বিশ্ববিদ্যালয়ের হলটিতে বাইরে থেকে খাবার আনা, রান্না করে বাইরে নেয়া নিষেধ

সিকৃবির সুহাসিনী দাস হল

নির্দেশনা ও সুহাসিনী দাস হল
নির্দেশনা ও সুহাসিনী দাস হল  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্রীদের সুহাসিনী দাস হলে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। নোটিশটিতে হলের পাঁচটি নির্দেশনার মধ্যে শেষটিতে বলা হয়েছে, হল থেকে রান্না করা খাবার বাইরে পাঠানো এবং বাইরে থেকে পার্সেল করে দুপুর ও রাতের খাবার হলে আনা যাবে না।

এমন নির্দেশনা জারির পর থেকে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, ফেসবুকে নোটিশটি শেয়ার করে অনেকে সমালোচনা করছেন। 

জানা গেছে,  হলটির আসন সংখ্যা ৩০০। এর মধ্যে ২৫৯ জন ছাত্রী হলে থাকেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি হলের প্রভোস্ট ড. সাঈদা সুলতানা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।

নোটিশে নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আবাসিক ছাত্রী ছাড়া কোনো বহিরাগত ছাত্রীকে হলে থাকতে দেওয়া যাবে না। যেসব ছাত্রী বহিরাগত বা অন্য হলের ছাত্রীদের প্রশ্রয় দিয়ে হলে রাখবে, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হলে বৈদ্যুতিক সামগ্রী হিটার, রাইস কুকারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবে না। সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রান্না করে হল থেকে কোনো খাবার বাইরে পাঠানো এবং বাইরে থেকে পার্সেলে করে দুপুরের ও রাতের খাবার হলে আনা যাবে না।

জানতে চাইলে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই হলের প্রভোস্ট ড. সাঈদা সুলতানা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নোটিশের নির্দেশনাগুলো (প্রথম ৪টি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে ও মেয়ে সব হলের জন্য দেয়া হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া এসব নির্দেশনা হলের নীতিমালায়ও রয়েছে।

শেষের নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেয়েরা হল থেকে রান্না করে বাইরে বাক্স করে খাবার নিয়ে যায়। হয়ত তারা বন্ধুদের জন্য নিয়ে যায়, সেটাকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। কেননা হলের রুমে রান্নাবান্না করলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সেটি বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হলে তো ডাইনিং চালু আছে, তারপর আলাদা করে রান্নার চুলাও রয়েছে।

“আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাইরে থেকে খাবার আনা। মাঝেমধ্যে হলের বাইরে থেকে খাবার আনা যায়। তবে পার্মানেন্টলি দুপুর ও রাতে এরকম করলে তো হলের ডাইনিং চালানো কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া খাবারের বাক্সগুলো হলের এখানে-সেখান পড়ে থাকে, এতে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এতে তাদেরও কষ্ট হয়। তাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এটাকে ম্যানেজ করা গেলে ডাইনিংটাও ইম্প্রুভ করা যাবে, বর্ডার বেশি হলে। আর হলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও খেয়াল রাখা যাবে।” 

এমন নির্দেশনার সমালোচনা সম্পর্কে ড. সাঈদা সুলতানা বলেন, ওরা যেভাবে প্রচার করছে আসলে সেটা উদ্দেশ্যমূলক ছিল না। হামিদা আক্তার নামে প্রথম যে মেয়েটা এটা ফেসবুকে দিয়েছে সে হলের কোনো ছাত্রী না। হয়ত ফলস আইডি থেকে এটা দিয়েছে।

“৫ নম্বর নির্দেশনাটি অন্যান্য হলে আছে হয়ত মৌখিকভাবে নির্দেশনা রয়েছে। এটা এমন না যে, নির্দেশনাটি পালন না করলে হল থেকে মেয়েদের সিট ক্যান্সেল করা হবে। এটার দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাতে ছাত্রীরা বিষয়গুলো অনুসরণ করে।”

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফেসবুকে হামিদা আক্তার নামের একটি আইডি থেকে এসব অভিযোগের কথা লিখে পোস্ট করা হয়। যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিভিন্ন গ্রুপে নোটিশটি ছড়িয়ে পড়ে।

ওই হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকে নানা সময় হল প্রভোস্টের বাজে ব্যবহারের শিকার হয়েছেন ছাত্রীরা। পাশাপাশি হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরীও তাদের সাথে নানা সময় খারাপ ব্যবহার করেন বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিনিয়তই সুহাসিনী দাস হলের মেয়েরা ব্যক্তিগত জীবনে কি করবে তার কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে হল প্রভোস্টের নিকট। যা একদমই দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য একটি ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নিয়ম দেয়া অর্থহীন। বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে খাবার আনার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হল কর্তৃপক্ষ। আমরা এই ভিত্তিহীন নিয়মের শেষ দেখতে চাই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের মেয়েদের ছাদে যাওয়া নিয়ে মাথাব্যথা থাকতে পারে তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে বুঝতেই পারতাম না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাইরের খাবার আনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কেননা রাত ১১টার দিকে বাইরের একজন ডেলিভারিম্যান মেয়েদের হলের সামনে এসে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করতে পারে। যা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা যদি বাইরের খাবার খেতে চায় তাহলে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই খাবার নিয়ে আসুক। 

“আর প্রভোস্টের বিরূদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা হাতে গোনা মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থীর কাজ। তবে প্রভোস্ট অবশ্যই অল্প কিছু শিক্ষার্থীর মর্জি মোতাবেক চলবে না। উনার সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও জীবনমান নিয়ে চিন্তা করতে হয়।”


সর্বশেষ সংবাদ