১৫ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে এসেও যবিপ্রবিতে ভর্তি হতে পারলো না নিপুন

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিপুন বিশ্বাস
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিপুন বিশ্বাস  © সংগৃহীত

যথাসময়ে উপস্থিত হতে না পারায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তি হতে পারলেন না নিপুন বিশ্বাস নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল তার।

এর আগে রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকাল ৫টায় যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শরীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ২০২০-২১ সেশনে তৃতীয়বারের মতো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিপুন বিশ্বাসের বাড়ি নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নে। তার পিতা প্রেমানন্দ বিশ্বাস, পেশায় একজন নাপিত।

তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি বিকালে ওয়েবসাইটে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আমার কোনো স্মার্টফোন নেই, ফলে আমি ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পারিনি। কিন্তু আমার মোবাইল নম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোনো কল বা মেসেজ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দেওয়া হয়নি। মাঝ রাতে আমার একজন বড়ভাই আমাকে ফোন করে ভর্তির বিষয় জানালে আমি তৎক্ষণাৎ আশেপাশের লোকজন ও নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করে ২৩ হাজার টাকা জোগাড় করি।

তিনি আরও বলেন, ‌‌নির্দিষ্ট সময়ে আসার জন্য মাইক্রোবাস ঠিক করি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে। কিন্তু যশোর থেকে নীলফামারীর দূরত্ব অনেক এবং রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে আজ দুপুর ১২টা ৮ মিনিট বেজে যায়। এরমধ্যে ১০ টার দিকে আমার বিষয়ে একজন বড়ভাই ডিন স্যারের সাথে এই সমস্যার বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু আমি আসার পরে জানতে পারি মেরিট লিস্টে আমি প্রথমে থাকার পরেও তৃতীয় সিরিয়ালে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এরপর আমি অনেক অনুরোধ করলেও তারা আমাকে ভর্তি নেয়নি।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, আমি কাজ করে হলেও এই টাকা জোগাড় করতে পারবো, কিন্তু আমার বাবা মাকে কী জবাব দেবো? আমার বাসা দূরে হওয়ার জন্য আজ আমি সময়মতো আসতে পারি নাই। যদি সময়সীমা বাড়ানো হতো, তাহলে সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারতাম। তাছাড়াও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মেসেজও দেওয়া হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েটিং লিস্টে থাকায় আমি মেসেজ পেয়েছি। এতে আমার দোষ বা ভুল নেই।

এই বিষয়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. তানভীর ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করায় আমরা তৃতীয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করি। আমাদের মাননীয় উপাচার্য স্যারের নির্দেশনা ছিল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আজকে আমাদেরে তিনটি বিভাগসহ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির কাজ ছিল। আমরা সময় বাড়িয়ে বেলা ১২টায় শরীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে আসা একজন শিক্ষার্থী থাকায় তাকেই ভর্তি করি।

তিনি আরও বলেন, ছেলেটির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই। নিয়মের মধ্যে থেকেই আমাদের অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে হয়। তাকে আমরা প্যানেল ভুক্ত করে রাখতে পারি। পরবর্তীতে যদি কোনো সিট ফাঁকা হয়, সেক্ষেত্রে আমি উপাচার্য মহোদয়ের কাছে অনুরোধ করবো তাকে ভর্তি নেওয়ার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মেসেজ বা কল না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি টেকনিক্যাল কমিটির দায়িত্ব।

এ বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ গালিবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কথা বলতে রাজি হননি।


সর্বশেষ সংবাদ