত্তবানদেরকে তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

ধলঘাট ইউপি চেয়ারম্যান রনবীর ঘোষ টুটন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের মুকুটনাইট গ্রামের ছেলে অন্তু বড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে জেনে খুবই ভাল লাগল। তবে ভর্তির জন্য তার টাকার যে অভাব তা দূর করতে আমি সহযোগিতা দেব।’

মুকুটনাইট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘অন্তু বড়ুয়া সত্যিই একজন মেধাবী ছাত্র। সে সব পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে অসামান্য মেধার পরিচয় দিয়েছে।’

পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষায় অন্তু বড়ুয়া জিপিএ-৫ পেয়ে দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে সাফল্যের আলো দেখেছে। আমার বিশ্বাস সে সুযোগ পেলে দেশের সম্পদ হবে। আমি তার ঢাবিতে ভর্তিতে সহযোগিতার জন্য বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পটিয়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ অনেক বড় অর্জন। আমার পটিয়ার এ মেধা অকালে ঝরে পড়বে তা হতে দেওয়া যায় না। আমি এই ছেলেকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা দিয়ে যাব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান বলেন, ‘দারিদ্র্যকে জয় করে ছেলেটি যে ফলাফল করেছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা তার শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিতে যতটুকু সম্ভব সহায়তা দেব।’


সর্বশেষ সংবাদ