জবিতে চান্স পেলেও ভর্তি নিয়ে দুুশ্চিন্তায় তাহমিনার পরিবার
অজপাড়াগাঁয়ের মেধাবী কন্যা তাহমিনা আক্তার নিজের মেধা আর অধ্যবসায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। তবে দারিদ্র্যতার নির্মম বাস্তবতায় সেই আনন্দ রূপ নিয়েছে উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তায়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ভর্তি ও ঢাকা শহরে থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ডুবে আছে পরিবারটি। অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের জোডখালী গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর কামাল উদ্দিন ও গৃহিণী রাবেয়া খাতুন দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে তাহমিনা আক্তার অন্যতম। নদীভাঙন, দারিদ্র্য আর সংগ্রামের মাঝেই বেড়ে ওঠা এই মেয়ে এসএসসিতে হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাইস্কুল থেকে পেয়েছেন জিপিএ ৪.৮৩ এবং মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫। কোচিং কিংবা প্রাইভেটের সামর্থ্য না থাকলেও আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায় ছিল তার বড় সম্বল।
আরও পড়ুন: আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম সমাবর্তনে সনদ পেলেন ৯৫০০ শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার খবরে বাড়িতে আনন্দের পরিবর্তে নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার ছায়া। মেয়েকে ভর্তি এবং ঢাকায় থাকার খরচের চিন্তায় এখন নাওয়া-খাওয়া বন্ধ কামাল ও রাবেয়া দম্পতির।
তাহমিনা আক্তার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিবেদককে বলেন, অন্যের কাছ থেকে বই ধার করে নিজে নিজে চেষ্টা করে এতোদুর পর্যন্ত পৌঁছেছি। বাকিটা আল্লাহ সহায় হলে পড়ালেখা শেষ করে দেশের জন্য কিছু করতে চাই। আমি অসহায় পরিবারের সন্তান কিন্তু আমার ইচ্ছা কখনো অসহায় হতে পারে না। সবার দোয়া চাই, আমি যেন কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।
এর আগে হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাইস্কুল থেকে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন তাহমিনা। কোচিংয়ের সামর্থ্য না থাকলেও প্রবল আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায়ে নিজেকে প্রস্তুত করে জবি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এতেই তিনি মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড শুরু
তাহমিনার বাবা কামাল উদ্দিন বলেন, দিনমজুর হিসেবে যখন যে কাজ পাই তা করে কোনো রকম সংসার চালাই। মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ দেওয়ার মতো টাকা আমার কাছে নাই। আমি বাবা হিসেবে আমার মেয়ের মেধার মূল্য দিতে অপারগ। এসময় দেশবাসীসহ সমাজের শিক্ষানুরাগীদের সহায়তা কামনা করেন বেধাবী শিক্ষার্থী তাহমিনার বাবা।
তাহমিনার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, সুখবর শুনে সবাই হাসে আর আমরা কাঁদছি। গরিবের মেয়ে হিসেবে তাহমিনা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। কিন্তু সামনের দিনগুলো নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।
স্থানীয়রা জানান, তাহমিনা আক্তার আমাদের উপকূলীয় এলাকার অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে যাতে তাঁকে ঝরে পড়তে না হয়, আমরা সেটাই আশা করি। তাঁর মতো মেধাবীর মূল্যায়ন করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এ দেশে মেধাবীর জন্ম হবে না। সবাইকে এ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন এলাকাবাসী।
মোহাম্মদ আলী কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজমির হোসেন বলেন, তাহমিনা আক্তার শুধু আমাদের কলেজ নয়, পুরো এলাকার গর্ব। সে প্রমাণ করেছে কোচিং আর টাকা থাকলেই মেধার বিকাশ হবে এমনটি নয়। সে শুধু মেধাবীই নয়, অত্যন্ত বিনয়ী ও পরিশ্রমী একজন শিক্ষার্থী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। তাঁকে সহযোগিতা করা এলাকাবাসী, সমাজ ও বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব।