ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দক্ষিণবঙ্গ শাটডাউনের হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের
- ববি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৬:৪০ PM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৩:০৮ PM

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৩ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে লাইব্রেরি ও টিএসসি রাস্তা ঘুরে একই স্থানে এসে তারা সমাবেশ করেন। মিছিল চলাকালে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন: “এক দুই তিন চার, ভিসি তুই গদি ছাড়”, “যে ভিসিরে পাই না, সে ভিসিরে চাই না”, “স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে”, “দফা এক দাবি এক, ভিসির পদত্যাগ” এবং “স্বৈরাচারের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।”
সমাবেশ শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, ছয় মাস পার হলেও পূর্বের ২২ দফা দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। বরং, প্রশাসন যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, গত জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মী শাহরিয়ার শানকে দরজা ভেঙে নিয়ে গেলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে ‘ফ্যাসিস্ট’ শিক্ষকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। তারা বলেন, “এই স্বৈরাচারী ভিসিকে অপসারণ না করা হলে শুধু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা দক্ষিণবঙ্গ শাটডাউন করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রেদোয়ান ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রিয় অভিভাবকের কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। নিজেকে শিক্ষার্থীবান্ধব দাবি করলেও, শিক্ষার্থীরাই যেন তার চোখের কাঁটা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে তিনি মামলা করেছেন। আমরা এখন তার পদত্যাগ চাই, স্বৈরাচারের হাত থেকে পরিত্রাণ চাই।”
পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা:
জিমি নামে এক শিক্ষার্থীর আবেদন উপেক্ষার দায় প্রশাসনকে স্বীকার করতে হবে এবং উপাচার্যকে সকল শিক্ষার্থীর সামনে ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে লিখিত অঙ্গীকার প্রকাশ করতে হবে; উপাচার্যের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ: কর্মদিবসে উপাচার্যের অফিসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, অনুপস্থিত থাকলে একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন; তিন কর্মদিবসের মধ্যে আবেদন গৃহীত বা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে এবং এই প্রক্রিয়ার জন্য একজন নির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে; নির্ধারিত সময় অন্তর ওয়েবসাইটে আর্থিক সহায়তা তহবিলের হিসাব প্রকাশ করতে হবে; শিক্ষার্থীরা যাতে উপাচার্যের সঙ্গে জরুরি বিষয়ে সহজে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরদিন (৪ মে) উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়েছে এবং সাত দিনের মধ্যে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নামে করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মহসিন উদ্দিনের বিষয়ে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে। ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হক জিমির মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়ে তিনি বলেন, তার আর্থিক সহায়তার আবেদন বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি, ‘ফ্যাসিস্ট’ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।