গোপনে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, জানেন না অভিভাবকরা

কিশোরপুর উচ্চ বিদ্যালয়
কিশোরপুর উচ্চ বিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

রাজশাহীর বাঘায় কিশোরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার (২২ জুন) অবৈধভাবে গঠিত ম্যানেজিং কমিটি বৈধতাকরনের লক্ষ্যে একটি অভিভাবক সমাবেশ ডাকা হয় । কিন্তু উক্ত অভিভাবক সমাবেশে ৮০ ভাগ অভিভাবক অনুপস্থিত ছিলেন। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠনের দাবিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৫ জুন (২০২১) কিশোরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ৬ মাসের জন্য অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাডহক কমিটি থাকাকালিন নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠনের কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক সু কৌশলে গোপনে প্রচার প্রচারনা ছাড়াই মাহাবুল ইসলাম নান্টুকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করেন।

এমনকি, গঠিত কমিটি সম্পর্কেও এর আগে কাউকে জানানো হয়নি। এছাড়া নির্বাচনের জন্য কোন তফসীল ঘোষনা করা হয়নি। কিংবা তফসিল ঘোষনা করা হলেও তা গোপন রাখা হয়েছিলো। বিদ্যালয়ের শতকরা ৮০ ভাগ অভিভাবক সদস্য কমিটি গঠনের বিষয়টি জানেননা। শুধু তাই নয়, কমিটিতে যাদের অভিভাবক সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই মাদককারবারিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অ্যাডহক কমিটির সভাপতিকেও জানানো হয়নি। প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোপনে অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি নিয়ে সুখবর নেই

বুধবার সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক অভিভাবক সদস্যদের নিয়ে মিটিং করছেন। সেখানে দেখা যায়, ১৮/২০ জন মহিলা ও ৬/৭ জন পুরুষ অভিভাবক সদস্য উপস্থিত রয়েছেন। বিদ্যালয়ে মোট অভিভাবক সদস্য ৩০০ থেকে ৩৫০জন। এত অল্প সংখ্যক অভিভাবক সদস্য নিয়ে মিটিং করার বিষয়ে জানতে চাইলে নব গঠিত কমিটির সভাপতি মাহাবুল ইসলাম নান্টু বলেন, কেন উপস্থিত হয়নি এটা আমার জানা নেই। আপনি কিভাবে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এমন প্রশ্নে আমাদের সময়কে তিনি বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসে ডেকে নিয়ে আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। পরে আমি ও প্রধান শিক্ষক মিলে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মনেনিত করেছি। কোন নির্বাচন হয়নি।

এ সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপস্থিত ক্ষুব্ধ অভিভাবক সদস্য রাইহান সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন ও মাহাবুল ইসলাম নান্টুর বাড়ি একই গ্রামে । প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির ছায়া সঙ্গী হিসেবে কাজ করার জন্য প্রধান শিক্ষক নান্টুকে সভাপতি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। একটি মানুষ যদি নিজেই অপরাধ ও দুর্নীতিমুক্ত না হন তাহলে বিদ্যালয়কে কিভাবে দুর্নীতিমুক্ত করবেন।

প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের হঠকারি ও দুরীভসন্ধিমুলক কর্মকান্ডের জন্য আমরা এলাকাবাসি চরম হতাশাগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ। এই বিদ্যালয়ের উন্নতি কল্পে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করতে খুব শিঘ্রই তফশিল ঘোষনা করে এলাকাবাসিকে একটি স্বচ্ছ কমিটি উপহার দেবার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

এ সময় তারা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের এই রকম অনিয়ম ও অনাচাররের কারনে অধিকাংশ অভিভাবক নিরব প্রতিবাদ হিসেবে নিজেদের সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে এক সময়ে বিদ্যালয়টিতে শতশত শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও বর্তমানে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী সংকটের হুমকির সন্সুখিন হয়েছেন।

ওই বিদ্যালয়ের সর্বশেষ এডহক কমিটির সভাপতি মুকুল সরকার জানান, আমি এডহক কমিটির সভাপতি হলেও নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন। আপনি উনার থেকে বিস্তারিত জানুন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। সময় করে স্কুলে আসেন, সব তথ্য দেয়া হবে।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকারি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) শারমিন আখতার বলেন, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি ।


সর্বশেষ সংবাদ