পরীক্ষার হলে করণীয়সহ ভর্তিচ্ছুদের যেসব পরামর্শ দিলেন ঢাবি ছাত্রী

প্রিয়ন্তী মন্ডল
প্রিয়ন্তী মন্ডল  © টিডিসি ফটো

দরজায় কড়া নাড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা। ইতিমধ্যে ভর্তিচ্ছুদের সকল প্রস্তুতি সমাপ্তির পথে। শেষ সময়ে সবকিছু গুছিয়ে কীভাবে পরীক্ষা শেষ করা যেতে পারে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাবির ২৩-২৪ সেশনে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করা প্রিয়ন্তী মন্ডল। 

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণকালে শিক্ষার্থীদের করা ভুলগুলো নিয়ে তিনি বলেন, ‘এসময় শিক্ষার্থীরা যে ভুলগুলো করে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো অত্যাধিক বই পড়া। এমন অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে কোনো একটি বই ঠিকমতো না পড়ে অনেকগুলো বইয়ের দিকে ধাবিত হয় ফলে সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে পারে না। আমি বলবো যে কোনো একটি বইকে মেইন বই হিসেবে রেখে তার সাথে কিছু তথ্য জানার জন্য অন্য বই বা উৎসের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া যে কোনো একটি বইকেই মূল বই হিসেবে পড়া উচিত।’ 

শেষ সময়ে করণীয় সম্পর্কে তিনি জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষা যেহেতু সামনে চলে আসছে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীরই উচিত এই সময়ে আর নতুন কোনো টপিক না পড়া। প্রস্তুতির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যা যা পড়া হয়েছে সেগুলোই বার বার রিভিশন দেওয়া কারণ পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রধান যে সমস্যা হয় তা হলো প্রশ্ন দেখার পর সবাই কনফিউশনে পরে যায়। দেখা যায় প্রশ্ন তার কমন পরেছে কিন্তু উত্তর মনে করতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো বার বার রিভিশন দেওয়া। রিভিশন ছাড়া একটি ভালো প্রস্তুতি নেওয়া কখনোই সম্ভব না। আমি নিজেও এই পদ্ধতিতে পড়েছিলাম যা আমাকে পরবর্তী সকল পরীক্ষায় ভালো করতে সাহায্য করে।’

পরীক্ষার হলে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়ন্তী বলেন, ‘দেড় ঘন্টা সময়টা যে সবার জন্য ভালো হবে বা পরিক্ষার হলে ভালো পরিবেশ পাওয়া যাবে এমন আশা রাখা বোকামি। বাস্তবতা হলো বেশিরভাগ হলের পরিবেশই শিক্ষার্থীবান্ধব হয় না। অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতেই থাকেন ফলে মাঝেমধ্যে শিক্ষকও বিরক্ত হয়ে পরেন। এসময় নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমি পরীক্ষার হলে শুরুতে অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ঘাবড়ে গিয়ে একটি জানা প্রশ্নের উত্তর ভুল করি। পরবর্তীতে নিজেকে শান্ত করে ধীরে ধীরে পরীক্ষা দিয়ে শেষ করি। তাই একটা কথাই বলবো যে এসময় নিজের ও সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।’ 

বহুনির্বাচনী প্রশ্নের নেগেটিভ মার্কস নিয়ে আইন বিভাগের এই ছাত্রী বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার কোনো প্রশ্নই কারও শতভাগ কমন পড়ে না। এমন অনেক প্রশ্ন থাকে যা আমরা কখনও শুনি নি বা পড়ি নি। এধরণের প্রশ্নগুলো একেবারে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কখনও এমন প্রশ্ন আসে যা সম্পর্কে আমাদের পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ধারণা রয়েছে; সেসব উত্তর করার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। যেগুলো সম্পর্কে একেবারেই ধারণা নেই তা উত্তর করার দরকার নেই।’ 

লিখিত অংশ কীভাবে সময়ের মধ্যে লিখে শেষ করা যায় এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার লিখিত অংশ আর বোর্ড পরীক্ষা কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। বোর্ড পরীক্ষায় আমাদের অনেক কিছু লিখতে হয় এখানে কিন্তু এ বিষয়টি নেই। ভর্তি পরীক্ষায় নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রধান অংশগুলোই লিখতে হয়। বাড়িয়ে লেখার কোনো সুযোগ নেই। তাই পরীক্ষার্থীদের উচিত আগে উত্তরটা ভালোভাবে চিন্তা করা। যেহেতু এ অংশে উত্তর করার জায়গা সীমিত থাকে তাই একটু ভেবে লেখা শুরু করা উচিত।’

সবশেষ ভর্তিচ্ছুদের মানসিক চাপ সামলানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায় ফ্রেন্ডরা আমার চাইতে ভালো করছে এমন ঘটনা বহুবার হয়েছে। তবে এসব নিয়ে আমি অতটা চিন্তিত ছিলাম না বরং আমার পড়া ঠিকঠাক হচ্ছে কি না সেদিকেই নজর দিতাম। নিজের কাছে নিজের পড়াগুলো শেষ হচ্ছে কিনা সেটাই দেখতাম। এমন অনেক দেখা গেছে যে কোচিংয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো করে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় গিয়ে আর পারে না। তাই বলবো কোচিংয়ের পরীক্ষায় কে কী করলো সেটা চিন্তার বিষয় নয় দিনশেষে ভর্তি পরীক্ষায় কী করলাম সেটাই মূল বিষয়।’ 


সর্বশেষ সংবাদ