বাকৃবির গবেষণা

গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি দেশে টেকসই দুগ্ধ উৎপাদনের প্রধান বাঁধা

বাকৃবির গবেষণা
বাকৃবির গবেষণা   © সংগৃহীত

বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২২ উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন) এর পক্ষ হতে গত এক বছরের বাংলাদেশের টেকসই দুগ্ধ উৎপাদনের পরিবর্তনসমূহের ফলাফল প্রকাশ করেছে। একইসাথে উক্ত পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক সমূহ ও বাংলাদেশে টেকসই দুগ্ধ উৎপাদনে করণীয় নিয়েও বিস্তারিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয় গো-খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি এবং আমদানি নির্ভরতা টেকসই দুগ্ধ উৎপাদনের বড় বাঁধা। আইডিআরএন এর নেটওয়ার্ক কো-অর্ডিনেটর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু পুষ্টি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহি উদ্দিন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আইডিআরএন এর গবেষণায় দেখা যায়, গত এক বছরে বাংলাদেশে দুধের দাম বেড়েছে গড়ে ১১.৬ শতাংশ। বাংলাদেশে যেখানে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে শতকরা ৫৪ শতাংশ, সেখানে বিশ্বের বাজারে দাম বেড়েছে ২০.৬ শতাংশ। গত এক বছরে বাংলাদেশে বিশ্ব বাজারের তুলনায় ৩০.৯ শতাংশ গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। যেখানে খামারী পর্যায়ে দুধের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ (৪৯.৬ টাকা কেজি হতে ৫৯.২৮ টাকা কেজি) কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে তা বেড়েছে ২২ শতাংশ (৫৩ টাকা কেজি হতে ৬৪.৫৪ টাকা কেজি)।

আইডিআরএন এর গবেষণায় আরও বলা হয়, গো-খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির ফলেই ভোক্তা পর্যায়ে দুধের মূল্য বৃদ্ধ পেয়েছে। গো-খাদ্য হিসাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত খাদ্য উপাদান হলো গমের ভুষি। গমের ভুষির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত খাদ্য উপাদান হলো ভুট্টা, সরিষার খৈল, ধানের কুড়া এবং সয়াবিন মিল। আর এসব খাদ্যের উপাদান বেশীর ভাগই আসে আমদানি করার মাধ্যমে।

বিশ্বের যেসব দেশ হতে এই সব খাদ্য উপাদান আমদানি করা হয়, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে ও সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে অতিরিক্ত শুকনা মৌসুম হওয়ায় গো-খাদ্যে উপাদানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেই মাত্রা আরও বেড়ে যায়। গত এক বছরে ভুট্টার দাম শতকরা ৯০ শতাংশ বেড়েছে। গমের ভুষি ৬২.৯ শতাংশ, সরিষার খৈল ৩৫.৩ শতাংশ, ধানের কুড়া ৩০.৩ শতাংশ, সয়াবিন মিল ৬৪.৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণেই দুগ্ধ খামারীদের লাভের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এই অবস্থায় গো-খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে দুগ্ধ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। তাই এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য কিছু পরামর্শও দেন আইডিআরয়ের গবেষকরা। তারা বলেন, খামারীদের অতি উচ্চ মূল্যের গমের ভুষি ও অন্যান্য দামী উপাদান এর বিকল্প হিসেবে হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন সস্তা উপাদান আদর্শ খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে ব্যাবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে গমের ভুষির পরিবর্তে কচি নেপিয়ারের ও ভুট্টার ঘাস  ও সাথে লিগুমিনাস খাবার দিতে পারলে বর্তমান সমস্যা বহুমাত্রায় কমানো সম্ভব।

তাছাড়াও সাধারণ খড় ব্যাবহারের পরিবর্তে ইউরিয়া যুক্ত খড় ও বেইল খড় ব্যাবহার করা যেতে পারে। গো-খাদ্য উপাদানের বাজার ব্যবস্থাপনা, সরবরাহ পদ্ধতি ও এর সাথে জড়িত সকল স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় করে ভাল মানের উদ্যোক্তা তৈরি করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলেও পরামর্শ দেন গবেষকেরা।

ড. মোহাম্মদ মহি উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূবাঞ্চলের ২৩টি জেলায় ইউএসএআইডি কর্তৃক ‘ফিড দ্যা ফিউচার’ শীর্ষক লাইভস্টক ও নিউট্রিশন কার্যক্রম চলছে। ইউএসএআইডিয়ের সঙ্গে আইডিআরএন এর গবেষণার ফলাফল ব্যাবহারের মাধ্যমে খাদ্য সমস্যার একটি যুগোপযোগী ও ফলপ্রসূ সমাধানের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

এছাড়াও, খামারীদের সহযোগিতায় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন সময় গৃহীত পদক্ষেপকে আরও বেগবান করে এবং বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে গো-খাদ্যের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে খামারী পর্যায়ে দুগ্ধ উৎপাদন খরচ কমানোর মাধ্যমে দুগ্ধ খামারীরা লাভবান হতে পারবে।


সর্বশেষ সংবাদ