মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ১৭ হলে, ঝুঁকির শঙ্কা নিয়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর বসবাস
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৭টি আবাসিক হলে স্থাপিত সব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। অগ্নিকাণ্ডের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে যন্ত্রগুলো অকার্যকর হয়ে পড়লেও এখনো রিফিল বা পরিবর্তনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে প্রতিটি আবাসিক হলে একাধিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে যন্ত্রগুলোর মেয়াদ গত ২ অক্টোবরে শেষ হলেও সেগুলো রিফিল করার জন্য এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের এমন উদাসীনতায় যেকোনো অগ্নিদুর্ঘটনায় ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে প্রশাসন ভবনে লাগানো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলছেন—আবাসিক হলের হাজারো শিক্ষার্থীর জীবনের মূল্য কি নেই?
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ১৭টি হলে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী এসব হল ভবনে বসবাস করেন। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার এমন অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন ভবনকে সুরক্ষার আওতায় রাখলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে যেন কোনো ভাবনাই নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিবর্তন করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান জানান, হলে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো তুলনামূলক পুরাতন এবং এগুলোর গায়ে কোনো মেয়াদ বা উৎপাদনের তারিখ নেই। ফলে জরুরি সময়ে এগুলো কার্যকর হবে কিনা—এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর সন্দেহ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসনে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা সাজিদুল ৪৫ তমে কাস্টমসে ৪র্থ
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হলে অনেক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি ভূমিকম্পের ঘটনাতেও শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।’
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী মাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত মাসেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যদি কখনো আগুন লাগে, এগুলো দিয়ে কাজ হবে না—এটা ভেবে ভয় লাগে। আমরা কি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলগুলোতে থাকব? হলগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। তাই দ্রুত রিফিল করা উচিত।’
এই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড ভয়ংকর এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে এখনও ক্যাম্পাসে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। অ্যাকাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো প্রয়োজন পড়েনি, তবে অনেক যন্ত্রের মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ।’
তিনি আরও জানান, অগ্নিনিরাপত্তা নিয়মিত মনিটরিং করা জরুরি এবং কমিটি থাকলে কার্যক্রম চালানো, না থাকলে নতুন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নজরদারি অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের সব ফি মওকুফ করল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, এ তথ্য আমার জানা নেই। তবে যদি যন্ত্রগুলোর সত্যিই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে খুব দ্রুতই সেগুলো পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে—এ তথ্য আমার জানা নেই। এ বিষয়ে হল প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’