০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০৭

স্থগিতাদেশ তুলে পুনর্গঠন— কেমন হবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চিত্র?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন  © লোগো

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নানা অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েন অনেকে। যার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে কেন্দ্র ছাড়া সারা দেশে প্লাটফর্মটির সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু স্থগিতের তিন মাস না যেতেই ফের সেসব কমিটি সচল বা পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পুনর্গঠিতব্য এ কমিটিগুলো কীভাবে সচল হবে, কাঠামো কেমন হবে এবং নেতৃত্বে কারা আসবেন এসব বিষয়ে নতুন করে আগ্রহের জায়গা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি যে লক্ষ্যে দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি সচল হতে যাচ্ছে— সেই লক্ষ্য আদৌ পূরণ হবে কিনা সেটা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। 

চব্বিশের জুলােই আন্দোলনে মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ 

এ বিষয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের কথা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। তা ছাড়া, এসব কমিটিতে কোনোরকম বিতর্কিত ও অভিযুক্তদেরকে স্থান দেওয়া হবে না। সারাদেশের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা, মহানগর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায়ই এ কমিটি পুনর্গঠিত হবে। 

“আমরা যে উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছি, সে লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আর এজন্য আমাদের যে কাজ করা প্রয়োজন সেটাই করব” - রিফাত রশিদ, সভাপতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এর আগে, গতকাল রবিবার (২ নভেম্বর) সভাপতি রিফাত রশিদ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্লাটফর্মটির সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে কার্যক্রম পুনরায় সচলের ঘোষণা দেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের বৈপ্লবিক রূপান্তর নিশ্চিতে এবং ঐতিহাসিক এক দফা, অর্থাৎ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের নিমিত্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সব ইউনিট কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।’

‘একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় সচল করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও জেলা ইউনিটকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-দপ্তর সম্পাদকের পদত্যাগ

এরও আগে, চলতি বছরের গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। সেসময় বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে নামে–বেনামে অনেক ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক শেল্টারে বা তারা বিপথগামী হয়ে চাঁদাবাজি, দুর্নীতিতে জড়িয়েছে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি বাদে সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করছি।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা যে উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছি, সে লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আর এজন্য আমাদের যে কাজ করা প্রয়োজন সেটাই করব। 

আরও পড়ুন: এনসিপির দপ্তর সেল থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন সিফাত

তিনি বলেন, আমাদের ঘোষণার পর সারাদেশ থেকেই কমিটি ঘোষণার ব্যাপারে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে আমরা যাচাই-বাছাই করে কমিটি পুনর্গঠন করব। এক্ষেত্রে কাউকে ছাঁটাই করতে হলে করা হবে, আবার কাউকে যুক্ত করতে সময় ক্লিন ইমেজধারীকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিশেষ করে, ফৌজদারি অপরাধে জড়িত কেউ কমিটিতে স্থান পাবে না। 

রিফাত রশিদ আরও বলেন, সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সব ইউনিট কমিটিরই পুনর্গঠন আমরা করব। সারা দেশে আমাদের একসময় প্রায় ১৮ হাজারের মতো লোক ছিল যারা কমিটিতে ছিলেন, আর কর্মী ছিলেন ১ লাখের মতো। কিন্তু এবার এ সংখ্যাটি কত হবে এবং মোট কতটি কমিটি আছে বা হবে, সেটার তথ্যও আপাতত বলা যাচ্ছে না।