মাসুরার বাবা রজব আলীর বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামে। রজব আলী অল্প বয়সে সাতক্ষীরায় এসে আর ফিরে যাননি। শহরের বিভিন্ন এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। শহরের নানা জায়গায় চায়ের দোকান চালান। ভ্যানে করে ফল-সবজি বিক্রি করেছেন। শ্বাসকষ্ট ও হৃদ্রোগের সমস্যায় এখন সেভাবে কাজ করতে পারেন না তিনি। মাসুরারা তিন বোন। সবার বড় মাসুরা। মেজ মেয়ে সুরাইয়াকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
জাতীয় দলের ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের ফুটবলে আসা নিয়ে রজব আলী বলেন, ‘ও যখন ক্লাস থ্রিতে তখন থেকেই ফুটবল ধরে। পিটিআই স্কুলের মাঠে মেয়েদের খেলার অনুশীলন করাতেন আকবর ভাই। সাবিনারা তখন ওখানে অনুশীলন করত। ক্লাস শেষ হওয়ার পর মাসুরা মাঠেই থাকত। মেয়েদের বল কুড়াতো। এসব করতে করতে ওদের সঙ্গে একটা ভালো জানাশোনা তৈরি হয়। খেলতেও শুরু করে। আমি তখন খুব অসুস্থ। কাজ করতে পারি না। সংসার চালানো ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। আবার মেয়ে যে মাঠে খেলে আমি কিছুই জানতাম না।’
রজব আলী বলেন, ‘এক দিন আকবর ভাই আমার বাসায় আসেন। মেয়েকে তার একাডেমিতে চান। আমি কোনোভাবেই রাজি ছিলাম না। মেয়ে বলে রাজি হতে চাইনি। আকবর ভাই আমাকে বোঝালেন, মেয়েকে দিয়ে দেখেন, ছোট থাকতে থাকতে কী হয়। বড় হলে না হয় আর খেলাবেন না। আমি তখনো রাজি হয়নি। পরে আবার আকবর ভাই এক দিন এসে বলেন, এমন একটা দিন আসবে, মেয়ে আর আপনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আর আপনি তো অসুস্থ, মেয়ের দায়িত্ব না হয় আমাকে দিলেন। আমি তবুও রাজি হইনি।’
আরও পড়ুন: ইতিহাস গড়ে সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলার বাঘিনীরা
মেয়ের জেদের কারণে এক সময় রাজি হতে বাধ্য হন রজব আলী। তিনি বলেন, ‘মেয়ের খেলার প্রতি ঝোঁক দেখে ওকে খেলতে না দেওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মাসুরা জিদ ধরে খেলতে না দিলে স্যারের বাড়ি চলে যাবে। ওর মা বলল, ছোট তো খেলুক বড় হয়ে বাদ দিয়ে দেবে। আজ আকবর ভাইয়ের কথা ঠিক ফলেছে। মেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কয়েকবার সংবর্ধনা পেয়েছে।’
মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমাদের খুব অভাব ছিল। মাঝে মধ্যে ঘরে খাবারও থাকত না। টাকার জন্য ওর বাবার চিকিৎসা করাতে পারিনি। মেয়ে ছিল খেলাপাগল। খেলা ছাড়া কিছুই বোঝে না। এখনো খেলার প্রতি সেই আগ্রহ। বিয়ের কথা বললে বকা দেয়। ওর ছোটবেলায় আমিও চাইতাম, মেয়ে খেলার মধ্যে থাকুক। বৃষ্টির দিনও সে প্র্যাকটিসে যেত। ওর বাবার সঙ্গে খেলা নিয়ে যে কতবার ঝগড়া হয়েছে, তার ঠিক নেই। অনেক দিন রান্না হতো না। ও না খেয়ে চলে যেত।’
এক সময় মেয়েকে খেলতে দিতে না চাওয়া রজব আলী এখন মেয়ের জন্য গর্ব করেন। রজব আলী বলেন, মেয়ের জন্য এখন অনেক গর্ব হয়। মানুষ যখন বলে মাসুরার বাবা তখন অনেক ভালো লাগে। ওর বদৌলতে ডিসি-এসপির সঙ্গেও কথা হয়। মেয়ে সংসারের সব কাজে যে পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়, তা বলে বোঝানো যাবে না।